ক্ষতি জেনেও লাভের আশায় তামাক চাষে ঝুঁকছেন কৃষক

ফাইল ছবি
লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫ | ০০:৪৪
নাটোরের লালপুরের চংধুপাইল ইউনিয়নের পুকুন্দা মাঠের কৃষক আবুল মাজন আলী আখ, ধান ও গমের চাষ করতেন। ফসল বিক্রির নিশ্চয়তা ও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় লাগাতার লোকসান গুনতে হয়েছে তাঁকে। তাই সমকালীন ফসল ছেড়ে গত বছর ৩০ বিঘা জমিতে তামাক আবাদ করেন। লাভ হওয়ায় আবাদি জমির পরিমাণ বাড়িয়েছেন।
আবুল মাজন আলী বলেন, তামাক চাষে কোম্পানি থেকে বীজ, সার ও ঋণ দেয়। বাড়ি থেকেই উচ্চ মূল্যে বিক্রি হয়ে যায়। তাই স্বাস্থ্যঝুঁকি জেনেও এ ফসল আবাদ করছেন।
আবুল মাজনসহ স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, সমকালীন ফসল আবাদে কোনো সমস্যা হলে কৃষি অফিসের মাঠ কর্মকর্তাদের পাওয়া যায় না। অন্যদিকে উৎপাদনের আগেই তামাক কোম্পানি দর নির্ধারণ, বিক্রির নিশ্চয়তা, চাষের জন্য সুদমুক্ত ঋণ, প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন ও পরামর্শ দিয়ে থাকে। এ কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি জেনেও তারা তামাক চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। কৃষি অফিস বলছে, তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করতে মাঠপর্যায়ে কাজ হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আড়বাব ইউনিয়নের পকুন্দা, আব্দুলপুর, দুয়ারিয়া, এবি, দুড়দুরিয়া, কদিমচিলান এলাকায় বেশি তামাকের চাষ হয়েছে। তামাক ক্ষেতের পাশেই লোকালয় ও কৃষকের বাড়িতে তৈরি করা হচ্ছে তামাক পোড়ানোর চুল্লি।
তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে তৃণমূল পর্যায়ে কার্যকর ভূমিকা না থাকায় প্রতিনিয়ত তামাকের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর উপজেলায় ৪৫ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছিল। এ বছর ৫৯ হেক্টরে আবাদ হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে তামাকের চাষ বেড়েছে ১৪ হেক্টরে। আবাদ করা জমির পরিমাণ আরও বেশি বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা।
চংধুপাইল ইউনিয়নের পুকুন্দা মাঠের কৃষক নাসির উদ্দিন ১০ বিঘা জমিতে তামাকের চাষ করেছেন। এসব জমিতে আখ চাষ হতো। নাসির উদ্দিনের ভাষ্য, আখ বিক্রি ও দামের নিশ্চয়তা থাকে না। আখ কেটে অন্য ফসলও চাষ করা যায় না। তাই তামাক চাষ করেছেন। তিনি বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে তামাক চাষে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। বিক্রি হয় ১ লাখ ২০ হাজার টাকায়।
কৃষক কুদ্দুস আলী ১০ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেছেন। প্রতি বিঘায় খরচ হয় ৫০ হাজার টাকা। বিক্রি করেছেন ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। উৎপাদিত ফসল ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি মাঠ থেকেই কিনে নিয়ে যায়। সার, বীজ ও তামাক পোড়ানোর ঘর তৈরির জন্যও ঋণ সহায়তা দেয়। এ কারণে কৃষকরা তামাক আবাদে ঝুঁকেছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার হোড় বলেন, তামাক কোম্পানি কৃষকদের অগ্রিম টাকা ও উৎপাদিত তামাক বিক্রির নিশ্চয়তা দেওয়ায় ক্ষতিকর এ ফসলের আবাদ দিন দিন বাড়ছে। তামাক চাষ বন্ধে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে সভা-সমাবেশ করা হচ্ছে। তার পরও অনেক কৃষক লাভের আশায় তামাক চাষ করেছেন।
- বিষয় :
- তামাক