ঢাকা মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

টিন-কাঠের নান্দনিক নিকেতন

টিন-কাঠের নান্দনিক  নিকেতন

টিন ও কাঠের তৈরি মুন্সীগঞ্জের একটি নান্দনিক ঘর সমকাল

কাজী সাব্বির আহমেদ দীপু, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ | ২২:০৬

মুন্সীগঞ্জে টিন ও কাঠ দিয়ে তৈরি হচ্ছে নান্দনিক নকশার ঘর। এমন বাহারি ঘর ও কটেজের দৃশ্য ইউটিউব ও ফেসবুক লাইভের বদৌলেত সারাদেশ ছড়িয়ে পড়েছে। যা দেখে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ আসছেন ঘর কিনতে।
প্রায় ৫০ বছর ধরে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং, টঙ্গিবাড়ী, সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠেছে ঘর তৈরির কারখানা। এসব স্থানে আগে থেকেই টিন ও কাঠ দিয়ে তৈরি করে রাখা হয় ঘর। ঘরগুলো সাধারণত এক থেকে তিন তলা পর্যন্ত হয়। এসব ঘরের পাশাপাশি এখন নির্মাণ করা হচ্ছে কটেজ জাতীয় ঘর। এসব ঘরকে ভিন্নমাত্রা দিয়েছে টালি টিন। বিশেষ ধরনের রঙিন টিনের কারণে ঘরের সৌন্দর্য আরও বেড়েছে। 
জানা গেছে, কটেজগুলোতে এসি বসিয়ে পাকা ভবনের মতোই ঠান্ডা করা যাচ্ছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত আলো-বাতাস অনায়াসে প্রবেশ করারও ব্যবস্থা রয়েছে। একটি পুরো ঘর অনায়াসে ভেঙে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেওয়া যায়। ফলে এসব ঘরের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। দেশের  প্রায় সব স্থান থেকে ক্রেতারা এ ঘর কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
ঘর নির্মাতারা জানান, নাইজেরিয়ান লোহাকাঠ, সেগুন কাঠ ও টিন দিয়ে অধিকাংশ ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। কটেজ জাতীয় ঘরগুলোর বেড়ায় টিনের বদলে ব্যবহার করা হচ্ছে মেহগনি ও কেরাসিন কাঠ। এসব ঘরের স্থায়িত্ব ৬০ থেকে ১০০ বছর। হাটে ২ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত  ঘরগুলো বিক্রি হয়।
স্থানীয় ঘর ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গাছ কিনে নিয়ে আসেন। টিনগুলো ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে কিনে আনেন। এসব ঘর নির্মাণে গোপালগঞ্জের শ্রমিকদের বিশেষ চাহিদা রয়েছে। এ জেলায় গোপালগঞ্জের ১ হাজারেরও বেশি শ্রমিক ঘর নির্মাণ কাজে জড়িত বলে জানা গেছে।
লৌহজংয়ের কলাবাগান এলাকার ঘর তৈরির কারিগর কামরুল ইসলাম বলেন, এ ঘরগুলো তৈরির জন্য ঠিকাদার চুক্তি নেন। একদিন কাজ করলে তাঁকে ৭০০ টাকা দেওয়া হয়। তিনি দুই বছর ধরে ঘর তৈরির কাজ করছেন। তবে অভিজ্ঞ কারিগররা প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা পান।
কাঠমিস্ত্রি রাজু হোসাইন বলেন, কটেজের বেড়ায় মেহগনি ও কেরাসিন কাঠ ব্যবহার করা হয়। মেহগনি ও কেরাসিন কাঠ একটু নরম হওয়ায় সহজেই নকশা করা যায়। তিনি বলেন, কটেজ ধরনের একটি ঘর তৈরি করতে তাদের পাঁচ থেকে সাতজন মিস্ত্রির এক থেকে দেড় মাস সময় লাগে। এই ঘরগুলো তৈরি করতে সাত থেকে আট লাখ টাকা খরচ হয়।
ঘর তৈরির মহাজন মালেক সরদার বলেন, কটেজ ঘরগুলো মূলত ইউরোপের তৈরি বিভিন্ন ঘরের ক্যাটালগ দেখে তৈরি করেন। এ ঘরগুলোর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে– এগুলোতে থাই গ্লাস ব্যবহার করা হয়, যার কারণে বাইরের পানি ঘরে ঢোকার কোনো শঙ্কা থাকে না। এগুলোর দরজা জানালা আটকে দিলে বাতাস বাইরে যেতে পারে না। তাই সহজেই এসি ব্যবহার করা যায়।
ঘর ব্যবসায়ী জসিম বেপারি বলেন, এই ঘরগুলো মূলত ইউরোপীয় বাড়ির ক্যাটালগের আদলে তৈরি করা হয়। তাই এর চাহিদা বেশি। রিসোর্ট মালিকরা বিশেষ করে সিলেট, টেকনাফ, কক্সবাজার থেকে লোকজন এখানে ঘর নিতে আসেন। ঘর কিনলে অনেক জায়গায় মিস্ত্রি দিয়ে তা স্থাপন করে দিয়ে আসেন তারা। 
তিনি জানান, শুধু লৌহজংয়ের কাঠপট্টি এলাকায় রয়েছেন ৩০ জন ঘর ব্যবসায়ী। ইউটিউবসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারের কারণে দিন দিন তাদের ঘর বিক্রি বাড়ছে। 

আরও পড়ুন

×