ঢাকা বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সহযোগীসহ ফেঁসে যাচ্ছেন সাবেক মেয়র খালেক

সহযোগীসহ ফেঁসে যাচ্ছেন সাবেক মেয়র খালেক

তালুকদার আবদুল খালেক

 হাসান হিমালয়, খুলনা

প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ | ০০:৩৪

ফেঁসে যাচ্ছেন খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) অপসারিত মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক ও তাঁর সহযোগীরা। মেয়র পদে থেকে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বেনামে কোটি কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ করার অভিযোগ উঠেছে খালেকের বিরুদ্ধে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) খালেকের অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্ত করতে গিয়ে তাঁর অন্যতম সহযোগী মেসার্স হোসেন ট্রেডার্স, তাজুল এন্টারপ্রাইজ ও আজাদ ইঞ্জিনিয়ার্সের ঠিকাদারি কাজের তথ্য চেয়েছে। বিশেষ করে মেয়রের ব্যবসায়িক অংশীদার এইচ এম সেলিম ওরফে সেলিম হুজুরের যাবতীয় ঠিকাদারি কাজের তথ্য সরবরাহ করতে কেসিসিকে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। পাশাপাশি মেয়র হিসেবে তালুকদার খালেকের ব্যবহৃত সব গাড়ির লগবইও সরবরাহ করতে কেসিসি প্রশাসককে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, সভা-সমাবেশে বক্তৃতায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঝড় তুলতেন তালুকদার খালেক। সততার মুখোশের আড়ালে গত সাড়ে ১৫ বছরে তিনি অনিয়ম-দুর্নীতি করে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। এর বড় অংশই করেছেন মেয়র পদকে কাজে লাগিয়ে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, আইন লঙ্ঘন করে অন্যের লাইসেন্সে নিজেই ঠিকাদারি করতেন খালেক। মেসার্স হোসেন ট্রেডার্স, আজাদ ইঞ্জিনিয়ার্স ও মেসার্স তাজুল ইসলাম নামের তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় ৬০ কোটি টাকার কাজ করেছেন গত কয়েক বছরে। ঠিকাদার এইচ এম সেলিম (সেলিম হুজুর) এসব কাজ দেখাশোনা করতেন। এর বাইরে ৫ শতাংশ কমিশনের ভিত্তিতে আরও প্রায় শতকোটি টাকার উন্নয়ন কাজ বড় ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করেছেন।
বাগেরহাট-৩ আসনে চারবার সংসদ সদস্য ছিলেন তালুকদার খালেক। কেসিসি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর আসনটিতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তাঁর স্ত্রী হাবিবুন নাহার। তিনিও উপমন্ত্রী হন। কিন্তু খালেকই রামপাল ও মোংলা উপজেলার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। সভা-সমাবেশের জন্য রামপালে গেলে ব্যবহার করতেন কেসিসির গাড়ি ও তেল। উপমন্ত্রী স্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদার মেয়র হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস করেননি কেউ।
গত ২৭ আগস্ট ‘সামনে সততার মুখোশ, পেছনে খালেকের বিপুল লুটপাট’ শিরোনামে দৈনিক সমকালে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর পর নড়েচড়ে বসে দুদক। গত ২৪ ডিসেম্বর তালুকদার খালেকের দুর্নীতি তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এর পর গত মঙ্গলবার দুদকের খুলনার উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদকে প্রধান করে অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছে অনুসন্ধান টিম।
দুদকের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ জানান, প্রধান কার্যালয় থেকে বৃহস্পতিবার চিঠি পেয়েই তারা অনুসন্ধান শুরু করেছেন। সাবেক মেয়রের দুর্নীতি অনুসন্ধানে তাঁর সহযোগীদের তথ্য প্রয়োজন। এ জন্য সহযোগীদের তথ্য চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মেয়র হয়ে রামপাল-মোংলার জন্য কেসিসির গাড়ি ব্যবহার, নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি খুঁজে বের করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
গতকাল তালুকদার খালেক ও তাঁর স্ত্রী হাবিবুন নাহারের আয়কর রিটার্ন, কর নির্ধারণী আদেশসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রে ছাপালিপি চেয়ে খুলনা কর অঞ্চলের উপকর কমিশনার সার্কেল-৩ এর কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। 

আরও পড়ুন

×