স্বামীর ‘দুর্নীতি’ আড়াল করতে ফাঁসলেন স্ত্রী
চট্টগ্রাম ওয়াসার সম্পদশালী গাড়িচালক

ফাইল ছবি
আহমেদ কুতুব, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ | ০১:২৩ | আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ | ১১:৫৪
চট্টগ্রাম ওয়াসার গাড়িচালক স্বামী তাজুল ইসলামের ‘দুর্নীতির’ ৩২ লাখ টাকার সম্পদ আড়াল করতে গিয়ে ফাঁসলেন স্ত্রী খায়রুন নেছা। কাগজে-কলমে দুদক ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ পেলেও বাস্তবে ওই সম্পদের বর্তমান বাজারমূল্য পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকা। ১৯৮৯ সালে মাত্র দুই হাজার টাকা বেতনে ওয়াসায় চালকের সহকারী (হেলপার) হিসেবে চাকরি শুরু করেছিলেন তাজুল। পদোন্নতি পেয়ে গাড়িচালক হলেও এখন বেতন পান ৩৫ হাজার টাকা। ওয়াসায় নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, চোরাই পানি বিক্রিসহ অনিয়ম আর দুর্নীতির মাধ্যমে কোটিপতি বনে গেছেন তিনি। দুর্নীতির অর্থ বৈধ করতে স্ত্রীকে কখনও পোলট্রি ব্যবসায়ী, কখনও কমিশন ব্যবসায়ী সাজিয়েছেন।
দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এর উপপরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, চালক তাজুল তাঁর অবৈধ অর্থ বৈধ করতে গৃহিণী স্ত্রীকে ব্যবসায়ী সাজালেও কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তদন্ত করে তাঁর স্ত্রীর নামে প্রায় ৩২ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। গত বুধবার চার্জশিট গ্রহণ করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালত।
খায়রুন নেছা বলেন, অনেক দিন ধরে আমরা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আসছি। মানবিক মানুষ হিসেবে আমার স্বামী আত্মীয়স্বজনের পাশাপাশি অনেককেই বিনা পয়সায় চাকরি দিয়েছেন। আমাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আমি ব্যবসা করে কোটিপতি হয়েছি। ওয়াসার এই গাড়িচালক ও তাঁর স্ত্রীর নামে নগরীর পশ্চিম শহীদনগরের ৬৪৭/আই/১২১৪ নম্বর হোল্ডিংয়ে পাঁচতলা নিজস্ব বাড়ি রয়েছে। এ দম্পতি স্থাবর ও অস্থাবর ১ কোটি ৭২ হাজার টাকার সম্পদ অর্জন করে।
দুদক চার্জশিটে উল্লেখ করে, পেশায় গৃহিণী খায়রুন নেছা জমি, বাড়ি ও গাড়ির মালিক বনে যাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে তাঁর স্বামীর দুর্নীতি। খায়রুন নেছা তাঁর আয়কর নথিতে ২০০২-০৩ থেকে ২০২১-২২ করবর্ষ পর্যন্ত পোলট্রি ফার্মিং থেকে ২ লাখ ৮৯ হাজার টাকা, অন্য উৎস থেকে ১৪ লাখ, কমিশন ব্যবসা থেকে প্রায় পাঁচ লাখ, বাসা ভাড়া থেকে আট লাখ টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে আট লাখ, কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত আয় সাড়ে পাঁচ লাখ এবং মেয়ের বিয়ে বিচ্ছেদ বাবদ ১১ লাখসহ ৫৫ লাখ টাকা আয় প্রদর্শন করেছেন। দুদকের তদন্তে উঠে আসে, খায়রুন নেছার নিজস্ব কোনো আয়ের উৎস নেই। পৈতৃক জমি বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ, স্বামীর উপার্জনের টাকা এবং ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে জমি ক্রয় ও ভবন নির্মাণ করেছেন। তাঁর বৈধ আয় সাড়ে ৩৩ লাখ টাকা।
অন্যদিকে পোলট্রি ফার্ম থেকে, অন্য উৎস, কর অব্যাহতি ও কমিশন ব্যবসা থেকে আয়ের সপক্ষে তদন্তকালে তিনি কোনো দালিলিক প্রমাণ ও রেকর্ডপত্র দুদকের কাছে উপস্থাপন করতে পারেননি। খায়রুন নেছা তাঁর চাকরিজীবী স্বামীর অসাধু উপায়ে অর্জিত অর্থকে বৈধ করার অসৎ উদ্দেশ্যে আয়কর নথিতে ভুয়া আয়ের উৎস মিথ্যাভাবে প্রদর্শন করেছেন। গত ২০ বছরে তাঁর পারিবারিক ও অন্য খরচ সাড়ে ১০ লাখ টাকার তথ্য পাওয়া যায়। সে হিসাবে তাঁর বৈধ আয়ের উৎস সাড়ে ৩৩ লাখ টাকা থেকে কমে দাঁড়ায় ২৩ লাখ টাকা। তাঁর নামে স্থাবর ৩৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকা এবং অস্থাবর ২১ লাখ ৩০ হাজারসহ ৬০ লাখ টাকার সম্পদের মালিক খায়রুন নেছা। এখানে তিনি ১০ লাখ ১১ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন করেছেন ৩১ লাখ ৩৮ হাজার টাকার।
দুদক হিসাবে ৩১ লাখ টাকার সম্পদ পেলেও বাস্তবে তাদের সম্পদের পরিমাণ পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকার বেশি। তাঁর পাঁচতলা বাড়িতে ১৭টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এখানে একটি ফ্ল্যাট সোয়া চার কোটি টাকা। জায়গার দাম কোটি টাকারও বেশি।
চালক তাজুল ইসলাম বলেন, আমি কোনো দুর্নীতি করিনি। বৈধভাবে স্ত্রী ব্যবসা করেই সম্পদের মালিক হয়েছেন। আদালতে সব প্রমাণ দিয়ে আইনি লড়াই করব।