নষ্ট ডিজিটাল হাজিরা যন্ত্রে গচ্চা সাড়ে ১৩ লাখ টাকা

ছবি: সমকাল
জয়পুরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ | ২০:৪৭
জয়পুরহাটের কালাইয়ে ৫৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ২০১৯ সালে বায়োমেট্রিক হাজিরা যন্ত্র স্থাপন করেছিল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টাকায় এসব যন্ত্র ক্রয়ের পর বিদ্যালয়ে স্থাপন করা হলেও বাস্তবায়ন হয়নি আসল উদ্দেশ্য। উল্টো কিছুদিন পরই প্রায় সব যন্ত্র অকেজো হয়ে পড়ে। অনেকগুলো যন্ত্র খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না কিছু বিদ্যালয়ে। যেসব বিদ্যালয়ে এখনও যন্ত্র আছে সেগুলো পড়ে আছে নষ্ট। কিছু বিদ্যালয়ে এখনও যন্ত্র স্থাপনই হয়নি।
জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন উপকরণ ক্রয়ের টাকা থেকে হাজিরা যন্ত্রগুলো কিনে ৫৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপন করা হয়। তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ইতিআরা পারভীন তার পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এইচআর অটোমেশিন থেকে এসব যন্ত্র কিনতে বিদ্যালয়গুলোকে নির্দেশ দেন। প্রধান শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে ২৫ হাজার করে যন্ত্র কেনা বাবদ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেন। যদিও বাজারে এসব মেশিনের মূল্য ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার বেশি নয়।
প্রথমদিকে ২-১ মাস যন্ত্রগুলো চালু থাকলেও পরে সেগুলো অকেজো হয়ে যায়। তারপর আর সেগুলো মেরামত করা হয়নি। তাছাড়া অধিকাংশ বিদ্যালয়ে ইন্টারনেট সংযোগও নেই। আবার অভিযোগ আছে, যেসব বিদ্যালয়ে ইন্টারনেট সংযোগ আছে, তাদের মধ্যে অনেকে ইচ্ছা করেই এসব যন্ত্র ব্যবহার করছে না। অনেক স্কুলের শিক্ষকরা এই যন্ত্র ব্যবহার করতেও জানেন না। এরই মধ্যে যন্ত্রগুলোর ওয়ারেন্টটির মেয়াদও শেষ।
শিক্ষকদের ভাষ্য, তৎকালীন প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার চাপে অল্প সময়ের মধ্যে তাদের হাজিরা যন্ত্র একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কিনতে হয়েছিল। ফলে হাজিরা যন্ত্রের বাজারমূল্য যাচাইয়ের সুযোগও পাননি তারা।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, হাজিরা যন্ত্র যে উদ্দেশ্যে স্থাপন করা হয়েছে তা পূরণ হয়নি। স্থাপনের কিছুদিন পর থেকেই যন্ত্রগুলো অকেজো হয়ে পড়ায় গচ্চা গেছে পুরো টাকা।
কালাই মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা বিদ্যালয় ফান্ডের টাকা থেকে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে হাজিরা যন্ত্র কিনেছিলাম। কিন্তু সংযোগ না থাকায় ব্যবহার করা হয়নি। যন্ত্রটি এখন নষ্ট হয়ে আছে।
ইটাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাদিরা বেগম বলেন, ২৫ হাজার টাকা দিয়ে ডিজিটাল হাজিরা যন্ত্র কিনেছিলাম। চালু করা দূরের কথা, যন্ত্রটি প্যাকেটবন্দি অবস্থায় আজও পড়ে আছে।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এইচআর অটোমেশিনের স্বত্বাধিকারী হারুন অর রশিদ বলেন, হাজিরা যন্ত্র নিয়ে আমাদের কোনো গাফিলতি ছিল না। যন্ত্রগুলো মানসম্পন্ন ছিল। এসব যন্ত্র স্থাপনের পর ইন্টারনেট সংযোগ লাগে। এর জন্য ৩ হাজার টাকা রিচার্জ, সার্ভার এবং সার্ভিস চার্জ রয়েছে। শিক্ষকরা এ টাকা না দেওয়ায় যন্ত্রগুলো চালু করা সম্ভব হয়নি।
বর্তমান উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি যোগদানের আগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়েছে। তাই হাজিরা যন্ত্র নিয়ে কোনো কথা বলতে পারব না। তবে এটা সত্য যে, কোনো বিদ্যালয়েই ডিজিটাল যন্ত্র সচল নেই।
- বিষয় :
- প্রাথমিক বিদ্যালয়