ঢাকা রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

যত্রতত্র পেট্রোল অকটেন বিক্রি, দুর্ঘটনার ঝুঁকি

যত্রতত্র পেট্রোল অকটেন  বিক্রি, দুর্ঘটনার ঝুঁকি

মির্জাপুর উপজেলার দোকানে দোকানে বিক্রি হচ্ছে পেট্রোল-অকটেনের মতো দাহ্য পদার্থ সমকাল

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫ | ০০:৫২

মির্জাপুর উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার, রাস্তাঘাট ও সড়কের পাশে এমনকি চা-মুদি দোকানেও বিক্রি হচ্ছে অকটেন, পেট্রোলসহ বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ। যত্রতত্র পেট্রোল-অকটেন বিক্রির কারণে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড।
মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল থেকে জামুর্কী পর্যন্ত ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের দুই পাশে বিভিন্ন বাজারে অসংখ্য অবৈধ খোলা জ্বালানি তেলের দোকান রয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ বাজার ও অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর পাশে রয়েছে উন্মুক্ত পেট্রোল-অকটেন বিক্রির দোকান। সব মিলিয়ে উপজেলায় অন্তত দুই শতাধিক অবৈধ খোলা জ্বালানি তেলের দোকান রয়েছে। মুদি দোকানগুলোতে অবৈধভাবে বোতলে ভরে পেট্রোল-অকটেন বিক্রি করা হচ্ছে। ইচ্ছে করলে যে কেউই এসব দোকান থেকে বোতলভর্তি পেট্রোল-অকটেন কিনে নিয়ে যেতে পারেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মির্জাপুর উপজেলায় পেট্রোল পাম্প রয়েছে ৯টি। পাম্পগুলো থেকে জ্বালানি কিনে এনে বিক্রি করেন দোকানিরা। মোটরবাইক চালকরা প্রতি লিটার ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দিয়ে এসব দোকান থেকে জ্বালানি কিনে থাকেন। অনুমোদনহীন এসব দোকান দীর্ঘদিন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পেট্রোল-অকটেন বিক্রি করছে। অথচ অনুমোদন ছাড়া প্রকাশ্যে দাহ্য পদার্থ বিক্রি করা দণ্ডনীয় অপরাধ। পেট্রোল বিক্রি করতে হলে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স নিতে হয়। 
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন দোকানে এক কিংবা আধা লিটার ওজনের প্লাস্টিক বোতলে পেট্রোল অথবা অকটেন ভরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এসব দোকানে নেই আগুন নির্বাপণ যন্ত্র। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে জানা নেই প্রতিকারের ব্যবস্থা। হাটবাজার কিংবা আবাসিক এলাকায় এ ব্যবসার কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে।
জ্বালানি অধিদপ্তরের আইন অনুযায়ী, যেসব প্রতিষ্ঠানে তেল ও গ্যাস বিক্রি করবে, তাদের বিক্রির স্থানকে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত রেখে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালাতে হয়। তেল-গ্যাস বিক্রির স্থানে কমপক্ষে মেঝে পাকাসহ আধাপাকা ঘর, ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপণ লাইসেন্সসহ অগ্নিনির্বাপণ সিলিন্ডার ও ঝুঁকিমুক্ত সংরক্ষণাগার থাকতে হবে। এ ছাড়া থাকতে হবে জ্বালানি অধিদপ্তরের অনুমোদন। অথচ এসব শর্তের একটিও নেই উপজেলার খোলা তেল ব্যবসায়ীদের। আবার উপজেলার বিভিন্ন বাজার, পাড়া-মহল্লা, মুদি, প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন দোকানে খোলা জ্বালানি বিক্রি হচ্ছে।
কয়েকজন পেট্রোল-অকটেন বিক্রেতা জানান, উপজেলার বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে শত শত ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চলাচল করে। মোটরসাইকেল চালকদের চাহিদার কারণেই পেট্রোল বিক্রি করে থাকেন তারা। পেট্রোল পাম্পের চেয়ে প্রতি লিটারে পাঁচ থেকে দশ টাকা বেশি রাখেন। পেট্রোল পাম্প দূরে হওয়ায় মোটরসাইকেল চালকরা খুশি হয়েই এই বেশি টাকা দেন। আর পেট্রোল বিক্রি করতে যে লাইসেন্স লাগে, সে সম্পর্কে জানেন না বলে দাবি তাদের। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কখনও এ ব্যাপারে তাদের কিছু বলা হয়নি।
মির্জাপুর ফিলিং স্টেশনের মালিক মো. আসলামের ভাষ্য, তারা সাধারণত যানবাহনে তেল বিক্রি করে থাকেন। ব্যবসায়ী এবং কৃষকরা ড্রামে তেল নেন। সেটি খুব নিরাপত্তার সঙ্গে দেওয়া হয়। তা ছাড়া কোম্পানি এবং স্থানীয় প্রশাসন থেকে এ ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় মির্জাপুর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের স্টেশন অফিসার বেলায়েত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, বোতলে করে এভাবে উন্মুক্তভাবে পেট্রোল-অকটেন বিক্রির কোনো নিয়ম নেই। বিক্রি করতে হলে কিছু নিয়ম আছে এবং বিভিন্ন দপ্তরের অনুমতি লাগে। মির্জাপুরে এ ধরনের অনুমতি কেউ নিয়েছে বলে তাঁর জানা নেই। তবে এসব স্থানে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।

আরও পড়ুন

×