ঢাকা রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

‘অস্থির আত্মাকে মুক্তির পথ দেখান লালন’

‘অস্থির আত্মাকে মুক্তির পথ দেখান লালন’

নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় শুক্রবার লালন উৎসবে সংগীত পরিবেশন করছেন শিল্পীরা সমকাল

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫ | ০০:৫৬

মানবিক সমাজ গড়ার জন্য লালন সাঁই মানুষকে অসাম্প্রদায়িক হতে আহ্বান জানিয়েছেন। তাই পৃথিবীর বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় লালনের দর্শন নিয়ে গবেষণা করে। নারায়ণগঞ্জে দু’দিনব্যাপী লালন উৎসবের উদ্বোধন করতে গিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন লালনসংগীতের শিল্পী ফকির পিয়ার সাঁই। তিনি বলেছেন, উচ্ছৃঙ্খল মানুষকে শান্ত করা, অস্থির আত্মাকে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন লালন।
ফকির লালন সাঁইয়ের ২৫০তম জন্মবর্ষ উপলক্ষে এ উৎসবের আয়োজন করেছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫টায় চাষাঢ়ায় অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুরু হয়েছে এ উৎসব। 
উদ্বোধনী বক্তব্যে আয়োজক সংগঠনের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল বলেন, দেশের কিছু কিছু মহল; কিছু উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী দেশে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিতে চায়; অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চায়। তারাই রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-লালনের বিরোধিতা করছে। লালন ও কাজী নজরুল ইসলাম সারাজীবন অসাম্প্রদায়িক দর্শনের চর্চা করে গেছেন। 
লালনের বিরোধিতা করলেই তাঁকে মুছে দেওয়া সম্ভব নয় উল্লেখ করে জিয়াউল ইসলাম বলেন, ‘তিনি (লালন) এ দেশের মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছেন। শরীয়তপুরে একজন স্বর্ণশিল্পী ফেসবুকে লালনের গান ‘সুন্নত দিলে হয় মুসলমান, নারী জাতির কি হয় বিধান’ পোস্ট করায় তাঁকে থানায় নিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে উগ্র মৌলবাদীদের বাধায় লালন মেলা হতে পারেনি। আমরা এসবের প্রতিবাদ জানিয়েছি। আমাদের প্রতিবাদ চলবে।’
গত বছরের ২২ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের চর নরসিংপুরে আয়োজিত লালন মেলা হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের স্থানীয় নেতাকর্মীর বাধায় পণ্ড হয়ে যায়। ৮ ডিসেম্বর সদর উপজেলার রাধানগর গ্রামে সুফি সাধক শাহ সোলায়মান লেংটার ১৯৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বার্ষিক ওরস ও মেলা মৌলবাদী গোষ্ঠীর বাধায় আয়োজন করা যায়নি। ইতোমধ্যে জেলার বেশ কয়েকটি মাজারে হামলা হয়েছে। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জে ‘লালন উৎসব’কে মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ বলে মনে করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি। সমকালকে তিনি বলেন, ‘আমরা একাত্তরে যে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম, চব্বিশের আন্দোলন সে অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার প্রতিশ্রুতি। একটি মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা, সব ধর্মের স্বাধীনতা শুধু নয়, সব 
মত ও পথের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি চব্বিশের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান। আউল-বাউল, সুফি, সন্ন্যাসী সবার মত ও পথের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য এসব আন্দোলন। শ্রেষ্ঠত্ব বা সংখ্যাগরিষ্ঠতার অজুহাতে কোনো মতবাদকে দমন করা যাবে না।’ রাষ্ট্রকে সেই স্বাধীনতা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন রফিউর রাব্বি। তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘অর্ধশতাধিক মাজার-খানকা ভেঙে ফেলা হলেও, আক্রান্ত হলেও সরকারের লজ্জাজনক নীরবতা আমরা দেখলাম। ধর্ম রক্ষার নামে যুগে যুগে সমাজে ধর্মান্ধ গোষ্ঠী ধর্মের ওপর, মানবতার ওপর আঘাত হেনেছে।’
‘যেদিন হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিষ্টান, জাতি গোত্র নাহি রবে, এমন মানব সমাজ, কবে গো সৃজন হবে’ গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শুক্রবারের আয়োজন। সেখানে কুষ্টিয়া ও জোটভুক্ত সংগঠনের শিল্পীরা লালনের লেখা সংগীত পরিবেশন করেন। 

আরও পড়ুন

×