খুবি ছাত্র অর্ণব খুন
ক্লু পাচ্ছে না পুলিশ, আটক তিন সন্দেহভাজন

অর্ণবের শোকে স্বজনের আহাজারি। শনিবার খুলনা নগরীর বানরগাতী এলাকার বাড়িতে -সমকাল
খুলনা ব্যুরো
প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ০১:৫৭ | আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ১০:১০
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) ছাত্র অর্ণব কুমার সরকারকে গুলি করে হত্যার কোনো ক্লু (সূত্র) পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ তিন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও খুনের কারণ উদ্ঘাটন করতে পারেনি। তদন্তের স্বার্থে আটকদের নাম-পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে।
অর্ণব হত্যার ঘটনায় গত শুক্রবার রাতভর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায় সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ। অভিযানে আটক তিনজনকে দিনভর থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও এখন পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য মেলেনি।
খুলনা মেডিকেল কলেজ মর্গে গতকাল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অর্ণবের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এর আগে সকাল থেকেই আত্মীয়স্বজন ও পরিবারের সদস্যরা সেখানে ভিড় করেন।
লাশ হস্তান্তরের পর নগরীর বানরগাতী এলাকার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় স্বজনের আহাজারিতে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। আহাজারি করছিলেন অর্ণবের মা চণ্ডী রানী, বাবা নীতিশ কুমার সরকার, চাচা তুষার সরকার ও সুকুমার সরকার, ছোট ভাই অনিক কুমার সরকারসহ স্বজনরা। অর্ণবকে গুলি করে হত্যার কথা তখনও জানানো হয়নি তাঁর মাকে। শুক্রবার রাতে বলা হয়েছিল, অর্ণব সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে।
অর্ণবের মা বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘তোমরা আমার অর্ণবকে এনে দেও। কোথায় গেলি অর্ণব?’ তাঁর আহাজারিতে চোখে পানি ধরে রাখতে পারেননি উপস্থিত লোকজন। বাবা নীতিশ কুমার সরকার বলেন, ‘আমার সন্তান কারও সঙ্গে কখনও দুর্ব্যবহার করেনি। ওরা কেন আমার ছেলেকে হত্যা করল? কার কাছে বিচার দেব?’
গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল অর্ণবের ভাই অনিকের। পরীক্ষা খুলনায় হলেও কেন্দ্রে যাননি। প্রতিবেশী তসলিম হোসেন হারুন বলেন, ‘শুনেছি, ১৫ দিন আগে অর্ণবের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বিয়েবাড়ি থেকে হারিয়ে যায়। ওই ঘটনায় সে সোনাডাঙ্গা থানায় জিডি করেছিল। এ নিয়ে কারও সঙ্গে বিরোধের কথা শোনা যায়নি।’
সোনাডাঙ্গা থানার ওসি শফিকুল ইসলাম জানান, হত্যার ঘটনায় রাত ৮টা পর্যন্ত মামলা হয়নি। তবে পরিবারের সদস্যরা মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (সাউথ) শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, অর্ণবের মেয়েলি কোনো বিরোধ ও তাঁর বাবার ব্যবসায়িক কোনো বিরোধ কিংবা কোনো সন্ত্রাসীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব আছে কিনা, তার খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা হচ্ছে।
গত শুক্রবার রাতে নগরীর তেঁতুলতলা মোড়ে মোটরসাইকেলের ওপর বসে চা খাচ্ছিলেন অর্ণব। এ সময় মোটরসাইকেলে আসা ১০-১২ জনের একদল লোক তাঁকে গুলি করে ও কুপিয়ে পালিয়ে যায়। পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। অর্ণব খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিনের মাস্টার্সের ছাত্র ছিলেন।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে গত সাড়ে পাঁচ মাসে নগরী ও জেলায় ১১টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। খুলনা এখন আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হয়েছে।
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব বাবুল হাওলাদার বলেন, খুলনা এখন আতঙ্কের নগরী। রাত হলে সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। আত্মগোপনে ও কারাগারে থাকা অনেক সন্ত্রাসী-চরমপন্থি জামিন পেয়ে এলাকায় ফিরেছে। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা সক্রিয়। কিন্তু পুলিশ এখনও পুরোপুরি সক্রিয় হয়নি।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, ১২ শীর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করতে পারলে পুলিশ সদস্যদের ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা ছিল। ইতোমধ্যে চারজনকে ধরা সম্ভব হয়েছে।
- বিষয় :
- খুন