ঢাকা বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

মারা গেছেন বিএনপি নেতা নোমান

মারা গেছেন বিএনপি নেতা নোমান

আবদুল্লাহ আল নোমান

সমকাল প্রতিবেদক ও চট্টগ্রাম ব্যুরো

প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ০১:০৮ | আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ০৮:১২

চট্টগ্রামে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বিএনপির সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। কথা ছিল ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাবেন তিনি। ভোরে অসুস্থ হয়ে পড়ে চিরতরে বিদায় নিলেন বর্ষীয়ান এ রাজনীতিক (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর মৃত্যুতে চট্টগ্রামের সমাবেশ বাতিল করা হয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা নোমানের বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার, নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান শোক জানিয়েছেন। শোক প্রকাশ ও গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, ফারুক-ই-আজম, সদ্য পদত্যাগ করা নাহিদ ইসলামসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। চট্টগ্রামের ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন নোমান। শোক জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম নাজিমউদ্দিন।

নোমানের ব্যক্তিগত সহকারী নুরুল আজিম হিরু জানান, আবদুল্লাহ আল নোমান বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। মঙ্গলবার ভোরে ধানমন্ডির বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। স্কয়ার হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

গতকাল বায়তুল মোকাররম মসজিদ, নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে, জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজাসহ একাধিক স্থানে নোমানের জানাজা হয়। আগামী শুক্রবার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজানের গহিরায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফনের কথা রয়েছে বলে জানান নুরুল আজিম। 

নোমান চট্টগ্রামের রাজনীতিতে সর্বজনশ্রদ্ধেয় নেতা ছিলেন। বাম আদর্শ নিয়ে ছাত্র আন্দোলন দিয়ে শুরু করে শ্রমিক আন্দোলনের পথ বেয়ে তিনি জাতীয় রাজনীতিতে আসেন। বিএনপিতে যোগ দিয়ে মন্ত্রী হন।

নোমানের মৃত্যুর খবরে নেতাকর্মীর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। ধানমন্ডির বাসায় ভিড় করেন অনেকে। শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সান্ত্বনা জানাতে ছুটে যান মির্জা ফখরুল, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ বিএনপি, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। শোক নেমে এসেছে চট্টগ্রাম বিএনপিতেও। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, আবদুল্লাহ আল নোমানের শূন্যতা দলে কখনও পূরণ হবে না।

নোমান চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে তিনবার এমপি হয়েছেন। ১৯৯১ সালে মৎস্য ও পশুসম্পদ, ২০০১ সালে প্রথমে খাদ্যমন্ত্রী, পরে শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং বন ও পরিবেশমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

বড় ভাই চট্টগ্রাম ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবদুল্লাহ আল হারুনের হাত ধরে নোমানের রাজনীতি শুরু। ষাটের দশকে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তিনি যোগ দেন ছাত্র ইউনিয়নে। পরে মেননপন্থি ছাত্র ইউনিয়নের চট্টগ্রাম মহানগর সাধারণ সম্পাদক, বৃহত্তর চট্টগ্রামের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

ছাত্রজীবন শেষে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মাধ্যমে শ্রমিক রাজনীতিতে হাতেখড়ি নোমানের। পূর্ববাংলা শ্রমিক ফেডারেশনের সহসভাপতি ছিলেন। ১৯৭০ সালে ন্যাপের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন, ফিরে এসে আবারও ন্যাপের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। জিয়াউর রহমান বিএনপি গঠনের পর ১৯৮১ সালে দলটিতে যোগ দেন নোমান।

আরও পড়ুন

×