ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫

উপাচার্যের পদত্যাগসহ

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা কুয়েট

৬ দাবি শিক্ষার্থীদের

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা কুয়েট

ফাইল ছবি

খুলনা ব্যুরো

প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ০১:১০ | আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ০৮:১৪

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের জেরে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম এবং সব আবাসিক হল বন্ধ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আজ সকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। তবে অফিস খোলা থাকবে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অনলাইনে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ। এতে উপ-উপাচার্যসহ সিন্ডিকেটের ১৪ সদস্য অংশ নেন।

সভায় উপাচার্য জানান, বর্তমানে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। আবাসিক হলগুলোতে অল্প কিছু শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন। ইতোপূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ হওয়ায় তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমানাপ্রাচীরের নির্মাণকাজ চলমান থাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

কুয়েটের সংঘর্ষের ঘটনায় গঠিত চার সদস্যের তদন্ত কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. এম এম এ হাশেম জানান, ১৯ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট সভায় তদন্ত কমিটি গঠিত হয় এবং তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তিন কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়। কিন্তু এখনও তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করা যায়নি। সে কারণে তারা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আরও সাত কার্যদিবস সময় চাইলে সিন্ডিকেট তা অনুমোদন করে। 

এদিকে উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবিতে কুয়েটের শিক্ষার্থীরা গত ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে উপাচার্যের বাসভবনে তালা লাগিয়ে দিয়েছিলেন। গত সোমবার রাতে উপাচার্য লোক দিয়ে তালা ভেঙে বাসভবনে প্রবেশ করেন। রাতেই শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে মঙ্গলবার সকাল ১০টার মধ্যে বাসা থেকে নেমে যাওয়ার আলটিমেটাম দেন। কিন্তু উপাচার্য তাতে সাড়া দেননি।

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ১৮-২০ শিক্ষার্থী উপাচার্যের বাসভবনের সামনে যান। এ সময় তারা হ্যান্ডমাইকে উপাচার্যের বাসভবনে যারা রয়েছেন, তাদের পাঁচ মিনিটের মধ্যে বেরিয়ে বাসা খালি করে দেওয়ার আহ্বান জানান। ভেতরে তখন উপাচার্য শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠক করছিলেন। এক পর্যায়ে শিক্ষকরা গেটের কাছে এসে শিক্ষার্থীদের তালা লাগানোর উদ্যোগের কড়া প্রতিবাদ জানান। তালা লাগানো হলে শিক্ষকরা গণপদত্যাগের হুঁশিয়ারি দেন। তখন শিক্ষার্থীরা তালা না দিয়ে ফিরে যান।

পরে প্রেস ব্রিফিংয়ে কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. ফারুক হোসেন বলেন, কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীর আচরণ সঠিক নয়। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে পাঁচটির সঙ্গে একমত। কিন্তু উপাচার্যকে পদত্যাগ করতে হবে– এ দাবি অযৌক্তিক। কারণ, উপাচার্য তো শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়েছেন।

এ সময় অধ্যাপক আশরাফুল গণি ভূঁইয়া বলেন, ছাত্রদের দাবির বিষয়টি মাথায় রেখে প্রশাসন কাজ করছে, আমরাও কাজ করছি। কিন্তু কিছু ছাত্র তাদের সীমা অতিক্রম করছে। তারা আমাদের গালাগাল করছে। এটা তারা করবে কখনও আশা করিনি। তারা আমাদের বাসায় আসবে, তালা দেবে, আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে, এটা আমরা পছন্দ করছি না।

শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের দুর্বার বাংলা চত্বরে সাংবাদিকদের বলেন, উপাচার্যের পদত্যাগ ও ছয় দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে।
কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে বিরোধের জের ধরে ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদলের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত হন। এ ঘটনার পরদিন শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ, হামলাকারীদের গ্রেপ্তারসহ ছয় দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন।

আরও পড়ুন

×