পুলিশি তৎপরতার মধ্যেও সক্রিয় ছিনতাইকারী চক্র

ফাইল ছবি
আজু শিকদার, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)
প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৫ | ০০:৫৪
গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় পুলিশের ব্যাপক তৎপরতার মধ্যেও সক্রিয় ছিনতাইকারী চক্র। ঘাটে বাস ও ট্রাকের সিরিয়ালে আটকে থাকা যাত্রীরা মাঝে মধ্যেই শিকার হন ছিনতাইয়ের।
এ পরিস্থিতিতে আসন্ন ঈদুল ফিতরে ছিনতাইকারী চক্র আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। কারণ সাধারণত ঘাট এলাকায় সারা বছরই অপরাধপ্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এ প্রবণতা ঈদসহ অন্যান্য উৎসবে বৃদ্ধি পায়। এখানে ছিনতাইকারীদের খপ্পরে পড়া বেশির ভাগ যাত্রীই থানা পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ না করেই গন্তব্যে চলে যান। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বপ্রণোদিত হয়েই ছিনতাইকারী চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে হয়। অপরদিকে সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তিকে আটক করাও পুলিশের জন্য কিছুটা জটিল হয়ে পড়ে। এ ছাড়া দেশের বৃহত্তম যৌনপল্লি দৌলতদিয়ায় হওয়ায় সারাদেশের অপরাধীরা এখানে নির্বিঘ্নে দিনের পর দিন অবস্থান করতে পারে। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়ে থাকে।
গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারি মাস ও চলতি মার্চ মাসের এই কয়েক দিনে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা থেকে ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে ১৯ জনকে হাতেনাতে আটক করা হয়। আটক ব্যক্তিরা সবাই পেশাদার ছিনতাইকারী এবং এর আগেও তারা একাধিকবার ছিনতাইয়ের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছে।
জানা যায়, স্বাভাবিক সময়েও প্রতিদিন দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে দক্ষিণ অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মানুষ রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে থাকেন। নানা উৎসবে যাতায়াতকারী মানুষের সংখ্যা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়। আর যাত্রীদের আনাগোনা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে ছিনতাইকারী চক্রের তৎপরতা।
স্থানীয়রা জানান, ঘন কুয়াশাসহ নানা কারণে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় ফেরির নাগাল পেতে নদী পারাপার হতে আসা যানবাহনগুলোকে সিরিয়ালে আটকে থাকতে হয়। এ সুযোগে ছিনতাইকারীরা গাড়ির জানালা দিয়ে মোবাইল ফোনসেট, ব্যাগ, স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিয়ে মুহূর্তেই অন্ধকারে গা-ঢাকা দেয়। এ ছাড়া দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি থেকে যাত্রী কোনো প্রয়োজনে নামলেই ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে।
দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় পরিবহন সেক্টরে কর্মরত নুরুল ইসলাম, আবদুল্লাহ আল মামুন, আবদুল হক সরদারসহ প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই জানান, দৌলতদিয়া ঘাটে ছিনতাই নিত্যদিনের ঘটনা। ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে যাত্রীরা চিৎকার করলেও ভয়ে কেউ এগিয়ে যায় না, এমনকি চালক ও তার সহযোগীও কিছু করতে সাহস পায় না। যথারীতি পুলিশের টহল থাকলেও চোখের পলকে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ছিনতাইকারীরা ছিনতাই করে সটকে পড়ে। এ ক্ষেত্রে ছিনতাইকারীরা অপেক্ষাকৃত অন্ধকার স্থান বেছে নেয়। মাঝে মধ্যে মনে হয়, এ যেন চোর-পুলিশ খেলা।
দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে গত মঙ্গলবার ছিনতাইয়ের শিকার হন যশোর থেকে ঢাকাগামী যাত্রী আলমগীর হোসেন। তিনি জানান, বাসের জানালার পাশে বসে ছিলেন তিনি। হঠাৎ করেই এক যুবক জানালা দিয়ে তাঁর হাত থেকে মোবাইল ফোনসেট ছিনিয়ে নিয়ে দৌড় দেয়। তিনি চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি।
এ ছাড়া রোজিনা পরিবহনের যাত্রী আবদুল ওয়াহাব জানান, তিনি ল্যাপটপের ব্যাগ কোলের ওপর রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। ঘুম ভাঙার পর দেখেন, জানালার গ্লাস খোলা এবং তাঁর ল্যাপটপের ব্যাগটিও নেই। অফিসের গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস সব চলে গেল বলে আক্ষেপ করে তিনি জানান, ফেরিতে উঠে গন্তব্যে পৌঁছাতে হবে বলে থানায় অভিযোগ করেননি তিনি।
একাধিক পরিবহনের চালকরা অভিযোগ করে বলেন, গাড়ির সিরিয়াল হলেই ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। পুলিশের টহল থাকলেও ছিনতাই থেমে থাকে না। পুলিশ একটু দূরে গেলেই ছিনতাইকারীরা চোখের পলকে যাত্রীর মালপত্র নিয়ে অন্ধকারে হারিয়ে যায়। তখন পুলিশেরও কিছু করার থাকে না।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম বলেন, ঘাট এলাকায় ছিনতাইয়ের কোনো অভিযোগ সম্প্রতি পাননি। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলে তারা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছেন। একই সঙ্গে ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে টহল অভিযান জোরদার করা হয়েছে। ছিনতাইকারী চক্র নির্মূলে পুলিশ আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
- বিষয় :
- ছিনতাইকারী