জলকেলিতে শেষ হলো পাহাড়ের উৎসব

ছবি: সমকাল
রাঙামাটি অফিস
প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫ | ০৩:১৬
পুরাতন বছরের সমস্ত গ্লানি, দুঃখ, অপশক্তি দূর করে ধুয়েমুছে দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে গতকাল মঙ্গলবার জলকেলি উৎসবে মেতে ওঠেন মারমা সম্প্রদায়ের লোকজন। ঐতিহ্যবাহী এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে পাহাড়ে ১৫ দিনব্যাপী সামাজিক উৎসবের সমাপ্তি ঘটল। সাংগ্রাই গানের সুরে সুরে মারমা তরুণ-তরুণীরা একে অপরকে জল ছিটিয়ে দেন। দিনব্যাপী উৎসব পাহাড়ি-বাঙালির মিলন মেলায় পরিণত হয়।
কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার মাঠে এ আয়োজনে হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর অংশ নেন। সাংগ্রাই জল উৎসব উদযাপন কমিটির উদ্যোগে মহাসাংগ্রাই রিলাং পো য়েঃ বা জলকেলি হয়েছে। জনশ্রুতি রয়েছে, জলকেলি উৎসবের মাধ্যমে মারমা তরুণ-তরুণীদের একে অন্যের সহচর্যে আসা ও প্রিয় মানুষ বেছে নেওয়ার সুযোগ হয়।
ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকায় রাখা পানি দিয়ে কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে তরুণ-তরুণীরা একে অপরকে পানি ছিটিয়ে ভিজিয়ে উৎসবে মেতে ওঠেন। জলকেলির পাশাপাশি চলে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে শিল্পীরা গান ও নৃত্য পরিবেশন করেন। উৎসবে তৈলাক্ত বাঁশে ওঠার প্রতিযোগিতার আয়োজনও করা হয়। এছাড়া মাঠে আয়োজন করা হয় গ্রামীণ মেলা। এতে খাবার, কাপড়-চোপড় ও গৃহস্থালি সামগ্রির পসরা বসে। সন্ধ্যায় মারমা সম্প্রদায়ের যাত্রাপালার আয়োজন করা হয়।
উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ মামুন। অনুষ্ঠানে উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক উথোয়াই মং মারমার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ক্যওসিং মং মারমা। এ সময় রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য নাউপ্রু মারমা, সাগরিকা রোয়াজা, উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব হ্লাসুই মং মারমা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভার শুরুতে মারমা শিল্পীরা উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন। পরে প্রধান অতিথি ফিতা কেটে ও পানি ছিটিয়ে দিয়ে জলকেলি উদ্বোধন করেন।
জেলকেলিতে অংশ নেওয়া ম্যউসিং বলেন, ‘সবাইকে মৈত্রীময় জল ছিটিয়ে দিয়ে পুরাতন বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে থাকি আমরা।’ উৎসব দেখতে আসা নীলা চাকমা বলেন, ‘প্রতি বছর এ উৎসবটির জন্য আমরা অপেক্ষা করে থাকি।’ চিৎমরমের এলাকার আইনজীবী লাথোয়াই মারমা বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি পুরোনো বছরে সমস্ত গ্লানি, দুঃখ, ব্যর্থতা পানি ছিটানোর মাধ্যমে ধুয়েমুছে যাবে।’
উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক উথোয়াই মং মারমা জানান, এই সম্প্রদায় তিন দিনের উৎসব উদযাপন করে। ১৩ এপ্রিল ফুল দিয়ে সাংগ্রাইকে বরণ করা হয়েছে। ১৪ এপ্রিল আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মিলেমিশে দিন কেটেছে।’
- বিষয় :
- রাঙামাটি