ঢাকা শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

স্ত্রীর তৃতীয় সিজার নিয়ে একটু টেনশনেই ছিলেন রাজিব

স্ত্রীর তৃতীয় সিজার নিয়ে একটু টেনশনেই ছিলেন রাজিব

ছবি- সমকাল

ফরিদপুর অফিস

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫ | ০৪:৫৮ | আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫ | ১৮:৩৩

বাংলা নববর্ষের সকালে রাজিব ও তানিয়ার কোলজুড়ে আগমন হলো ৩য় পুত্র সন্তানের। সোমবার তিন কেজি ৩ গ্রাম ওজন নিয়ে ফরিদপুর শহরের ডা. জাহেদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতালে সকাল ৯টা ১০ মিনিটে অপারেশনের মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করে শিশুটি। বছরের প্রথম দিনে নতুন অতিথিকে পেয়ে আনন্দে ভাসছে তাদের পরিবার।

সাইদুল ইসলাম রাজিব ও তানিয়া আক্তার ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট  হাউজিং স্টেট এলাকার খসরু ব্যাংকারের বাসার ভাড়াটিয়া। রাজিব শহরে গাড়ির ব্যবসা করেন। দীর্ঘদিন তারা ফরিদপুর শহরে বসবাস করছেন। স্ত্রী তানিয়া আক্তারের বাড়ি শহরের গোয়ালচামট রথখোলা এলাকায়। এই দম্পতির ৯ বছর ও ২ বছরের পুত্র সন্তানের পর ৩য় পুত্র সন্তান জন্ম নিলো। সিজারের পর মা ও শিশু সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের ডা. দিলরুবা জেবা।

শিশু হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আক্কাস হোসেন বলেন, মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ আছেন।

পরিবারের সদস্যরা জানান, ফুটফুটে পুত্র সন্তান পেয়ে তারা অনেক খুশি। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে জন্ম হওয়ায় নববর্ষের সঙ্গে মিল রেখে নাম রাখবেন শিশুটির।

বাবা রাজিব বলেন, ব্যবসার কাজে বেশির ভাগ সময় বাইরে বাইরে থাকি। এজন্য বাসায় ফিরেই আগে স্ত্রী ও সন্তানদের খোঁজ নেই। তবে স্ত্রীর ওপর আমার ভরসা অনেক। তার সক্ষমতাও অনেক। সেই সাথে তার মা বোন কাছাকাছি থাকায় তারাই সব সময় সাহস দিচ্ছেন। এজন্য অনেকটা নিশ্চিন্তে থাকতাম। 

তিনি বলেন, ধর্মীয় রীতিনীতি সব সময় পালন করেছি, করবো। তবে কোন প্রকার কুসংস্কার নিয়ে ভাবি না। ১১ বছর আগে তানিয়ার সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় আমাদের।  যদিও ৩য় সিজার নিয়ে একটু টেনশনে ছিলাম। সকাল সাড়ে ৯টার পরে নার্স এসে ছেলেকে কোলে তুলে দিলে প্রথমেই আমি আযান দেই। তারপর তার নানীর কোলে তুলে দেই। পহেলা বৈশাখের মতো বিশেষ দিনে জন্ম গ্রহণ করাটা আমাদের কাছে আনন্দের তবে সেটা দিনক্ষণ ঠিক করে নয়। ডাক্তারের পরামর্শে আজ সিজার অপারেশন হয়। সন্তানের আগমন ও মায়ের সুস্থতা নিয়ে আমাদের বেশি চিন্তা ছিল। পহেলা বৈশাখ আমাদের মাথাতেই ছিল না। আপনারাই বরং আমাদের বিশেষ উপলক্ষ করে দিলেন, স্মরণ করিয়ে দিলেন। আমার নবাগত সন্তানকে পহেলা বৈশাখের আনন্দের স্বাদ পাইয়ে দিলেন। এজন্য সমকাল কর্তৃপক্ষকে আমি আমার অন্তর থেকে ধন্যবাদ জানাই। আগামীতে সন্তান যখন তার জন্মদিন ও বৈশাখ নিয়ে আনন্দ করবে সেটাই আমার কাছে বেশি আনন্দের হবে।

শিশু হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আক্কাস হোসেন বলেন, মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ আছেন। আমাদের নার্স ও ডাক্তাররা নিয়মিত দেখভাল করছেন। তিনি আন্তরিক ভাবে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ হিসেবে ওই শিশুটিকে কোন প্রকার আয়োজনে অংশগ্রহণ করাতে পারিনি। হাসপাতালেও বৈশাখ উপলক্ষে কোন আয়োজন করা হয়নি। তবে ব্যক্তিগত ভাবে কেউ কেউ একজন আরেকজনকে উইশ করে থাকতে পারে। একই দিনে আমাদের হাসপাতালে আরও ৪টি শিশু জন্মগ্রহণ করেছেন। রাত্রি নাগাদ আরও একটি বা দুটি শিশু জন্ম নিতেও পারে। আপনারা এসে হাসপাতালে নববর্ষ উৎসবকে মনে করিয়ে দিলেন। আগামীতে এ বিষয়গুলো নিয়ে কিছু করা যায় কিনা সেটা ভাবনায় রাখলাম।

নবজাতকের নানী বাবলী বেগম সমকালকে জানান, আমরা ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলি কোন কুসংস্কার নয়। রোববার ডাক্তারের কাছে মেয়েকে নিয়ে নিয়মিত চেকআপ করাতে আসলে ডাক্তার পরামর্শ দেন সিজারের সময় হয়ে গেছে আপনারা প্রস্তুতি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যান। ভর্তি হয়ে ডাক্তারকে জানালে তিনি সকালে অপারেশন করবেন বলে সময় দিয়ে যান। আল্লাহ আমাদের একটি সুস্থ পুত্র সন্তান দান করেছেন। এই সন্তানকে ভবিষ্যতে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলাই আমাদের মূল লক্ষ। তবে তার জন্য এখন থেকেই কোনো লক্ষ্য ঠিক করে দিতে চাই না, যে তোমাকে এটা বানাবো বা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বানাবো, বা এটা হতে হবে বা ওটা হতে হবে এরকম টা নয় আমাদের কাছে।
 

আরও পড়ুন

×