ঢাকা সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন

সড়কবাতি জ্বলে ঠিকাদারের ইশারায়

সড়কবাতি জ্বলে ঠিকাদারের ইশারায়

লোগো

 আব্দুল্লাহ আল মামুন, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ০০:৫২ | আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ০৮:৪৭

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, সিসিটিভি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ ছাড়াও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে সড়কবাতি। নিয়মে নগরীতে বাতির নিয়ন্ত্রক সিটি করপোরেশন। কিন্তু চট্টগ্রাম নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ৮০ কিলোমিটারে বসানো পাঁচ হাজার সড়কবাতি জ্বলছে ঠিকাদারের ইশারায়!

ঠিকাদারের হাতে সড়কবাতি থাকাকে স্পর্শকাতর বলছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। তাদের ভাষ্যে, সরকারি প্রতিষ্ঠানের সড়কবাতির নিয়ন্ত্রণ বেসরকারি কর্তৃপক্ষের হাতে থাকা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বাতি নেভানো থাকলে ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ বাড়তে পারে। আবার নিভিয়ে রেখেও ঘটাতে পারে নাশকতা।

চসিকের বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জাইকার অর্থায়নে ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সড়কবাতি স্থাপন করে চসিক। প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৪৫টি সড়কের ৮০ কিলোমিটারে প্রায় পাঁচ হাজার এলইডি বাতি বসানোর কাজ পায় এইচটিএমএস লিমিটেড। তবে মাঠ পর্যায়ে সাব-ঠিকাদার হিসেবে কাজটি বাস্তবায়ন করে ট্রেড ম্যাজিস্টিক লিমিটেড। ২০২২ সালের মার্চে কাজ শেষ হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১৫ মার্চ শেষ হয়েছে এক বছরের ত্রুটিজনিত দায়ের মেয়াদ। কিন্তু এখনও বাতির সার্ভারের নিয়ন্ত্রণ ট্রেড ম্যাজিস্টিকের হাতে রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বাতি নিভিয়ে অনিরাপদ পরিস্থিতি তৈরির অভিযোগে চসিকের এক প্রকৌশলীকে চাকরিচ্যুত করা হয়। পরে তদন্ত কমিটি ঠিকাদারের হাতে সড়কবাতির নিয়ন্ত্রণকে ‘বিধিবহির্ভূত, অস্বাভাবিক ও অনৈতিক’ আখ্যা দেয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর আট মাস পার হলেও সড়কবাতির নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি চসিক।

সূত্র জানায়, গত বছর আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের পাশাপাশি তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী হামলা ও গুলি চালায়। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৪ আগস্ট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা অভিযোগ করেন– আন্দোলন চলাকালে ৩ থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সড়কবাতি নিভিয়ে অনিরাপদ পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়। অন্ধকারে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও গুলি চালিয়ে অনেক হতাহত করা হয়। সড়কবাতি নেভানোতে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন নেতারা।

পরে চসিক গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন, চসিকের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, স্থানীয় বাসিন্দাসহ ১৬ জনের বক্তব্য নেয়। এতে আন্দোলন চলাকালে তিন দিন বাতি নেভানোর সত্যতা মেলে। তবে কার নির্দেশে নেভানো হয়েছিল তা খতিয়ে দেখতে গিয়ে তদন্ত কমিটি জানতে পারে, চসিকের হাতে বাতির সার্ভারের নিয়ন্ত্রণই নেই! যে সেন্ট্রাল লাইটিং সার্ভার থেকে বাতিগুলো জ্বালানো-নেভানো হয়, তা তিন বছর আগে প্রকল্পের কাজ করা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই নিয়ন্ত্রণ করছে। পরে বাতি নেভানোর জন্য সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশকে দায়ী করে প্রতিবেদন দেয় কমিটি। প্রশ্ন তুলে প্রতিবেদনে বলা হয়, কাজ শেষ হওয়ার পরও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সেন্ট্রাল সার্ভার পরিচালনায় যুক্ত থাকা কমিটির কাছে অস্বাভাবিক, নিয়মবহির্ভূত ও অনৈতিক প্রতীয়মান হয়েছে। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশ দায় এড়াতে পারেন না।

গত ১৫ ডিসেম্বর ঝুলন কুমার দাশকে চাকরিচ্যুত করে চসিক। এর আগে ২৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী শাহীন উল ইসলাম চৌধুরীকে বরিশাল সিটি করপোরেশন এবং সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ হাশেমকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে বদলি করা হয়।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ট্রেড ম্যাজিস্টিক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এম মাহবুব হোসাইন বলেন, ‘অনেক আগে আমরা সার্ভার বুঝিয়ে দিয়েছি। না দিলে এতদিন তারা কীভাবে ব্যবহার করছে? তবে পাঁচ বছরের ওয়ারেন্টি থাকায় কোনো ত্রুটি দেখা দিলে সহায়তা করছি।’ 

ঝুলন কুমার দাশ বলেন, ‘প্রকল্পের ওয়ারেন্টি পিরিয়ড পাঁচ বছর এখনও শেষ হয়নি। তাই বাতির সার্ভারের নিয়ন্ত্রণ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের হাত থেকে বুঝে নেওয়া হয়নি।’
চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) ফরহাদুল আলম সমকালকে বলেন, ‘সড়কবাতির সার্ভার এখনও কীভাবে ঠিকাদারের কাছে, তা খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হবে।’

আরও পড়ুন

×