কুমিল্লায় ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত তিনজনই পথশিশু

ছবি: ফাইল
কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫ | ০২:৫৩ | আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫ | ১২:৫৪
কুমিল্লায় ট্রেনে কাটা পড়ে তিন কিশোর নিহত হয়েছে। বুধবার ভোরে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল সড়কের বুড়িচং উপজেলার মাধবপুরে চট্টগ্রামগামী লাইনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তারা রেলের ছাদ থেকে নিচে পড়ে মারা যেতে পারে বলে রেলওয়ে পুলিশের ধারণা। মারা যাওয়া তিন কিশোরই সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু। কুমিল্লাসহ বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশনে ঘুরে বোতলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র কুড়াতো তারা।
সন্ধ্যায় সাইফুল ইসলাম নামে একজনের পরিচয় নিশ্চিত করেছে পুলিশ। সে দেবিদ্বার উপজেলা সদরের বানিয়াপাড়া এলাকার মোখলেছুর রহমানের ছেলে। তিন কিশোরের মরদেহ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
রেলওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, তিন কিশোর ট্রেনের ছাদ থেকে নিচে পড়ে নাকি রেল সড়কে হাঁটার সময় কাটা পড়ে নিহত হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সাইফুলের বাবা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার তাঁর ছেলেসহ অন্যরা বোতল কুড়ানোর কথা বলে কসবা স্টেশনে গিয়েছিল। নিহত সাইফুলের মা-বাবা সেখানে রেলস্টেশন পরিচ্ছন্নতা কাজের পাশাপাশি বোতল কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। নিহত অপর দু’জনের মধ্যে একজনের নাম তুহিন বলে জানা গেলেও অন্যজনের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।
গতকাল সকাল ৯টায় বুড়িচং উপজেলার মাধবপুর রেললাইনে গিয়ে দেখা গেছে, রেলের স্লিপার ও লাইনের ওপর ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। বেশ কয়েক টুকরা টিশার্ট ও দুই জোড়া জুতা পড়ে আছে সেখানে। মাধবপুর এলাকায় ১৬২ নম্বর পিলারের কাছ থেকে সাইফুলসহ তিন কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মাধবপুর গ্রামের বাসিন্দা ইজিবাইক চালক শাহেদ মিয়া বলেন, আমি সকাল ৬টার দিকে রেললাইনের পাশে হাঁটতে আসি। এ সময়ে এসে দেখি একজনের মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে আর দু’জনের পা বিচ্ছিন্ন। যাদের পা বিচ্ছিন্ন হয়েছে, তাদের মধ্যে একজন তখনও জীবিত ছিল। সে আমার কাছে পানি চায়। কিন্তু গ্রাম দূরে হওয়ায় সে সময় পানি আনার কোনো সুযোগ ছিল না। এর মধ্যেই সে মারা যায়।
কুমিল্লা রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ছেলের মরদেহের সামনে মোখলেছুর রহমান বলেন, তিন ছেলের মধ্যে সাইফুল সবার বড়। মঙ্গলবার দুপুরে বোতল কুড়াতে কসবা স্টেশনে যাওয়ার কথা বলে সে বাসা থেকে বের হয়। রাতেই ফেরার কথা ছিল।
দেবিদ্বারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোখলেছুর রহমান দীর্ঘ দিন ধরেই শহরে থাকেন। বাড়িতে ভিটেমাটি না থাকায় স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে থাকেন। ছেলের লাশ দাফন করার মতো জায়গা নেই। তাই রেলওয়ে পুলিশকে বলেন, লাশটি যেন সরকারিভাবে দাফন করা হয়। সাইফুলের মা আসমা বেগম জানান, ছেলেটা রাজমিস্ত্রির কাজ করত। এক সময় খারাপ ছেলেদের সঙ্গে মিশে খারাপ হয়ে যায়।
কুমিল্লা রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই সোহেল মোল্লা জানান, বৃহস্পতিবার সকালে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে তাদের ময়নাতদন্ত করা হবে।
- বিষয় :
- কুমিল্লা
- ট্রেনে কাড়া পড়ে নিহত