ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

লিচুর ফলনে এমন বিপর্যয় ৬০ বছরেও দেখেননি চাষি

লিচুর ফলনে এমন বিপর্যয় ৬০ বছরেও দেখেননি চাষি

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার বাঁশেরবাদা এলাকায় একটি লিচু বাগানে গুটির পরিবর্তে গাছ নতুন পাতায় ভরে গেছে। একটি গাছে গুটি এলেও তা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম (ইনসেটে) সমকাল

 এ বি এম ফজলুর রহমান, পাবনা

প্রকাশ: ০২ মে ২০২৫ | ২৩:৩৩

পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া গ্রামের চাষি নুরুল ইসলাম। ৯৬ বিঘা জমিতে লিচু বাগান রয়েছে তাঁর। গত বছর মুকুল এলে বিক্রি হয়েছিল ৭৮ লাখ টাকায়। এবার ১ টাকায়ও বিক্রি করতে পারেননি। তাঁর ভাষ্য, আত্মীয়স্বজনকে দেওয়ার মতো লিচুও নেই। ঈশ্বরদীর বাশেরবাদা গ্রামের চাষি আবুল কালাম আজাদ বলছিলেন, ‘আমার ৬০ বছরের জীবনে বাগানের গাছে এত কম লিচু দেখিনি।’
লিচু উৎপাদনের জন্য খ্যাতি রয়েছে পাবনার ঈশ্বরদী ও সদর উপজেলার। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয় ফলটি। চলতি মৌসুমে লিচুর রাজধানীখ্যাত ঈশ্বরদীতে ফলনে বিপর্যয় ঘটেছে।
বুধবার সদর ও ঈশ্বরদী উপজেলার অন্তত ১৫টি লিচু বাগান ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ গাছে গুটি বা মুকুল নেই। যেসব গাছে গুটি আছে, তা সংখ্যায় খুব কম। আগে একটি থোকায় ৫০-৬০টি লিচু থাকলেও এবার আছে পাঁচ-সাতটি। গাছে শুধু নতুন পাতা। চাষিরা আক্ষেপ করে বলেছেন, লিচুর ফলনে এমন বিপর্যয় আগে দেখেননি।
এর কারণ হিসেবে রূপপুর পারমাণবিক বিদুৎকেন্দ্রকে দুষছেন কিছু চাষি, বাগান মালিক ও জনপ্রতিনিধি। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈরী আবহাওয়াসহ কয়েকটি কারণে এলাকার লিচুগাছে এবার ফলন কমেছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে, চলতি বছর পাবনায় ৪ হাজার ৭৭৮ হেক্টর জমির বাগানে লিচুগাছ রয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৬ হাজার ৭৯০ টন। এ লক্ষ্য অর্জন হবে না বলে আশঙ্কা করছেন কৃষিবিদ ও বাগান মালিকরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাবনার লিচুর সুনাম সারাদেশে। বাগান করে অনেকেই লাভবান হয়েছেন। এবারও ভালো ফলনের আশা করছিলেন তারা। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেন বাগান মালিকরা। সদর উপজেলার দাপুনিয়া, মাধাপুর, নাজিরপুর, ঈশ্বরদীর আওতাপাড়া, সিলিমপুর, সাহাপুর, রূপপুর, বক্তারপুর, জয়নগর, রূপপুর, চররূপপুর, তিনগাছা, বাঁশেরবাদা এবং আটঘরিয়া ও চাটমোহরে শত শত বিঘা বাগানে সারি সারি লিচু গাছ রয়েছে।
এরই মধ্যে জেলার বাগানগুলোর গাছে লিচুর মুকুল ও গুটি সেভাবে আসেনি, নতুন পাতায় ছেয়ে গেছে বাগান। কৃষি বিভাগ ও চাষিরা জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় এবার এক-দশমাংশ গাছে মুকুল ও গুটি এসেছে, ৯০ শতাংশে আসেনি। গত বছর ৩০ শতাংশ গাছে মুকুল ছিল। এতে হতাশ বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। যেসব গাছে কিছু গুটি আছে, সেগুলোর পরিচর্যা করছেন তারা। পানি, সেচসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখছেন।
আওতাপাড়া গ্রামের চাষি টুটুল হোসেন বলেন, পাবনা শহর থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে যেতে সড়কের দুই পাশে অনেক লিচু বাগান রয়েছে। পাবনার অংশে যত বাগান আছে, সেখানে কিছু লিচুর মুকুল এলেও রূপপুরের দিকে শুধু নতুন পাতা। ঈশ্বরদীর ছলিমপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. বাবু মিয়ার ভাষ্য, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের জন্যই এ ফলন বিপর্যয়। কয়েক বছর ধরে লিচুর ফলন কম হচ্ছে। চলতি মৌসুমে ফলনে স্মরণকালের ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটেছে।
এবার মুকুল আসার সময় ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যাপক বৃষ্টি হওয়ায় ফলন অস্বাভাবিক কম হয়েছে বলে জানান পাবনা খামারবাড়ির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রামাণিক। তিনি বলেন, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র এ জন্য দায়ী নয়।
একই ধরনের কথা বলেছেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ নাজমুল 
ইসলাম। তিনি বলেন, বৈরী আবহাওয়া, পরাগায়ণনে জটিলতা ও বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবার লিচুর মুকুল ও গুটি কম হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে এ ফলন বিপর্যয়ের কোনো সম্পর্ক নেই।

আরও পড়ুন

×