চট্টগ্রাম বন্দরে ৮০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ আসছে
বিশ্বমানের বন্দর করতে আনা হবে বিশ্বসেরা অপারেটর

ফাইল ছবি
বিশেষ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৫ | ০১:০৭ | আপডেট: ০৯ মে ২০২৫ | ০৭:৩৯
চট্টগ্রামের পতেঙ্গার লালদিয়ার চরে বন্দরের প্রস্তাবিত টার্মিনালে ৮০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে নেদারল্যান্ডসের কোম্পানি এপিএম টার্মিনালস। এ ছাড়া বন্দরের বে টার্মিনালে দুই বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে দুটি বিদেশি কোম্পানি। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে লালদিয়ার চর ও বে টার্মিনাল এলাকা পরিদর্শন শেষে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী।
বিশ্বমানের বন্দর করতে আনা হবে বিশ্বসেরা অপারেটর। এই বে টার্মিনালে ২৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে এটি চালু করার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
বন্দর পরিদর্শন শেষে বিকেলে নগরীর একটি হোটেলে শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের সঙ্গে মতবিনিময় করেন বিডা চেয়ারম্যান। এ সময় ব্যবসায়ীরা বন্দরের বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানালেও গ্যাস, বিদ্যুৎ সংকটে উৎপাদন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন। ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য সামাল দেওয়ার মতো সড়ক ব্যবস্থাপনাও গড়ে ওঠেনি বলে জানান তারা। পরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেন আশিক চৌধুরী। এসব অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপপ্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম
উপস্থিত ছিলেন।
নতুন বিনিয়োগ প্রসঙ্গে
আশিক চৌধুরী বলেন, ‘নেদারল্যান্ডসের এপিএমের সদরদপ্তরে গিয়েছিলাম। তারা বিভিন্ন দেশে পোর্ট অপারেট করে। এখানে একটি গ্রিন পোর্ট হবে। এই পোর্টটি করতে তাদের ৮০০ মিলিয়ন ডলারের মতো লাগবে। এর পুরাটাই ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট (এফডিআই) হিসেবে বাংলাদেশে আসবে, এখানে সরকার ১ টাকাও দিচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের এফডিআই নম্বরটা খুবই ছোট। আমাদের প্রকৃত এফডিআই প্রতি বছরই ৪০০, ৫০০, ৬০০, ৭০০ মিলিয়নের বেশি আসে না। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে এফডিআইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হবে। এর মাধ্যমে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে।’
বিদেশি অপারেটর নিয়ে যা বললেন
বিদেশি অপারেটর দিয়ে টার্মিনাল পরিচালনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের বন্দরে সক্ষমতা সীমিত। এই সীমিত সক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার ও সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থাপনা করতে হবে। বিশ্বের শীর্ষ বন্দর পরিচালনাকারীদের আনার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বন্দরের সর্বোত্তম ব্যবহার। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে করালে এখানে পরিচালন সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব।’
নৌবাহিনীর ঘাঁটি ও নিরাপত্তা ইস্যু
এনসিটি টার্মিনালে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ হলে পাশে থাকা নৌবাহিনীর ঘাঁটির নিরাপত্তা প্রসঙ্গে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, ‘ডিপি ওয়ার্ল্ড ইন্ডিয়ায় পাঁচটা পোর্ট চালায়, পাকিস্তানে একটি পোর্ট চালায়। তারা আরও ৬০ থেকে ৭০টি দেশে পোর্ট চালায়। তো কারও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ হয় না, আমাদের এখানে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়। এটি দুর্ভাগ্যজনক। নৌবাহিনীর সক্ষমতা ও দক্ষতা নিয়ে আমাদের কোনো প্রশ্ন নেই। এটা নিয়ে একেবারে ভয় পাই না।’
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময়
ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তারা গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কথা তুলে ধরেন। একটি নতুন কারখানা চালু করতে গেলে ধাপে ধাপে কীভাবে হয়রানি করা হয়, তাও জানান তারা। নতুন বিনিয়োগ আনতে হলে সড়ক অবকাঠামো নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে বলেও মন্তব্য করেন ব্যবসায়ীরা। জবাবে বিডা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে যারা ব্যবসা করেন, তারা অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। আমরা সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করছি। যদিও গ্যাস একটি বড় সমস্যা। সরবরাহে বড় সমস্যা। এই গ্যাস সরবরাহ নিয়ে অনেক কথাবার্তা চলছে। বুধবার জ্বালানি উপদেষ্টা বলেছেন, পাওয়ার জেনারেশনে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে কারখানায় বাড়াবেন। আমার মনে হয়, এটাই যথেষ্ট নয়, আমাদের আরও অনেক কিছু করতে হবে।’
বন্দর ঘিরে মহাপরিকল্পনা
চট্টগ্রাম বন্দর ঘিরে প্রধান উপদেষ্টার আলাদা স্বপ্ন ও মহাপরিকল্পনা আছে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ড. ইউনূসের মতো
প্রো-বিজনেস হেড অব গভর্নমেন্ট আর আসেনি। উনার মূল ফোকাস হচ্ছে, বাংলাদেশে বিজনেস আনতে হবে এবং বাংলাদেশে অসংখ্য জব তৈরি করতে হবে।’
সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়
সব শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিডা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এ সময় পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে করা বিদেশি বিনিয়োগে মন্থর গতি, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আট লেন না হওয়া, বন্দর ও কাস্টমসের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন। জবাবে আশিক চৌধুরী বলেন, ‘বন্দর ও কাস্টমসে যে অনিয়ম ও দুর্নীতি আছে, তা পরিবর্তন করতে হলে সবার সহযোগিতা লাগবে। পিসিটি কর্তৃপক্ষ বিগত সরকার থেকে যথাযথ সময়ে সহায়তা পায়নি বলে কার্যক্রম পরিচালনায় দেরি হচ্ছে। ঢাকা প্রশাসনিক রাজধানী হলেও চট্টগ্রামকে সত্যিকারের বাণিজ্যিক রাজধানী করতে চাই আমরা। আর চট্টগ্রামের বন্দরকে
করতে চাই বিশ্বমানের বন্দর। এটাই আমাদের মিশন ও ভিশন।’
- বিষয় :
- বিনিয়োগ