কক্সবাজারে চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা নিহত

মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান
বিশেষ প্রতিনিধি ও কক্সবাজার অফিস
প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২০ | ০৫:১৭ | আপডেট: ০১ আগস্ট ২০২০ | ০৬:২৫
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় একটি চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে সাবেক এক সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার রাত সাড় ১০টার দিকে উপজেলার বাহারছড়ায় মেরিন ড্রাইভ সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান (৩৬) যশোরের ১৩ বীর হেমায়েত সড়কের সেনানিবাস এলাকার প্রয়াত এরশাদ খানের ছেলে। তিনি বিএমএ লং কোর্সের ৫০তম ব্যাচের কর্মকর্তা। বছর দু'য়েক আগে তিনি অবসরে যান। ঢাকায় উত্তরায় তিনি থাকতেন। তার এক ভাই ও এক বোন রয়েছে।
পুলিশ বলছে, মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ তার ব্যাক্তিগত গাড়িতে করে একজন সঙ্গীসহ টেকনাফ থেকে কক্সবাজার যাচ্ছিলেন। মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া চেকপোস্টে পুলিশ গাড়িটি থামিয়ে তল্লাশি করতে চাইলে তিনি বাধা দেন। এই নিয়ে তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে রাশেদ তার কাছে থাকা পিস্তল বের করলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে রাশেদ গুরুতর আহত হন। পরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন সমকালকে জানান, চেকপোস্টে পুলিশ গাড়িটি থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু গাড়ির আরোহীদের একজন পিস্তল বের করে পুলিশের ওপর গুলি করার চেষ্টা করেন। আত্নরক্ষার্থে সে সময় পুলিশ গুলি চালায়। এতে ওই ব্যক্তি মারা যায়।
ঘটনার আগের পরিস্থিতি তুলে ধরে এসপি মাসুদ বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যার পর হিমছড়ি এলাকায় পাহাড়ে গাড়ির আলো বা সার্চ লাইটের মতো কিছু একটা দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা ডাকাতদল বলে সন্দেহ করে। তখন স্থানীয়রা তাদের ধাওয়া করে, তবে না পেয়ে বাহারছড়া পুলিশ ক্যাম্পে ফোন করে বিষয়টি জানায়। তারা জানায়, একদল ডাকাত পাহাড় থেকে নামছে এবং তারা মেরিন ড্রাইভ দিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ যেন ডাকাতদলটিকে ধরে সেজন্য অনুরোধও জানান তারা।
তিনি বলেন, স্থানীয়দের এই তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ চেকপোস্টে গাড়িটি থামানোর চেষ্টা করলেও আরোহীরা প্রথমে গাড়িটি থামাতে চাননি। পরে তারা গাড়ি থামান এবং গাড়ি থেকে একজন পিস্তল হাতে বের হন। গাড়িতে আরও একজন ছিলেন এবং তিনি গাড়ি থেকে নামতে অস্বীকৃতি জানান। তখন তাকে গাড়ি থেকে নেমে হাত উঁচু করে দাঁড়াতে বলা হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তিনি গাড়ি থেকে নামেন। এ সময় তিনি কমব্যাট ড্রেসে ছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি কোমড়ে হাত দেন। ওই সময় গুলির ঘটনা ঘটে।
এসপি জানান, এই ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে, আটক করা হয়েছে দুই জনকে। পুলিশ পিস্তলটি জব্দ করেছে। মেজর (অব.) রাশেদ একটি তথ্যচিত্র ধারণের কাজে এক নারী ও তিন পুরুষ সঙ্গীসহ এক মাস ধরে হিমছড়ির একটি রেস্টহাউসে অবস্থান করছিলেন।
তিনি আরও জানান, চেকপোস্টে গুলির ঘটনার পর হিমছড়িতে যে রেস্টহাউসে মেজর (অব.) রাশেদ অবস্থান করছিলেন সেখানে অভিযান চালানো হয় এবং সেখানে ৫০ পিস ইয়াবা, কিছু গাজা এবং আমদানি করা দুটি মদের বোতল পাওয়া যায়।
এ ঘটনার মাসখানেক আগে পুলিশ ওই এলাকায় ডাকাতদলের কাছ থেকে র্যাব ও বিজিবির পোশাক উদ্ধার করে বলেও জানান এসপি মাসুদ।
এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদের মেরিন ড্রাইভে পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার বিষয়টি তদন্তে একজন উপ-সচিবের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এ ব্যাপারে রাশেদের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য এখনও পাওয়া যায়নি।
- বিষয় :
- সেনা কর্মকর্তা নিহত
- চেকপোস্টে গুলি