ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

রাউজানে চার তরুণের উদ্যোগ

মাটি ছাড়া চাষ

মাটি ছাড়া চাষ

রাউজানের ফতেনগর এলাকায় মাটিবিহীন পদ্ধতিতে সবজির চাষ-সমকাল

আহমেদ কুতুব, রাউজান থেকে ফিরে

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২০ | ১২:০০ | আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২০ | ১৫:০৬

আমেরিকান সবজি রকমেলন। উচ্চবিত্ত মানুষের কাছে এটি খুবই পরিচিত। তবে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষ এই সবজির সঙ্গে খুব একটা পরিচিত নন। বিদেশি এই সবজিটি এখন উৎপাদন হচ্ছে চট্টগ্রামের রাউজানের অজপাড়া নোয়াজিশপুর ইউনিয়নের ফতেনগর গ্রামে। এ ছাড়াও উৎপন্ন হচ্ছে জাপান থেকে বীজ আনা আরেক সবজি ব্রোকলি। একই সঙ্গে পাশ্চাত্যের সবজি ক্যাপসিকামের (কালার) সঙ্গে বারোমাসি টমেটো ও শসার চাষাবাদ হচ্ছে। পুরো চাষাবাদ হচ্ছে মাটিবিহীন এবং বিদেশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে।

পরিত্যক্ত ঝোপঝাড় ও খিল মিলে তিন হাজার বর্গফুট জমিতে আধুনিক প্রযুক্তির আওতায় পুরো প্রকল্পটি তৈরি করা হয়েছে। প্রকল্পের চারদিক জাল ও প্লাস্টিক দিয়ে ঘেরা। আকাশের দিকটাও মুড়িয়ে ফেলা হয়েছে বাঁশের তৈরি ঘরের মতো করে প্লাস্টিকের ছাউনি দিয়ে। চারদিক ইটের প্রাচীরে ঘেরা। ফ্লোর করা হয়েছে কংক্রিটের ঢালাইয়ে। প্রকল্পের ভেতর প্লাস্টিকের পাইপের মধ্যে বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছিদ্র করে কোকোবিটের মাধ্যমে চাষাবাদ করা হচ্ছে রকমেলন, ব্রোকলি, ক্যাপসিকাম, শসা ও টমেটো। সবজির এক পাশে আবার চাষ হচ্ছে অ্যাকুয়ারিয়াম ফিশের। দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত জমিটি প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এখন পরিণত হয়েছে এক টুকরো স্বর্ণে। সেই জমিতে বুনন হচ্ছে চার তরুণের স্বপ্ন। পাঁচ  লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি তৈরি করা হলেও দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে সবজি বিক্রি করে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা আয় করে ফেলেছেন তারা।

২০১৯ সালে সামান্য পুঁজি নিয়ে চার বন্ধু তাপস রায়, বিকাশ চৌধুরী, বাপ্পী চৌধুরী ও অমর নাথ প্রকল্পটি শুরু করেন। প্রথম বছর মাটিবিহীন চাষাবাদের কলাকৌশল অর্জন করতেই কেটে গেছে। প্রকল্পের প্রধান কর্ণধার তাপস রায় বলেন, 'প্রথম বছর পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করতেই আমাদের সময় কেটে গেছে। উন্নত প্রযুক্তিতে চাষাবাদের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি; শিখেছি কলাকৌশল। এ বছর থেকে পুরোদমে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করছি। এখন টমেটো চাষ চলছে। এর আগে রকমেলন, ব্রোকলি, ক্যাপসিকাম কালার ও শসার চাষ করেছিলাম। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছি; আমরা সফল।'

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত জায়গাটি জঙ্গল, ঝোপঝাড়ে ভরে ছিল। আট গ া জায়গায় কয়েকটি কলাগাছ ছাড়া আর কিছুই ছিল না। তাই মাটিবিহীন চাষাবাদের জন্য এ জায়গাতেই প্রকল্পটি তৈরি করি। তখনও সফলতা অর্জন নিয়ে খুবই চিন্তিত ছিলাম। কিন্তু একের পর এক সবজি চাষ করে ভালো ফলন পেতে শুরু করি। স্থানীয় বাজারে সবজিগুলো বিক্রি করে আয়ও ভালো হয়েছে। আরও জানান- সিলেট, গাজীপুর থেকে বীজ ও সবজি চারা এনে চাষ করছেন তারা।

তাপস জানান, এ প্রযুক্তি এখন অনেকের কাছে প্রেরণা জোগাচ্ছে। তাদের দেখে অনেকে নতুন প্রকল্প তৈরির চিন্তাভাবনাও করছেন। তাদেরই একজন রাউজানের পূর্ব গুজরার বাসিন্দা লেখক শওকত বাঙালি। তিনি বলেন, গ্রামে বিদেশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাটিবিহীন সবজি চাষাবাদ হচ্ছে জানতে পেরে প্রকল্পটি বেশ কয়েকবার দেখতে যাই। আয়-ব্যয়সহ সার্বিক তথ্যউপাত্ত জেনে বৃহৎ আকারে প্রকল্প তৈরির পরিকল্পনা করছি। এই চাষাবাদ পদ্ধতির ব্যাপক প্রসার ঘটাতে পারলে দেশে চাষাবাদের অযোগ্য জায়গা আর খালি থাকবে না। সবজির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রপ্তানিও করা যাবে।

ফতেনগর গ্রামে উঁচু-নিচু জায়গায় মাটি ভরাট করে তৈরি করা প্রকল্পের ভেতর তিনটি পানির হাউস রয়েছে। সেখান থেকে পাইপের মাধ্যমে সবজির চারায় প্রয়োজন অনুযায়ী পানি সরবরাহ করা হয়। পাশের পুকুর থেকে পাম্প দিয়ে পানি সংগ্রহ করা হচ্ছে।

প্রকল্পের আরেক মালিক বিকাশ চৌধুরী বলেন, 'আমরা এখানে উন্নতমানের সবজি চাষ করছি। একটি সবজি চাষ করতে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগে। স্থানীয় বাজারে ক্যাপসিকাম কেজিতে ২০০ টাকা, ব্রোকলি প্রতি পিস ৮০ থেকে ১০০ টাকা, প্রতি কেজি রকমেলন ২০০ থেকে ২২০ টাকা, শসা ৩০ থেকে ৫০ টাকা এবং টমেটো ৩০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়।'

রাউজান উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সনজীব কুমার সুশীল জানান, 'তাপস রায় পাহাড়তলী কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে উন্নত সবজি চাষাবাদ করছেন। তার এক ভাই থাইল্যান্ডে থাকার সুবাদে তিনি এ প্রযুক্তিতে সবজি চাষে আগ্রহী হন। আমরা সিলেট থেকে চারা এনে দিয়েছি। তাকে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।'

আরও পড়ুন

×