ঢাকা সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

সরকারি বই পেতে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ

সরকারি বই পেতে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ

সরকারি বইয়ের ছবি - ফাইল

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২২ | ০৯:৪২ | আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২২ | ০৯:৪২

বিনামূল্যের সরকারি বই বিতরণে বগুড়ার শেরপুরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান ও প্রতিনিধি শিক্ষকদের জিম্মি করে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। নির্ধারিত সময়ে বই না দেওয়া ও বিভিন্ন হয়রানির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছেন তারা। এতে করে বিদ্যালয়ের প্রধান ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। ঘটনাটির তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়ার জন্য ১ জানুয়ারি বই উৎসব পালন করা হয়ে থাকে। তবে বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে এবার উৎসব পালন করা না হলেও নির্ধারিত দিনেই বই বিতরণ হয়। এজন্য বিদ্যালয়গুলোতে নতুন বই পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ৩০ ডিসেম্বর ও ৩১ ডিসেম্বর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে উপজেলার ২৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বই বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৭৩টি, ৪৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৬৫টি কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। কিন্তু বিনামূল্যের সরকারি বই বিতরণে বিদ্যালয় প্রধান ও তাদের প্রতিনিধি শিক্ষকদের জিম্মি করে ঘুষ নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

অভিযোগে জানা যায়, সরকারি বই পেতে প্রতিটি কিন্ডারগার্টেনকে ১২০০, মাধ্যমিক স্কুল ৫০০ ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো থেকে ৩০০ টাকা করে আদায় করা হয়। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের নিয়োগ করা লোকদের কাছে নির্ধারিত ঘুষের টাকা দিলেই কেবল বই দেওয়া হয়। টাকা না দিলে কোনো বই পাওয়া যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের দাবিকৃত টাকা না দিলে হয়রানির শিকার হতে হবে বলেও বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখানো হয়। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই ঘুষের টাকা পরিশোধ করে বই নিয়েছেন অনেকে। এই টাকা আদায়কারী হিসেবে তোফাজ্জল ও নাজমুল ইসলাম নামের দুই ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিয়েছেন সংশ্নিষ্টরা।

শিক্ষক আসলাম হোসেন, জাহিদুল ইসলামসহ একাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, 'কয়েক বছর ধরেই নতুন বই নেওয়ার সময় তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে। প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হয় না। এছাড়া শিক্ষা অফিসে তাদের অনেক কাজ থাকে। তাই বেশিকিছু বললে বিভিন্ন সময় হয়রানির শিকার হতে হয়। অফিসটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি আমরা।'

সরকারি বই নেওয়ার সময় টাকা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তোফাজ্জল ও নাজমুল ইসলাম কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে ঘটনাটি সম্পর্কে সাক্ষাতে বিস্তারিত জানাবেন বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তারা।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিনা খাতুন বলেন, 'বই বিতরণের কাজটি করে মাধ্যমিক অফিস। তাদের শিক্ষকরা টাকা দিয়ে বই নিয়ে থাকলে যাদের সম্পর্কে অভিযোগ তারাই ওই বিষয়ে জবাব দেবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।'

তবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজমুল ইসলাম নিজেকে নির্দোষ দাবি করে সাংবাদিকদের বলেন, 'কে বা কারা টাকা নিয়েছেন সেটি বলতে পারব না। এই টাকা আদায়ের সঙ্গে তার অফিসের কেউ জড়িত নয়। এছাড়া বই নেওয়ার সময় টাকা আদায়ের বিষয়ে কেউ অভিযোগও করেননি। তবে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান এই শিক্ষা কর্মকর্তা।'

আরও পড়ুন

×