ঢাকা সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

বগুড়ায় গুলিবিদ্ধ স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা লাইফ সাপোর্টে

বগুড়ায় গুলিবিদ্ধ স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা লাইফ সাপোর্টে

নাজমুল হাসান অরেঞ্জ

বগুড়া ব্যুরো

প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২২ | ১৩:৩৪

বগুড়া শহরের মালগ্রামে গত রোববার রাতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই নেতা গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। দুই নেতার মধ্যে নাজমুল হাসান অরেঞ্জের (২৮) অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। অপর নেতা মিনহাজ হোসেন আপেল ঝুঁকিমুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এ ঘটনায় রোববার রাতেই গুলিবিদ্ধ নেতা অরেঞ্জের স্ত্রী স্বর্ণালী আক্তার বাদী হয়ে স্থানীয় সদর থানায় মামলা করেছেন। বগুড়া সদর থানার ওসি সেলিম রেজা জানিয়েছেন, অরেঞ্জ ও আপেলের ওপর গুলিবর্ষণকারীদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তা ছাড়া এ ঘটনায় মামলাও হয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে চলছে অভিযান। খুব শিগগির তাদের ধরা যাবে বলে আশা করেন তিনি।
শজিমেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মিলটন সাহা জানান, অরেঞ্জের মস্তিস্কে গুরুতর জখম হয়েছে। শরীরের অনেক অঙ্গ ঠিকমতো কাজ করছে না। এ কারণে তাকে লাইফ সাপোর্টে নিতে হয়েছে।
এক যুগে অর্ধশত নেতাকর্মী খুন :দলীয় সূত্র এবং পুলিশের রেকর্ড অনুযায়ী, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর থেকে গত ১২ বছরে আধিপত্য বিস্তার ও স্বার্থগত দ্বন্দ্ব-বিরোধে বগুড়ায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের অর্ধশত নেতাকর্মী খুন হয়েছেন। এর মধ্যে ৯ জন স্বেচ্ছাসেবক লীগের।
তাদের মধ্যে চারজন নিহত হয়েছেন ২০২০ সালের ৪ এপ্রিলের পর থেকে।
যা ঘটেছিল রোববার রাতে :বগুড়া স্টেডিয়াম পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাব-ইন্সপেক্টর খোরশেদ ইসলাম জানান, অরেঞ্জ ও আপেল গত রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মালগ্রাম ডাবতলার মোড়ে বসে কথা বলছিলেন। এ সময় মালগ্রাম বেলতলা মোড় থেকে ৪-৫টি মোটরসাইকেলে এক দল যুবক ডাবতলা মোড়ের দিকে যায়। তাদের ভেতর থেকে দু'জন অরেঞ্জ ও আপেলকে লক্ষ্য করে পরপর কয়েকটি গুলি ছোড়ে। দুটি গুলি অরেঞ্জের বাম চোখের নিচে লাগে। আর তার সঙ্গে থাকা আপেলের গুলি লাগে পেটে। দু'জনকে প্রথমে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাদের শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কে এই অরেঞ্জ ও আপেল :স্বেচ্ছাসেবক লীগ বগুড়া জেলা কমিটির প্রচার সম্পাদক মশিউর রহমান জানান, গুলিবিদ্ধ নাজমুল হাসান অরেঞ্জ সংগঠনের একই কমিটির সাহিত্য ও সংস্কৃৃতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক। মিনহাজ হোসেন আপেল একই সংগঠনের স্থানীয় ওয়ার্ড কমিটির নেতা। অরেঞ্জ মালগ্রাম দক্ষিণপাড়ার রেজাউল ইসলামের ছেলে। আর আপেল একই মহল্লার ডাবতলা এলাকার মৃত মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে।
গুলি করেছে 'কাছের লোক' :এ ব্যাপারে সমকালের সরেজমিন অনুসন্ধানের সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক ব্যক্তি জানান, অরেঞ্জ ও আপেলের ওপর যারা গুলি চালিয়েছে, তারা কিছুদিন আগেও একই সঙ্গে ওঠাবসা করত এবং সবাই সংগঠনের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আলী শান্তর 'কাছের লোক' হিসেবে পরিচিত। কিন্তু গত রোজার ঈদের দু'দিন আগে স্থানীয় একটি মেসে স্বেচ্ছাসেবক লীগের স্থানীয় নেতা সুমন মাদক ও জুয়া খেলা নিয়ে বিরোধের জের ধরে রনি নামে একজনকে ছুরিকাঘাত করে। এর পর তাদের মধ্যে গ্রুপিং শুরু হয়। এক গ্রুপের নেতৃত্বে আসেন অরেঞ্জ, আপেল, মনির ও রবিন। তাদের বিরোধিতায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের অপর নেতা রাসেল ও তার ভাই রাসানী এবং সুমনের নেতৃত্বে আরেক গ্রুপ দাঁড়িয়ে যায়।
সদর থানার ওসি সেলিম রেজা জানান, প্রাথমিকভাবে তারা জানতে পেরেছেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধের জের ধরে রোববার রাতে অরেঞ্জ ও আপেলকে গুলি করা হয়েছে।
বিরোধ দীর্ঘ দিনের :মালগ্রামের প্রবীণ এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, মাদক বেচাকেনাসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দল ভারি রাখতে ওই এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই গ্রুপের বিরোধ দীর্ঘ দিনের। এর আগে মালগ্রাম ডাবতলা এলাকাতেই ২০২০ সালের ১৮ জুলাই স্বেচ্ছাসেবক লীগ বগুড়া জেলা কমিটির প্রচার সম্পাদক রোকনুজ্জামান রনি প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে খুন হন।
সর্বশেষ গত শুক্রবার থার্টিফার্স্টের রাতে অরেঞ্জ ও আপেল গ্রুপের সদস্যরা ডাবতলা এলাকায় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে প্রতিপক্ষ রাসেলসহ তার গ্রুপের লোকজন এসে ধমকাধমকি করে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে নতুন করে রেষারেষি তৈরি হয়।
তবে স্বেচ্ছাসেবক লীগ বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি সাজেদুর রহসান সাহিন দাবি করেছেন, তাদের সংগঠনে কোনো অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নেই। তিনি বলেন, 'যারা আমাদের দুই ভাইকে (অরেঞ্জ ও আপেল) লক্ষ্য করে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি চালিয়েছে, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে।'

আরও পড়ুন

×