ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

পোড়াদহের মেলা ঘিরে গ্রামে গ্রামে জামাই উৎসব

পোড়াদহের মেলা ঘিরে গ্রামে গ্রামে জামাই উৎসব

বগুড়া ব্যুরো

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ০৭:২৩ | আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ০৭:৩৬

হরেক পদের মাছ, বাহারি ফল আর মুখরোচক মিষ্টি- কোনটি নেই! ছেলেবুড়ো, তরুণ-তরুণী আর দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসা নারী-পুরুষের ভিড়ে প্রতিবারের মতো এবারও জমে উঠেছে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা। 

প্রতি বছর মাঘের শেষ বুধবার বসে মেলাটি। একদিনের এই মেলাকে ঘিরে আশপাশের গ্রামগুলোতে জামাই উৎসব চলে তিন দিন। 

মেলায় সবচেয়ে বড় আকর্ষণ থাকে বিভিন্ন প্রজাতির বড় মাছ। যে কারণে অনেকের কাছে পোড়াদহের মেলাটি মাছের মেলা হিসেবেও পরিচিত। 

কথিত আছে প্রায় দেড়শ’ বছর আগে পোড়াদহ এলাকায় এক হিন্দু সন্ন্যাসীর সাধনায় একটি মরা বটগাছ আবার জীবিত হয়। এ কারণে ওই স্থানটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিশেষ পূজনীয়। আর ওই ঘটনাটিকে স্মরণ করতেই প্রতি বছর মেলার আয়োজন করা হয়।

ঐতিহ্যবাহী প্রতি বছর মেলায় বড় সাইজের বাঘাইড় মাছ উঠলেও সেটি মহাবিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় এবার সেটি বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। এ কারণে এই প্রথম মেলায় বাঘাইড় মাছ দেখা যায়নি। 

তবে যথারীতি রুই, কাতলা, চিতল, বোয়াল, আইড়, সিলভার কাপ ও কার্পসহ সামুদ্রিক নানা জাতের মাছ উঠেছে। বাঘাইড় মাছ না ওঠায় এবার অন্য মাছের দাম চড়েছে। এবারের মেলায় সবচেয়ে বড় সাইজের কাতলা মাছের ওজন ২৮ কেজি। প্রতি কেজি ২ হাজার ৫০০ টাকা হিসেবে মাছটির দাম হাঁকা হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। এছাড়া বোয়াল ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি এবং আইড় মাছের দাম চাওয়া হয়েছে ২ হাজার ৫০০ টাকা কেজি।

মাছের এ মেলায় মাছের আকৃতির বড় সাইজের মিষ্টিও বিক্রি হয়। কাতলা মাছের আকৃতির ১২ কেজি ওজনের মিষ্টি এবার সবার নজর কেড়েছে। 

প্রতি কেজি ৪০০ টাকা হিসেবে ওই মিষ্টির দাম চাওয়া হয়েছে ৪ হাজার ৮০০ টাকা। এছাড়া কুল (বরই) এবং কেশরসহ নানা স্বাদের ফলও উঠেছে মেলায়। 

করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার কারণে এবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে মেলা আয়োজনের আনুষ্ঠানিক কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে সেই অনুমতির অপেক্ষায় লোকজন বসে থাকেনি। মেলার দোকানিদের মুখে যেমন মাস্ক দেখা যায়নি তেমনি অধিকাংশ ক্রেতা মানেননি স্বাস্থ্যবিধি। 

বুধবার সকাল ৯টার পর থেকে মেলায় মানুষের আনাগোনা শুরু হয়। 

মেলায় আসা বগুড়ার গাবতলী উপজেলার পাঁচমাইল এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক জানান, মেলা উপলক্ষে তার মেয়ে এবং জামাইসহ নাতি-নাতনিরা এসেছেন। তাদের জন্য তিনি ১০ হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে ৭ কেজি ওজনের একটি আইড় মাছ কিনেছেন। 

আফজাল হোসেন নামে অপর এক ব্যক্তি জানান, তার শ্বশুরবাড়ি সংলগ্ন এ মেলায় তিনি প্রতি বছর আসেন। অন্যান্য বছরের মত এবারও তিনি বিভিন্ন ধরনের ৫ কেজি মিষ্টি কিনেছেন।

বুধবার বেলা ১১টার দিকে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সালাহ উদ্দিন আহমেদ এবং গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রওনক জাহান মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে তা বন্ধের জন্য দোকানিদের নির্দেশ দেন। কিন্তু দোকানিরা সেই নির্দেশনা মানেননি। বরং দুপুর ১২টার পর থেকে মেলায় জনসমাগম আরও বাড়তে শুরু করে। 

পোড়াদহ মেলা আয়োজক কমিটির প্রধান মহিষাবান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, ‘হাট-বাজার যদি চলতে পারে তাহলে মেলা কেন চলবে না।এ মেলাকে ঘিরে এ অঞ্চলের শত শত মানুষের আয়- রোজগার হয়ে থাকে। যে কারণে অনুমতি না পেলেও কেউ বসে থাকেনি।’


আরও পড়ুন

×