ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

জেলেদের পরিবারে কান্না থামছে না

জেলেদের পরিবারে কান্না থামছে না

ছবি: সমকাল

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১১:০০ | আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১১:০১

সাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে মাছ ধরা ট্রলারডুবির ঘটনায় নিহত জেলেদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। 

বুধবার সকালে চারজনের মরদেহ বাগেরহাটের বাড়িতে পৌঁছালে স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এর মধ্যে রহুল হাওলাদার, শহিদুল মল্লিক ও সহিদের বাড়ি কচুয়া উপজেলার বগা গ্রামে। অপরজন আনেয়ার হোসেন বাদলের বাড়ি পাশের গ্রাম আন্ধারমানিকে।

বগা গ্রামের দুই জেলে এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। কেউ ভাই, কেউ সন্তান, কেউ বাবা কিংবা স্বামী হারিয়ে এখন পাগলপ্রায়। কর্মক্ষম সদস্যদের হারিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছে পরিবারগুলো। নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। নিখোঁজদের উদ্ধারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।

বুধবার সকালে বগা গ্রামের নিহত রুহুল আমিনের বাড়িতে প্রবেশ করতেই তার স্বজনদের আহাজারি চোখে পড়ে। রুহুলের আয়ে কোনোমতে জীবন টিকে ছিল তাদের। কর্মক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে মহাসংকটে পড়েছে পরিবারটি।

রুহুলের স্ত্রী রুমিচা বেগম বলেন, ১ ফেব্রুয়ারি রাতে আনিস সরদারের ট্রলারে সাগরে ইলিশ আহরণ করতে যায় স্বামী। শুক্রবার রাতে ঝড়ের কবলে পড়ে তার নিখোঁজের খবর পাই। ১২ বছরের এখলাছ ও আট বছরের ইয়াছিনকে নিয়ে কীভাবে চলব! কীভাবে তাদের পড়াশোনা করাব। 

কোথায় যাব, কার কাছে যাব বলে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় এলাকার অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।

ট্রলারডুবির ঘটনায় রুহুলের প্রতিবেশী আবুবকর মোল্লা এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। তার বাড়িতেও চলছে মাতম। 

আবু বকরের স্ত্রী লামিয়া বেগম বলেন, আড়াই বছরের আয়শা ও তিন মাস বয়সী আবিদ নামের দুটি সন্তান রয়েছে আমাদের। সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে এখনও বাড়িতে ফেরেনি স্বামী। জমিজমাও নেই। অন্যের জমিতে ঘর বেঁধে থাকি আমরা। বাবার বাড়ির আর্থিক অবস্থাও খুবই খারাপ। এখন কোথায় যাব?

আবু বকরের মা হাজেরা বেগম কান্না করতে করতেই বললেন, ছেলের লাশটা যদি পাই, তাহলে বাড়িতে এনে কবর দিতে পারতাম। যত দিন বেঁচে থাকব, কবর দেখেও মনকে বুঝ দিতে পারব। 

শুধু রুহুল ও আবু বকরের পরিবার নয়, নিহত ও নিখোঁজ প্রত্যেকের পরিবারে একই অবস্থা চলছে। তাদের কান্না থামছেই না।

প্রত্যন্ত এলাকার এই গ্রামের বেশির ভাগ মানুষের পেশা সাগরে মাছ ধরা। দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকি নিয়ে মাছ আহরণে গেলেও আর্থিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি তাদের। পেশাগত কাজে সাগরে থাকা অবস্থায় নিহত বা আহত হলে কোনো সহযোগিতাও পান না তারা। দরিদ্র এই পরিবারগুলোর অনেকের বাসস্থানেরও অভাব রয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন সময় যারা নিখোঁজ হয়েছে, তাদের পরিবারগুলোও পায়নি কোনো সহযোগিতা।

বগা গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী ইব্রাহীম আমানী বলেন, যারা মারা গেল, তাদের পরিবারগুলোর সচ্ছলতার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সহযোগিতা চাই। 

নিহতদের পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের জন্য সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়েছেন কচুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা সরোয়ার।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। যারা নিখোঁজ রয়েছেন, তাদের পরিবারকেও সহায়তা দেওয়া হবে।

গত শুক্রবার রাতে সাগরে মাছ ধরার সময় আকস্মিক ঝড়ের কবলে পড়ে সুন্দরবনের দুবলার শুঁটকিপল্লি ও উপকূলীয় এলাকার কয়েকটি ট্রলার ডুবে যায়। এ সময় অনেক জেলে সাঁতরে কূলে উঠতে পারলেও নিখোঁজ হন অন্তত ১০ জেলে। এর মধ্যে বাগেরহাটের বগা গ্রামের এফবি মা-বাবা দোয়া নামে একটি ট্রলারের ১৪ জেলের মধ্যে সাতজন নিখোঁজ হন। এর আগে ২০১৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ঝড়ের কবলে পড়ে এই গ্রামের ১৯ জেলে এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।

আরও পড়ুন

×