ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫

হার না মানা রত্নার জীবিকার উৎস যখন মোটরসাইকেল

হার না মানা রত্নার জীবিকার উৎস যখন মোটরসাইকেল

রতনা বেগম- সমকাল

জামির হোসেন, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ)

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২২ | ০৬:৩৭ | আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২২ | ০৭:১৮

আদম্য ইচ্ছাশক্তি আর কঠোর চেষ্টায় অচলাবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন সাহসী নারী রতনা বেগম। বধূ হয়ে আর দশজন মেয়ের মতো সুখের সংসার জোটেনি তার। জীবনের কঠিন বাস্তবতায় নেমে লড়াই করে চলেছেন সকল প্রতিকূলতা। জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন ভোরে যশোর থেকে নিজেই ৩৫ কিলোমিটার মোটরসাইকেল চালিয়ে যান ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে। সেখানে এক মাংস ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কিছুটা কমে গরুর মাথা ও ভুড়ি কিনে তা আবার বিক্রি করেন যশোরে। সেই লাভের টাকায়ই ১৪ বছর ধরে চলছে মা ও তার একমাত্র ছেলেকে নিয়ে রত্নার সংসার।

যশোর পুলিশ লাইনস টালিখোলা এলাকার মৃত সিদ্দিক সরদারের ছয় মেয়ের মধ্যে রতনা সবার বড়। তার বয়স এখন ৪০ এর বেশি। ১৭ বছর বয়সে রতনার বিয়ে হয়। দেড় বছর পর একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু সংসারে মাদকাসক্ত স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বিয়ের সাত বছর পর স্বামীকে ডির্ভোস দিতে বাধ্য হয়। এর দু’বছর পর বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারে অভাব নেমে আসে। তখন থেকেই রতনা এলাকায় ফেরি করে গরুর মাথা ও ভুড়ি বিক্রির ব্যবসা শুরু করেছিলেন।

সমকালকে রতনা বলেন, বাবার মৃত্যুর পর সংসার চালাতে কাজের সন্ধানে নেমে তিনি দেখতে পান- কিছু নারী যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে গরুর মাথা ও ভুড়ি এনে বাড়ি বাড়ি বিক্রি করছেন। তাদের দেখে রতনাও এ ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু পাঁচ বছর পর ক্যান্টনমেন্টে গরুর মাথা ও ভুড়ি বিক্রির ঠিকাদার ঢাকায় চলে গেলে বিপাকে পড়েন রতনা। তখন তিনি কালীগঞ্জে গিয়ে সাইদুর নামে এক মাংস ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কেনা শুরু করেন। প্রথম পর্যায়ে তিনি যশোর থেকে বাসে চেপে কালীগঞ্জে আসতেন। এতে তার সময়, পরিশ্রম ও অর্থ বেশি ব্যয় হতো। বেচাকেনা করতেও সমস্যা হতো, লাভও হতো কম। তাই দু’বছর পর একটি এনজিও থেকে ১ লাখ টাকা লোন নিয়ে একটি নতুন মোটরসাইকেল কেনেন। সেই থেকে প্রতিদিনই তিনি নিজে মোটরসাইকেল চালিয়ে কালীগঞ্জে গিয়ে ৪০ থেকে ৭০ কেজি পর্যন্ত ভুড়ি ও গরুর মাথা নিয়ে যশোরে বিক্রি করেন। এতে তার প্রতিদিন চারশ’ টাকা লাভ হয়। তার এ ব্যবসার বয়স প্রায় ১৪ বছর। এর মধ্যে গত এক বছর আগে তার মোটরসাইকেলের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশনও করেছেন। এভাবে নিয়মিত পথে পথে চলাচল করায় এখন সড়কে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরাও তাকে চেনেন এবং সহযোগিতা করেন।

রতনা জানান, তার অন্য বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। বাবার মৃত্যুর পর মা নুরজাহান বেগম ও একমাত্র সন্তানকে নিয়ে থাকেন টালিখোলায় একটি ভাড়া বাড়িতে। বাড়ির পাশেই করেছেন গরুর মাথা ও ভুড়ি বিক্রির প্রতিষ্ঠান। এছাড়া কেউ যদি কখনও গরুর মাংসের অর্ডার দেয় সেদিন গরু কিনে জবাই করে তা সরবরাহ করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে তিনি নিজেই মাংস কেটে বিক্রি করেন।

কালীগঞ্জ নতুন বাজারের মাংস ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান বলেন, ‘রতনা দীর্ঘদিন ধরে আমার কাছ থেকে ভুড়ি ও গরুর মাথা কিনে নিয়ে যায়। আগে বাসে করে আসতেন, এখন মোটরসাইকেল চালিয়ে আসেন। গরুর ভুড়ি ও মাথা অল্প হলে মোটরসাইকেলে নেন আর বেশি হলে বাসে উঠেয়ে দেন। রতনা আপা খুব ভালো মানুষ। আমরা তার কাজে সাধ্যমতো সহযোগিতা করি।’



আরও পড়ুন

×