ঢাকা বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

অনিয়ম-দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগের কী হবে

অনিয়ম-দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগের কী হবে

পাবিপ্রবি উপাচার্য এম রোস্তম আলী

এবিএম ফজলুর রহমান, পাবনা

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২২ | ১৪:৩৬

অনিয়ম-দুর্নীতি, অদক্ষতা আর ব্যর্থতার বিস্তর অভিযোগের মধ্যেই পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) উপাচার্য এম রোস্তম আলীর চার বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ। বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি বলেছিলেন, 'দুর্নীতি করব না, কাউকে করতে দেব না।' তবে মেয়াদকালে তার বিরুদ্ধে বিস্তর অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে অনেক দুর্নীতির প্রমাণও হয়েছে। এখনও ১০১টি সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ অমীমাংসিত রয়েছে। এসব বিষয়ে ওঠা প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেছেন সংশ্নিষ্ট ঊর্ধ্বতনরাও। সব মিলিয়ে উপাচার্যের গোটা মেয়াদকালে উত্তাল ছিল ক্যাম্পাস। ওই ১০১টি অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছে জমা দিয়েছিলেন বাংলা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আব্দুল আলীম। দাবি আদায়ে এককভাবে তিনি মাঠেও নামেন। উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়ায় অনিয়ম-দুর্নীতির এসব অভিযোগের কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

উপাচার্য এম রোস্তম আলীর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষক, কর্মকর্তাসহ সংশ্নিষ্ট অন্যদের সঙ্গে কথা বলেছে সমকাল। তাদের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, রোস্তম আলী দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আর্থিক, প্রশাসনিক ও একাডেমিক নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। তার আগের উপাচার্যের সময় সম্পন্ন হওয়া ভর্তি পরীক্ষা থেকে অনৈতিকভাবে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা নেন এবং শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সমালোচনার মুখে ফেরত দেন। ৫০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটি কোটি টাকা অনিয়মের দায়ে চাকরিচ্যুত আবদুর রহিমকে। পরে রিজেন্ট বোর্ডের সদস্যদের তোপের মুখে তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়।

সূত্র আরও জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় কেনা কোটি টাকার গাড়ি নিজের ছেলেকে ব্যবহার করতে দেন উপাচার্য। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্তে অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় গাড়িটি ফেরত দেন তিনি। ইতিহাস ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগপ্রার্থী প্রকাশ্যে ঘুষের টাকা ফেরত চান উপাচার্যের কাছে। এতে প্রচ ছাত্র আন্দোলনের মুখে পড়েন তিনি। এ ছাড়া বাড়িভাড়া ফাঁকি দেওয়া, অনিয়ম করে পছন্দের ব্যক্তিদের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক পদে নিয়োগ দেওয়াসহ নানা অভিযোগ প্রমাণিত হয় ইউজিসির তদন্তে। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী বাড়িভাড়া ফাঁকি দেওয়া টাকা ফেরত দেন এবং জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক পদে নিয়োগ বাতিল করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন লঙ্ঘন করে ডিন-চেয়ারম্যান নিয়োগসহ নানা একাডেমিক ও প্রশাসনিক অনিয়মও প্রমাণিত হয় উপাচার্যের বিরুদ্ধে।

সর্বশেষ মেয়াদ পূর্তির এক মাস আগে বিভিন্ন পদে ১০২ জনকে নিয়োগ দেন উপাচার্য। এ নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে বলে সাংবাদ সম্মেলন করেন গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. হারুন-অর-রশিদ এবং একাধিক চাকরি প্রার্থী। উপাচার্যের ভাতিজি কানিজ ফাতিমা কাকন, ভাগিনা হাসিবুর রহমানসহ অন্তত ১২ জন আত্মীয়কে বিধিবহির্ভূতভাবে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের নিয়োগ-বাণিজ্য, উন্নয়ন প্রকল্পে কমিশন খাওয়া, ভুয়া ভাউচার করে টাকা আত্মসাৎ, ১০ কোটি টাকার বই কেনায় হরিলুটের তদন্ত চেয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন। উপাচার্যের কুশপুত্তলিকাও দাহ করেন তারা।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি রিজেন্ট বোর্ডের সভায় তোপের মুখে পড়েন উপাচার্য। পরে সভাটি বাতিল করা হয়। এরপর শিক্ষক-কর্মকর্তরা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। কয়েক দিন পরে ক্যাম্পাসে এলেও ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে চুপিসারে চলে যান তিনি। গত এক সপ্তাহের বেশি সময়ে ধরে নানা দাবিতে রেজিস্ট্রার দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে রেখেছেন কর্মকর্তারা। ফলে প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি হারুনর রশিদ ডন সমকালকে বলেন, 'নানাভাবে আশ্বাস দিলেও নিজের স্বার্থ হাসিল করে তিনি (উপাচার্য) বিশ্ববিদ্যালয়কে সংকটে ফেলে দিয়েছেন। এটা একজন উপাচার্যের কাছে কাম্য নয়।'

সরেজমিন একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি সুযোগসন্ধানী চক্র গড়ে উঠেছে এবং যে উপাচার্যই আসুক না কেন তারা অনুসারী হয়ে স্বার্থ হাসিল করতে থাকেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টির সার্বিক মান একেবারে নিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। ইউজিসির র‌্যাঙ্কিংয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান বর্তমানে সবচেয়ে নিচে। উপাচার্য হিসেবে মেয়াদ শেষ করলেও অধ্যাপক রোস্তমের বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত ও বিচার চান তারা।

রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্ম বলেন, 'মেয়াদ পূর্তির এক সপ্তাহ পূর্বে কাউকে না জানিয়ে (উপাচার্য) ক্যাম্পাস ছাড়ায় নানামুখী সংকট সৃষ্টি হয়েছে। রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। এমন অবস্থায় উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।'

এসব বিষয়ে কথা বলতে মোবাইল ফোনে উপাচার্য অধ্যাপক এম রোস্তম আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তিনি বরাবরের মতোই ফোন ধরেননি।

আরও পড়ুন

×