শ্রমিক আন্দোলনে বন্ধ ১৯ ওষুধ কারখানা
ছবি: সংগৃহীত
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ০৬:১৭
দাবি আদায়ে ওষুধ কারখানার শ্রমিকরাও এবার আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছেন। তারা শক্তি প্রয়োগ করে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন। কারখানার মালিকরা বলছেন, গত ৫০ বছরে কখনও ওষুধ কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা যায়নি। তা সত্ত্বেও তারা শ্রমিকদের দাবি মেনে নিয়েছেন। তার পরও শ্রমিকরা কাজে ফেরেননি। এটাকে ‘ওষুধ শিল্প ধ্বংসে সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত’ বলে মনে করছেন তারা।
বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, খাবারের মান বাড়ানো, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটিসহ ১৮ দফা দাবিতে রাজধানীর পাশের সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই ও গাজীপুরে ১৯টি ওষুধ কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ চলছে। এতে কারখানায় ওষুধ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
ওষুধ শিল্প মালিকরা বলছেন, এ আন্দোলনে শ্রমিকদের সংশ্লিষ্টতা নেই। ওষুধ শিল্প ধ্বংসে সুদূরপ্রসারী চক্রান্তের অংশ হিসেবে কর্মকর্তাদের জিম্মি করে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছেন। একটা দাবি মেনে নিলে আবার আরেকটা দাবি নিয়ে আসছেন। এ জন্য কোনোভাবেই কারখানায় বিশৃঙ্খলা থামাতে পারছেন না তারা।
তারা বলছেন, এমন অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে বাজারে ওষুধের সংকট দেখা দিতে পারে। এতে চিকিৎসাসেবা ব্যাহতের আশঙ্কা রয়েছে। সংকট উত্তরণে সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা চেয়েছেন তারা।
ওষুধ শিল্প মালিকরা বলছেন, দফায় দফায় ডলার, বিদ্যুৎ, জ্বলানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ওষুধ উৎপাদনে ব্যয় বাড়ছে। এখন শ্রমিকের বেতন বাড়ালে লোকসান গুনতে হবে। বর্তমানে মজুত থাকা ওষুধ দিয়ে সরবরাহ কাজ চলছে। এ অচলাবস্থা বেশি সময় থাকলে দেশে ওষুধ সরবরাহে বড় ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে। তাতে বিপুল সংখ্যক মানুষের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হবে। এ কারণে অবিলম্বে সব কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম পুরোদমে চালুর দাবি জানিয়েছেন তারা।
হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান নির্বাহী (সিইও) মোহাম্মদ হালিমুজ্জামান বলেন, ‘২৭ আগস্ট আমার কারখানায় প্রথমে শ্রমিকরা যেসব দাবি তোলেন, তা সব মেনে নিয়েছি। তারপর আবার নতুন দাবি নিয়ে আরেক দল এসেছে। এখন আগের চেয়েও বেশি বেতন চাচ্ছে। এভাবে হলে আমাদের প্রতিষ্ঠান চলবে কীভাবে?’
এসিআই হেলথকেয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম মহিবুজ জামান বলেন, শ্রমিকদের ধর্মঘট অব্যাহত থাকলে এ শিল্পে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে। আমার সন্দেহ হচ্ছে, এর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে।
ঔষধ শিল্প সমিতির মহাসচিব ও হাডসন ফার্মাসিউটিক্যালসের এমডি এসএম শফিউজজামান সমকালকে বলেন, দুই-তিন সপ্তাহ ধরে যেভাবে শ্রমিক অসন্তোষ হচ্ছে; কর্মকর্তাদের জিম্মি করে অযৌক্তিক দাবি করা হচ্ছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ওষুধ শিল্প ধ্বংসে সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ডলারের দাম বাড়ছে। বিদ্যুৎ, জ্বলানির দাম বেড়েছে। এমন অবস্থায় শ্রমিকদের দাবি মেনে নিলে আমাদের লোকসান গুনতে হবে। সংকট উত্তরণে আমরা সরকারের সহযোগিতা চেয়েছি।
বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সভাপতি ও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান আব্দুল মুক্তাদির গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনেক ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকরা বিভিন্ন অযৌক্তিক দাবিতে আইনবহির্ভূতভাবে আন্দোলন ও ভাঙচুর করছেন। অনেক কারখানায় কর্মকর্তাদের প্রবেশে বাধা দিচ্ছেন এবং জিম্মি করে রেখেছেন। এতে কারখানায় উৎপাদন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কোম্পানিগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে। তাতে এক সময় দেশে ওষুধের সংকট দেখা দিতে পারে।
আব্দুল মুক্তাদির বলেন, ‘আমরা প্রধানত তিনটি বিষয় নজরে আনতে চাই। এক. দেশের ওষুধ শিল্প খাতে গত ৫০ বছরে এ ধরনের কোনো শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়নি। তাহলে এখন হঠাৎ করে কেন অসন্তোষ হচ্ছে? কয়েক দফায় শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি মেনে নেওয়া হলেও আন্দোলন কেন থামছে না? দাবি আদায়ের নামে বিভিন্ন কারখানায় দীর্ঘ সময় ধরে কর্মকর্তাদের জিম্মি করে রাখা হচ্ছে।’ এ বিষয়গুলো বিবেচনার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানান তিনি।
জানা গেছে, ওষুধ কারখানার শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন ৮ হাজার ৯শ টাকা। তাদের দাবি, এটা ১৬ হাজার টাকা করতে হবে। তা সত্ত্বেও শ্রমিকদের সব ধরনের দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানান ওষুধ শিল্প মালিকরা। তারা বলেন, দাবি আদায়ের নামে মিছিল, ঘেরাও বা ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি আইনসিদ্ধ ও যথাযথ প্রক্রিয়া নয়।
গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বিভিন্ন খাতের কর্মজীবীরা আন্দোলনে নেমেছেন। এর মধ্যে আনসার বাহিনী, গার্মেন্ট শ্রমিক, চিকিৎসক এবং রিকশা শ্রমিকরাও রয়েছেন। এই তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হলেন ওষুধ কারখানার শ্রমিকরা। অনেকে বলেছেন, যারা গত ১৫ বছরে একবারের জন্যও কোনো দাবিদাওয়া তোলেননি, তারা এখন সহিংস আন্দোলন করছেন রাজনৈতিক মতলব থেকে।
- বিষয় :
- পোশাক কারখানা