ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিওথেরাপি

নেই স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান, নির্ধারিত স্থান বস্তিবাসীর দখলে

নেই স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান, নির্ধারিত স্থান বস্তিবাসীর দখলে

তবিবুর রহমান

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ০০:১৩

দেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ শারীরিক নানা ধরনের ব্যথা, ব্যথাজনিত উপসর্গ, প্রতিবন্ধিতা ও পঙ্গুত্বের শিকার। তাদের সুস্থ, স্বাভাবিক ও কর্মক্ষম জীবনে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাসেবা। করোনা মহামারির মধ্যে এই চিকিৎসার কদরও বেড়েছে। তবে এখনও ফিজিওথেরাপি শিক্ষার জন্য একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিওথেরাপি প্রতিষ্ঠানে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তবে ১৩ বছরেও শুরু হয়নি নির্মাণকাজ। এমনকি নির্ধারিত জায়গাটি এখন বস্তিবাসীর দখলে।

এমন পরিস্থিতিতে ফিজিওথেরাপির গুরুত্ব তুলে ধরতে প্রতিবছরের মতো আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস পালিত হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য 'অস্টিওআর্থ্রাইটিস প্রতিকার ও প্রতিরোধ উভয়টিতেই ফিজিওথেরাপি সমান কার্যকরী'। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএস) সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।

ফিজিওথেরাপিস্টরা বলছেন, প্রতিটি চিকিৎসা ব্যবস্থায় একটি স্বতন্ত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকে। মেডিকেল শিক্ষা বাস্তবায়নে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল ও কলেজ রয়েছে। সেখানে তাদের পড়াশোনা ও ইন্টার্নশিপ করার সুব্যবস্থা রয়েছে। তবে ফিজিওথেরাপি শিক্ষা ও চিকিৎসার প্রসারে এমন কোনো উদ্যোগ নেই সরকারের। জনসাধারণে চিকিৎসার স্বার্থে দেশে ফিজিওথেরাপি শিক্ষা ও চিকিৎসার প্রসার প্রয়োজন। দীর্ঘদিনের দাবির পরও এটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ফিজিওথেরাপি শিক্ষা। সেবাবঞ্চিত হচ্ছে মানুষ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, কোনো এক অদৃশ্য কারণে আটকে আছে নির্মাণকাজ। কবে নাগাদ কাজ শুরু, সেটাই জানা নেই তাদের।

সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফিজিওথেরাপি শিক্ষার জন্য বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিওথেরাপি নামে একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান স্থাপনে রাজধানীর মহাখালীতে ৫ দশমিক ২৮ একর জমি দেয় সরকার। ২০০৯ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক আ ফ ম রুহুল হক ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেন। নির্মাণকাজ শুরু হতে দেরি হওয়ায় কয়েকবার আন্দোলন করেছেন ফিজিওথেরাপিস্টরা। বর্তমানে জায়গাটি বস্তিবাসীর দখলে। তাদের উচ্ছেদ করে কলেজ স্থাপনের জন্য আদালত থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে সব ফাইল চাপা পড়ে আছে।

এদিকে, দেশে সনদপ্রাপ্ত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের সরকারি চাকরির সুযোগ নেই। এ অবস্থা দেশের স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এরই মধ্যে কাজের সুযোগ বা অনুশীলনের সুযোগ না পেয়ে অনেকে পেশা পরিবর্তন করেছেন। অনেকে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। কারণ, স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার পর ফিজিওথেরাপিস্টদের পেশা চর্চার কোনো সনদ দেওয়া হয় না। ২০০৫ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কিছু ফিজিওথেরাপিস্টকে সাময়িক সনদ দিতে শুরু করলেও পরে বন্ধ হয়ে যায়।
এ ক্ষেত্রে প্রায় অকার্যকর বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন-২০১৮। যদিও এ আইনে বলা হয়েছে, ফিজিওথেরাপিস্ট হতে হলে সরকার স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেশাগত ফিজিওথেরাপি বিষয়ে চার বছর একাডেমিক শিক্ষা ও এক বছরের ইন্টার্ন সম্পূর্ণ করে ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি নিতে হবে।

আইনের বিষয়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ সমকালকে বলেন, বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন সঠিক বাস্তবায়নে যা করা প্রয়োজন, তাই করা হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল কার্যকরে ব্যবস্থা নেব।
সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফিজিওথেরাপিস্টদের জন্য দুটি সরকারি হাসপাতালে পদ রয়েছে মাত্র ১৯টি। এগুলোর মধ্যে পঙ্গু হাসপাতালে ১৪টি, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে দুটি এবং জাতীয় ক্যান্সার হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি করে পদ রয়েছে। যুগের পর যুগ প্রায় সব পদই শূন্য পড়ে আছে। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে সরকার ওই শূন্য পদে অস্থায়ী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়। কিন্তু ১২ বছরেও সে নিয়োগ হয়নি। আবার নতুন পদ তৈরির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ফিজিক্যাল থেরাপি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) চেষ্টায় ২০১২ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উদ্যোগ সাড়ে চার শতাধিক পদের প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু ২০১৪ সালে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করে তা আটকে দেয় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন এবং ফিজিক্যাল মেডিসিন সোসাইটি অব বাংলাদেশ। এখনও এ বিষয়ে কোনো সমাধান হয়নি।

বাংলাদেশে ফিজিক্যাল থেরাপি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. দলিলুর রহমান বলেন, দেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ শারীরিক নানা ধরনের ব্যথা, ব্যথাজনিত উপসর্গ, প্রতিবন্ধিতা ও পঙ্গুত্বের শিকার। তারপরও সরকারি সুযোগ-সুবিধার অভাবে দেশে আধুনিক ও যুগোপযোগী ফিজিওথেরাপি শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ এখনও অনেক সংকুচিত। এ বিষয়ে এখনই আমাদের নজর দেওয়া উচিত। তা না হলে একটা বড় জনগোষ্ঠী দীর্ঘ রোগভোগে কষ্ট পাবে। ফিজিওথেরাপি শিক্ষা ও সেবায় আমাদের উদাসীনতা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন

×