বিশ্ব শিক্ষক দিবস
‘তথ্যপ্রযুক্তির এই সময়ে শিক্ষকদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ’

বিশ্ব শিক্ষক দিবসের আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান। ছবি: সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২২ | ০৭:১০ | আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২২ | ০৮:১৪
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান বলেছেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির এই সময়ে আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। শিক্ষার্থীদের বিশ্বনাগরিক হিসেবে তৈরি করতে হলে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে শিক্ষকদের সমৃদ্ধ হতে হবে। এ কারণেই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য তৈরি হওয়ার জায়গায় শিক্ষকের বেতনভাতা যতটুকু বাড়বে, তার তুলনায় গবেষণায়, দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণের সুযোগ, প্রতিজন শিক্ষকের প্রযুক্তিগত সহায়তার জন্য ল্যাপটপ থেকে শুরু করে আধুনিক ক্লাসরুম, বিজ্ঞান ল্যাবসহ সবকিছু নিশ্চিত করতে হবে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলি। কিন্তু আর কিছু না হোক- প্রতিজন শিক্ষকের হাতে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। একজন শিক্ষক পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে, শিক্ষক হিসেবে তখনই গড়ে উঠবে, যখন জ্ঞানের এই সকল উপকরণ তার হতের মুঠোয় থাকবে।’
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সেমিনার কক্ষে আজ বুধবার বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে স্বাধীনতা শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশন আয়োজিত ‘শিক্ষকের মর্যাদা: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘শিক্ষকদের সম্মানের জায়গায় বঙ্গবন্ধুকন্যা আপোষহীন। আমরা দেখেছি, বঙ্গবন্ধুকন্যা তাঁর শিক্ষকদের কতটা সম্মান করেন। তিনি মন্ত্রিসভা এবং দলীয় নেতাদের ঊর্ধ্বে রাখতেন শিক্ষকদের। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের কথা আমরা সবাই জানি। তাঁকে কতটা সম্মান করতেন প্রধানমন্ত্রী। এ বিবেচনায় সমাজের শীর্ষে রয়েছেন শিক্ষক। আমাদেরও আত্মসমালোচনা করা প্রয়োজন। আমরা কজন আনিসুজ্জামান হতে পেরেছি। মনে রাখতে হবে, আমাদের প্রধান জায়গা ক্লাসরুম, বিজ্ঞান ল্যাব। শিক্ষকের হাত ধরে যখন মৌলবাদী তৈরি হয়, তখন রাষ্ট্র বিপন্ন হওয়ার উপকরণ তৈরি হয়। আমাদেরকে মুক্তবুদ্ধির চর্চা করতে হবে। একইসঙ্গে মুক্তবুদ্ধি চর্চার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে জঙ্গিবাদ তৈরির সঙ্গে যখন কেউ সংশ্লিষ্ট হন সেটিকেও নির্মূল করতে হবে। সেটির আত্মবিকাশের পথ রুদ্ধ করে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদেরই। সেকারণেই শিক্ষক একইসঙ্গে নেতা, সংগ্রামী এবং একজন জ্ঞানতাপস মানুষ।’
শিক্ষকদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘এ কথাও ঠিক, যখন দেখি কোনো শিক্ষক ফেসবুকে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে একটি লাইন লেখেন। আমি মনে করি, এর মধ্য দিয়ে আমাদের সব অর্জন নস্যাৎ করা হয়। যারা এসব কাজ করেন, তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে। এটি দূরভিসন্ধিমূলক। শিক্ষকদের মর্যাদা নষ্ট করে বিপদগ্রস্ত কাজ করবেন না। যারা জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন তাদেরকে শিক্ষক মনে করি না। যিনি এই পতাকাকে ভালোবাসেন না, তাদেরকে এই সম্প্রদায়ের মনে করি না। আসুন, মুক্তবুদ্ধির পতাকাতলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমাদের ক্লাসরুমগুলোকে বিজ্ঞান ভাবনায়, উৎকর্ষতায় সাজিয়ে তুলি।’
শিক্ষকদের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষকদের যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করেছেন। তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পাঠ করলে আমরা সেটি দেখতে পাই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যেদিন বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাওয়ার কথা ছিল। আগস্টজুড়ে বঙ্গবন্ধুর নতুন চিন্তা-ভাবনা, পরিকল্পনা ছিল। সেই চিন্তা ছিল নতুন সমাজ গড়ার। যেটিকে তিনি বলেছেন ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’। সেই ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’কে ত্বরান্বিত করার জন্য বঙ্গবন্ধু যেভাবে বলেছিলেন, ‘আমি প্রচলিত সমাজকে ভেঙে ফেলতে চাই।’ প্রচলিত সমাজের ঘুণে ধরা বাস্তবতাকে ভেঙে ফেলে তিনি ১৫ আগস্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর ভাষণ দেয়ার কথা ছিল। তার মধ্য দিয়ে শিক্ষার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হওয়ার সমস্ত প্রস্তুতি ছিল- যেটি পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেকর্ডে খুঁজে পাওয়া যায়। বঙ্গবন্ধুকে কেন হত্যা করা হয়েছিল? যখন তিনি দ্বিতীয় বিপ্লবের নতুন সমাজ গড়ার অর্থাৎ প্রচলিত পুঁজিবাদী সমাজ কাঠামোকে ভেঙে নতুন সমাজ বিপ্লব যেখানে ছিল শিক্ষার আমূল পরিবর্তন, কৃষিতে আমূল পরিবর্তন, সমব্যয়ী চিন্তা- তার মধ্য দিয়ে একটি সমতাভিত্তিক সমাজ সৃষ্টি। এই জায়গায় বঙ্গবন্ধু কেন জেতে চাইলেন। তিনি পাকিস্তানি বৈষম্যমূলক সমাজ ব্যবস্থায় বুঝতে পেরেছিলেন- এই সমাজের পরিপূর্ণ বিকাশ যদি করতে হয়, তাহলে প্রতিটি মানুষের মধ্যে স্বশাসন আনতে হবে, অটোনমি আনতে হবে, স্বাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আর সেটি যদি করতে হয় তাহলে শিক্ষা তার প্রধান আলোকবর্তিকা, শিক্ষক তার প্রধান জায়গা। এটিকে ধরেই তিনি সমাজ গড়ার প্রধান জায়গায় যেতে চেয়েছিলেন। সেটি দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচিতে স্পষ্ট করেছেন। শিক্ষাকে নিয়ে তাঁর ভাবনা আগেই ড. খুদরাত ই খুদা শিক্ষা কমিশনে প্রতিফলিত করেছেন। সেই স্পষ্টকরণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিপ্লব যে হতে যাচ্ছিল, সেই পথ যদি নিশ্চিত করা যেতো তাহলে বাংলাদেশ হতো পৃথিবীর অনন্য এক মডেল, যেখানে শিক্ষা, সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে এক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপরিচয় নিশ্চিত করত।’
স্বাধীনতা শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শেখর। এতে লিখিত বক্তব্য দেন ফেডারেশনের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু প্রমুখ।
- বিষয় :
- বিশ্ব শিক্ষক দিবস
- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়