ঢাকা মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

গুরুত্বপূর্ণ আইনের বিষয়ে মতামতের সময় মাত্র ৭ কর্মদিবস!

গুরুত্বপূর্ণ আইনের বিষয়ে মতামতের সময় মাত্র ৭ কর্মদিবস!

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২২ | ০৭:০৪ | আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২২ | ০৭:০৪

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের খসড়া সংশোধনীর জন্য সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়গুলোর মন্তব্য চেয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। লিখিত বক্তব্য প্রদানের জন্য মাত্র সাত কর্মদিবস সময় দিয়ে চিঠি ইস্যু করেছে মন্ত্রণালয়টি।

গুরুত্বপূর্ণ আইনটি সংশোধনে তড়িঘড়িতে রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। এরই মধ্যে খসড়া প্রণয়ন থেকে শুরু করে এখনও খাতসংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামত না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

গত ৭ ডিসেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ৪০টির মতো মন্ত্রণালয় এবং বেশ কয়েকটি এনজিওকে আমন্ত্রণ জানায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। বৈঠকে তাদের বক্তব্য শুনতে চায় মন্ত্রণালয়। ওই সময় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে আসা প্রতিনিধিরা মতামত তুলে ধরতে চান। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানানো হয়, মতামত লিখিত আকারে দিতে হবে এবং এর জন্য সময় বেঁধে দিয়ে চিঠি দেওয়া হবে।

গত বৃহস্পতিবার ওই বিষয়ে একটি চিঠি ইস্যু করে সাত কর্মদিবস সময় দেওয়া হয়। বেঁধে দেওয়া ওই সময়ের মধ্যে আইনের বিষয়ে মতামত দিতে বলা হয়। তবে বেশ কিছু মন্ত্রণালয়ে সেই চিঠি এখনো পৌঁছায়নি বলে জানা গেছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, একাধিক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা আইনটির সংশোধনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, তড়িঘড়ি করে আইনটির সংশোধন নিয়ে সভায় প্রশ্ন তোলা হয়। সংশ্লিষ্ট বা স্টেকহোল্ডারদের ছাড়াই কেন সভা হচ্ছে সে বিষয়ও জানতে চাওয়া হয়। কর্মকর্তারা জানতে চান, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এমন সংশোধন পাস হলে তার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে সংশ্লিষ্টদের মত নিয়ে খসড়াটি প্রণয়ন করার দরকার ছিল বলেও মন্তব্য করেন কেউ কেউ।

ওই সভা প্রসঙ্গে জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি বাংলাদেশের (নাসিব) সভাপতি মির্জা নূরুল গনী শোভন বলেন, দেশে প্রায় ১৫ লাখ প্রান্তিক পর্যায়ের নিম্ন আয়ের খুচরা বিক্রেতা আছেন। তাদের অধিকাংশই অস্থায়ী বা ভাসমান দোকানি। আইনের সংশোধনীতে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তাতে এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর জীবন ও জীবিকা জড়িত। এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে অথচ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। বিষয়টি অমানবিক।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেসা বলেন, সবকিছু বিবেচনা করেই বিভিন্ন মহলের পরামর্শের ভিত্তিতে এগুলা করা হয়েছে। এটা খসড়া। শেষ পর্যন্ত কী হয় দেখা যাক।

তিনি আরও বলেন, অনেকদিন ধরেই এ নিয়ে কাজ চলছে। এতদিনে আমরা যতগুলো বৈঠক করেছি, যত মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি, আপনি জেনে যাবেন আমরা স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে কথা বলেছি কি বলি নাই। আমরা আসলে চেষ্টা করছি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী কাজ করতে।

মতামত নেওয়ার ক্ষেত্রে দ্রুততার বিষয়ে অতিরিক্ত সচিব বলেন, গত ৭ ডিসেম্বর আমরা যে বৈঠক করেছি এটা আসলে একদম শেষ বলা যায়। আমরা অনেক জায়গায়, অনেক ফোরামে কথা বলেছি, এখন আমরা খসড়াটা ফাইনাল করার চেষ্টায় আছি। এরপরেও এই মতামতটা আসলে একবার না, এর আগেও মতামত নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন ফোরামে। এখন যে ফাইনাল স্টেজে আছে তা দেখে দেওয়ার জন্য এর আগেও বিভিন্নভাবে মতামত নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন লেভেলে মতামত নেওয়া হয়েছে।

২০০৫ সালে হওয়া ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনে প্রথমবার সংশোধন আনা হয় ২০১৩ সালে। চলতি বছর আবারও ওই আইনে সংশোধনীর প্রস্তাব দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মতামতের জন্য সংশোধনীর খসড়া ওয়েবসাইটে দেওয়া হয় গত ১৯ জুন।

অভিযোগ আছে, আইনটি সংশোধন করতে গঠিত কমিটি ও সাব-কমিটিতে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের উপস্থিতি নেই এবং শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠনসহ খাতসংশ্লিষ্ট কোনো বিশেষজ্ঞ রাখা হয়নি।

সংশোধনীর খসড়ায় ফেরি করা হকারদের সিগারেট বিক্রি নিষিদ্ধ, এক শলাকা বিক্রি বন্ধ, সিগারেট বিক্রির জন্য লাইসেন্সের বিধি করার কথা বলা হয়। এরই মধ্যে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সংগঠন নাসিব নতুন প্রস্তাবের বিরোধীতা করে সরকারকে স্মারকলিপিও দিয়েছে। হকারদের একাধিক সংগঠন এসব প্রস্তাবের বিরোধীতা করে সভা করেছে। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই), ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিআইও এর বিরোধীতা করে।

আরও পড়ুন

×