অনিয়ম-বিতর্ক নিয়েই শুরু কৃষির সবচেয়ে বড় প্রকল্প

পার্টনার প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার। ছবি: সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৩ | ১৭:১৬ | আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৩ | ১৭:১৬
অনিয়ম ও বিতর্কের মধ্যেই দেশের কৃষিতে সবচেয়ে বড় প্রকল্প ‘প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন এন্টারপ্রেনারশিপ অ্যান্ড রেসিলিয়েন্স (পার্টনার)’ যাত্রা শুরু করেছে। বুধবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প উদ্বোধন করেন কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার।
অনুষ্ঠানে প্রকল্পের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর ও পরিচালক নিয়োগ নিয়ে চলে নানা গুঞ্জন। শুরুর গলদে এ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করেন। নিয়ম ভেঙে অদক্ষ কর্মকর্তার পদায়নে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কেউ কেউ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রকল্পটি বাস্তবান হলে খাদ্য উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি কৃষিতে বৈচিত্র্য আসবে। গত ১৮ এপ্রিল একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত ৬ হাজার ৯১০ কোটি টাকার প্রকল্প ৬৪ জেলার ৪৯৫ উপজেলায় বাস্তবায়ন হবে। এতে সরকারি অর্থায়ন ১ হাজার ১৫১ কোটি টাকা, বিশ্বব্যাংক ৫ হাজার ৩০০ কোটি ও ইফাদ দিচ্ছে ৫০০ কোটি টাকা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন সাতটি সংস্থা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
প্রকল্প শুরুর আগেই নিয়ম ভেঙে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কুমিল্লা জেলার উপপরিচালক মিজানুর রহমানকে প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কাজে তাঁর অভিজ্ঞতা না থাকায় পার্টনার প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। অনুষ্ঠানে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা সমকালকে জানান, প্রকল্প পরিচালক বা প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর নিয়োগে আট সদস্যের একটি কমিটির মাধ্যমে বাছাই প্রক্রিয়ার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কমিটিকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পের প্রধান নিয়োগের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা ও প্রকিউরমেন্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ থাকা দরকার। কিন্তু এসব আমলে নেওয়া হয়নি। প্রধান নিয়োগ পেতে হলে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাস পর্যন্ত চাকরির মেয়াদ থাকতে হয়। কিন্তু মিজানুর রহমানের চাকরি আছে দেড় বছর। তার ক্রয়-সংক্রান্ত বিধানাবলি ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনা বিষয়ে তেমন প্রশিক্ষণ নেই। প্রকল্প প্রণয়ন ও প্রকল্প বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতাও শূন্য। বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রোগ্রামে প্রকল্প বাস্তবায়নের সাত বছরের অভিজ্ঞতা থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যা মিজানুর রহমানের ক্ষেত্রে মানা হয়নি বলে জানান তারা।
জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি আগে কোনো প্রকল্পে কাজ করিনি– এটা সঠিক। তবে আমার টিমের অনেকেরই বিভিন্ন প্রকল্পে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তারাই আমার ভরসার জায়গা। সরকার ভালো মনে করেছে বলেই আমাকে এ পদে নিয়েছে।’
সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, অভিজ্ঞতা না থাকায় প্রথম এক-দুই বছরে কাঙ্ক্ষিত ফল আসবে না। এতে ঋণচুক্তি অনুযায়ী পরবর্তী বছরগুলোর বরাদ্দ পাওয়া নিয়েও সংশয় রয়েছে। আবার দেড় বছর পর প্রকল্পের প্রধান অবসরে যাওয়ায় নতুন অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে পার্টনার প্রকল্পের ৭৬০ কোটি টাকার বিপণন অঙ্গের পরিচালক করা হয়েছে মৎস্য ক্যাডারের কর্মকর্তা মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল ফারুককে। যদিও প্রকল্পের ডিপিপিতে বিসিএস কৃষি ক্যাডারের কোনো কর্মকর্তাকে ওই দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এদিকে, পার্টনারের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরিসহ শুরু থেকেই ফোকাল পয়েন্ট অফিসার ছিলেন ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রামের (এনএটিপি) পরিচালক সাখাওয়াত হোসেন শরীফ। তাঁর বিষয়ে অনুষ্ঠানে কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার বলেন, ‘প্রকল্পের শুরু থেকে সাখাওয়াত হোসেন অনেক দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন। মেধাবী মানুষটি অনেক কষ্ট করে ডিপিপি বানিয়েছেন। কিন্তু নানা কারণে তাঁকে প্রকল্প পরিচালক করা যায়নি। আশা করি, তিনি এ প্রকল্পের কার্যক্রমে সব সময় সহায়তা করবেন।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমান কৃষিকে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য টেকসই ও নিরাপদ বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তর করবে পার্টনার প্রকল্প। যারা নিয়োগ পেয়েছেন, তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে দেশের কৃষিকে বদলে দেবেন বলে আশাবাদী।’