কভিড-১৯ অতিমারির সময়কালে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলো নারীদের জন্য তেমন কার্যকর হয়নি। বেশিরভাগ নারী এসব প্যাকেজ সম্পর্কে অবগত নয়। যারা অবগত ছিলেন তাদের মধ্যে ঋণের জন্য আবেদনের অনিচ্ছা লক্ষ্য করা গেছে। অর্থনৈতিক মন্দা এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার কারণে নারীরা ঋণের ব্যাপারে তেমন আগ্রহী ছিলেন না। বরং নগদ সহায়তাই বেশি প্রয়োজন বলে মনে করেন অনেক নারী উদ্যোক্তা। 

এ পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার জন্য নারীবান্ধব নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ এবং বর্তমান প্যাকেজগুলোতে নারীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখার সুপারিশ এসেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত 'সরকারের আর্থ-সামাজিক পুনরুদ্ধার ব্যবস্থা :নারীরা কতটা উপকৃত হয়েছে' শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে। সংলাপ আয়োজনে সহায়তা করে ইউএন ওমেন।

সংলাপের প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, এটা ঠিক যে, অনেকে সহযোগিতার অভাবে ঋণ নিতে পারেননি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে হয়তো পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। তবে সরকার সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। নতুন করে প্রণোদনার আলোচনা চলছে।

সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। প্রতিবেদনে সিপিডি পরিচালিত গত অক্টোবরের এক জরিপের তথ্য উল্লেখ করা হয়। এতে দেখা যায়, করোনায় ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ নারী উদ্যোক্তার ব্যবসা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। এসব উদ্যোক্তার ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ বাড়ি ভাড়া নিয়মিত চালিয়ে নিতে পারছেন না। ৫০ শতাংশ উদ্যোক্তা সরকারি ভ্যাট, কর এবং অন্যান্য সেবামূল্য পরিশোধ করতে পারছেন না। এসব কারণে অনেক নারী উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানে কর্মী।

অতিমারিতে নারীদের বৈশ্বিক চিত্র তুলে ধরেন সংলাপের সম্মানিত অতিথি ইউএন উইমেনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি শোকো ইশিকাওয়া। তিনি বলেন, এসব প্যাকেজ নারীদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ও স্বচ্ছভাবে বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে।

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান সংলাপে সভাপতিত্ব করেন। সমাপনী বক্তব্যে তিনি বলেন, এ ধরনের সংলাপ থেকে উঠে আসা সুপারিশগুলো কার্যকর করতে একটা টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে যারা এ কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করবে।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের দীর্ঘমেয়াদে সহায়তার কথা চিন্তা করতে হবে। নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ যা দেখানো হয়, বাস্তবে তা অনেক কম। কারণ, অনেক পুরুষ তার স্ত্রী, মা ও মেয়ের নামে ঋণ নিয়ে থাকেন।

পারসোনার প্রধান নির্বাহী কানিজ আলমাস বলেন, ঋণের চেয়ে সরাসরি অর্থ সহায়তা পাওয়া গেলে উদ্যোক্তাদের বেশি উপকার হতো। করোনাকালে নারী উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট মওকুফের অনুরোধ জানান তিনি।

সংলাপে আরও অংশ নেন ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী সেলিম আর এফ হোসাইন, বিজিএমইএর পরিচালক বিদ্যা অমৃত খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ড. লীলা রশিদ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহসভাপতি, ড. ফৌজিয়া মোসলেম প্রমুখ।