ঢাকা রবিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কর্মশালায় বক্তারা

কয়েদিদের মানবাধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে আইন সংশোধন করা প্রয়োজন

কয়েদিদের মানবাধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে আইন সংশোধন করা প্রয়োজন

ছবি: সংগৃহীত

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৪ | ১৯:৩৩

কারাগারে বন্দিদের মানবাধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে বিদ্যমান জেল কোড ও এ সংক্রান্ত পুরনো আইন সংশোধনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বক্তারা। পাশাপাশি কারাগার সংস্কারেরও আহবান জানানো হয়েছে। বক্তারা বলেন, জেল কোড ১৯৮৯ সালে সর্বশেষ পুনমুদ্রিত হয়েছিল। এরপর বিভিন্ন সময় উচ্চ আদালত থেকেও এ বিষয়ে কিছু নির্দেশনা এসেছে, যার আলোকে জেল কোড এবং এ সংক্রান্ত অন্যান্য আইন সংশোধন করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বিশ্বের উন্নত দেশের আইনের  সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বন্দিদের মানবাধিকার এবং তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতে হবে।

শনিবার ঢাকার বকশিবাজারে কারা অধিদপ্তর কনভেনশন হলে ‘কারাগার সংস্কার: বাস্তবতা ও করণীয়’ শীর্ষক এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আইন, আদালত, মানবাধিকার ও সংবিধান বিষয়ক সাংবাদিকদের শীর্ষ সংগঠন ল' রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) ও কারা অধিদপ্তর যৌথভাবে এ কর্মশালা আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছর মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারিনি। ভয়ের সংস্কৃতি ভয়ের শাসন ও ফ্যাসিবাদের কারণে স্বাধীনভাবে কথা বলা সম্ভব হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, বিগত ১৫ বছর মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারিনি। ভয়ের সংস্কৃতি ভয়ের শাসন ও ফ্যাসিবাদের কারণে স্বাধীনভাবে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, তিনি আরও বলেন, কারাগারগুলোকে সংস্কারের চেষ্টা করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে উদ্যোগী হতে হবে। এ সংক্রান্ত বিদ্যমান আইন যুগোপযোগী করতে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন সুপারিশ করবে। আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানের নেতৃত্বে বিচারবিভাগ সংস্কার কমিশন কাজ করছে। তার জেল কোড যুগোপযোগী করতে সুপারিশ করেবেন।

কর্মশালার বিশেষ অতিথি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস বলেন, বাংলাদেশের জেল কোড ১৯৮৯ সালে সর্বশেষ পুনমুদ্রিত হয়েছিল। বিভিন্ন সংস্থাকে সম্পৃক্ত করে কারা সংস্কারে উদ্যোগ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে কারাগার আমাদের সমাজেরই অংশ। কারাবন্দী একজন মানুষের শুধু ফ্রিডম অফ মুভমেন্ট থাকবে না। তার ভোটাধিকার বা অন্যান্য ফ্রিডম রেসট্রিকটেড থাকবে না। তিনি কারা ব্যবস্থাপনা যুগোপযোগী করতে গুরুত্বারোপ করেন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, কারা আইন সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে। মানবিকভাবে কারাগার গুলোকে গড়ে তুলতে হবে। জেল কোড ও দন্ডবিধি সংশোধন করে যুগোপযোগী  করা এখন সময়ের দাবি। কারাজীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, কারাগার গুলোকে সংশোধনাগার হিসেবে সত্যিই প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও প্রয়োজন। কারা ব্যবস্থাপনা যুগোপযোগী করতে হলে সংশ্লিষ্টদের তেলবাজি ও দলবাজি পরিত্যাগ করতে হবে।

আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ বলেন, কারাবন্দিদের সংশোধনের সুযোগ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উদাহরণ তুলে ধরেন। কারাগারে নারী ও শিশুরা নানা ধরনের বৈরী আচরণের মুখোমুখি হয়। তিনি বিদ্যমান কারা ব্যবস্থা সংস্কারের ওপর জোর দেন।

কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহার হোসেন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে ১৭টি কারাগারে বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়েছিল। পরবর্তীতে সব কারাগারে শৃংখলা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। দেশের সব কারাগারে এখন নিরাপদ ও স্বাভাবিক পরিবেশ রয়েছে। তিনি কারা ব্যবস্থাকে আধুনিককরণে গুরুত্বারোপ করেন। কারাগারে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি লোক থাকে বিভিন্ন সময় যা অমানবিক। এটি সমাধান জরুরি।

কারা উপ মহাপরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর কবির বিদ্যমান কারাগার ব্যবস্থায় বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন। এর মধ্যে বন্দির তুলনায় অপ্রতুল স্থান, প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও ব্যবস্থা না থাকা। পাশাপাশি কারা কর্মকর্তাদের সূযোগ সুবিধায় রয়েছে নানা বৈষম্য। এসব বৈষম্য নিরসনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

এলআরএফের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসান জাবেদের সভাপতিত্বে কর্মশালায় স্বাগত বক্তৃতা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মিশন। কর্মশালা সঞ্চালনা করেন প্রশিক্ষণ ও কল্যান সম্পাদক জাভেদ আখতার ও নিউ এজ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক শহীদুজ্জামান। কর্মশালায় আলোচ্য বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

আরও পড়ুন

×