ঢাকা বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আর্থিক মুক্তির পথে উত্তরের নারীরা

আর্থিক মুক্তির পথে উত্তরের নারীরা

প্রতীকী ছবি

 লিমন বাসার, উত্তরাঞ্চল

প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:১০

উত্তরাঞ্চলে মৃৎ, ক্ষুদ্র ও হস্তশিল্পে নারীর ভূমিকা পালনের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। আগ্রহী হলেও প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি, পুঁজিসহ প্রয়োজনীয় সমর্থনের অভাবে তারা ছুঁতে পারছেন না সফলতা। সামাজিক-অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ডিঙিয়ে নারীরা সুখবর দিচ্ছেন অর্থনৈতিক স্বাধীনতার।
দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী, নওগাঁ ও রংপুর জেলার নারীরা জানান, তাদের অনেকের প্রাথমিক শিক্ষা থাকলেও কর্মসংস্থানে প্রবেশের ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনের সুযোগ কম। সঠিক প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা না পাওয়ায় গড়তে পারছেন না উদ্যোগ।

দিনাজপুরের শহিদা খাতুন বললেন, প্রশিক্ষণ পেয়ে নিজ উদ্যোগে খাদ্যপণ্যের ব্যবসা শুরু করেছিলাম। আটকে গেলাম বাজারজাতকরণে। লাভের ধারাবাহিকতা না থাকলে সফলতা আসে না। 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হস্ত ও মৃৎশিল্প, সেলাই এবং তাঁতের কাজের মতো বিভিন্ন পেশায় দক্ষতা দেখালেও প্রয়োজনীয় সহায়তা না পেয়ে থমকে গেছেন অনেক নারী। ঠাকুরগাঁওয়ের আমিনা বেগম প্রথমে ব্লক প্রিন্টের কাজ শুরু করেন। তবে বাজারের অভাবে আয় ছিল সামান্য। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সহায়তায় বিক্রির সুযোগ পেয়ে বাড়ে আয়। তবে প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাবে সঠিক মনোনিবেশ করতে পারছেন না। আমিনার ভাষায়, এ ধরনের উদ্যোগে স্থানীয় সহায়তা ও উন্নত প্রযুক্তির অভাব নারীর আর্থিক স্বাধীনতার পথে বড় বাধা। জ্ঞানের অভাবে সঠিক ছবি তুলতে না পারায় অনলাইনে পণ্যের মান অনেক কম মনে হয়, যা ক্রেতার কাছে ভুল বার্তা দেয়।

রাজশাহীর নিপা আক্তার স্বল্প পরিসরে বাটিকের কাজ শুরু করেন। চাহিদা বাড়লেও বিনিয়োগের অভাবে তা বড় করতে পারছেন না। নারীর জন্য ব্যাংক ঋণও সহজ নয়। তিনি বললেন, বিনিয়োগ ছাড়া উদ্যোক্তা হওয়া সম্ভব নয়। তবুও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। নারীদের প্রচেষ্টা সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে কর্মসংস্থান বাড়ত।
দিনাজপুরের উদ্যোক্তা শ্যামলী বেগম শীতলপাটি ও তাঁতের কাপড় তৈরি করেন। স্থানীয় বাজারে নাম পেলেও বড় পরিসরে ব্যবসায়িক সংযোগের অভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন। শ্যামলী জানালেন, গ্রামের নারীরা কিছু না কিছু করতে চান। কিন্তু পুঁজি ও সহযোগিতার অভাবে বেশি দূর যেতে পারছেন না। মনে হয়, আমাদের পণ্যের মান যদি আরও উন্নত করতে ও বড় বাজারে পৌঁছাতে পারতাম, তাহলে অনেক আয় সম্ভব ছিল।

রাজশাহীর হাসিনা আক্তার সেলাই ও বাটিকের কাজ করছেন। ২০ নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া তিনি বলেন, আর্থিক সহায়তা পেলে কাজটি আরও বড় করতে পারতাম। এ উদ্যোগে বহু নারীর কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু আর্থিক সহায়তা, প্রযুক্তি জ্ঞান ও সমর্থনের অভাবে তা অচল হয়ে পড়ছে।
রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক শফিক আশরাফ এক নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন, উত্তরের নারীরা এখনও পুরুষের পাশাপাশি মাঠে কৃষিকাজ করেন। কিন্তু পারিশ্রমিক অনেক কম পান। এসব নারীকে প্রশিক্ষিত করা গেলে তারা সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবেন।
বগুড়া যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক তোছাদ্দেক হোসেন বলেন, স্বল্প পুঁজি নিয়েও নারীদের ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। আমরা প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে তাদের সক্ষমতা বাড়াতে চাই। এ জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) বগুড়া জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত উপ-মহাব্যবস্থাপক মাহফুজুর রহমান জানান, কাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উদ্যোক্তাদের প্যাকেজ প্রোগ্রামের মতো তারা সহায়তা দেন। থাকে নানা প্রশিক্ষণও। ফলে নিজের ব্যবসা সম্পর্কে ভালো ধারণা পান নারীরা। তবে তিনি স্বীকার করেন, নানা সীমাবদ্ধতায় সবাইকে এ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা সম্ভব হয় না।
নারীদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির বিষয়ে মাহফুজ বলেন, আর্থিক সহায়তা, প্রশিক্ষণ ও সামাজিক সহযোগিতা বাড়ানো হবে। কারণ নারীর আর্থিক স্বাধীনতা কেবল তার ব্যক্তিগত উন্নয়নে নয়; দেশের সামগ্রিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

আরও পড়ুন

×