ঢাকা বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সেবা কার্যক্রমে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান যুক্ত করার দাবি

পাসপোর্ট অফিস ঘিরে এখনও দালাল

আবেদনকারীর কাছ থেকে নানা কৌশলে হাতিয়ে নেওয়া হয় অর্থ

পাসপোর্ট অফিস ঘিরে এখনও দালাল

ফাইল ছবি

আছাদুজ্জামান

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৫ | ০১:২২ | আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৫ | ১০:২৮

কিশোরগঞ্জের সুমাইয়াকে মামাতো ভাইয়ের স্ত্রী সাজিয়ে গত বছর ডিসেম্বরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পাসপোর্ট অফিসে নিয়ে আসেন খালেক। পাসপোর্টের আবেদন ফরম খালেক পূরণ করে দেন। এর পর জমা দেওয়ার জন্য কাউন্টারে গেলে অফিসের কর্মকর্তা সুমাইয়ার কাছে জানতে চান, তাঁর সঙ্গে থাকা ব্যক্তির পরিচয়। এতে সুমাইয়ার হাসিমাখা মুখ বিবর্ণ হয়ে যায়। বেরিয়ে আসে প্রকৃত তথ্য। খালেক পাসপোর্ট অফিসের দালাল। অল্প সময়ে পাসপোর্ট পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে সুমাইয়ার কাছ থেকে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন ৪০ হাজার টাকা। বলেছিলেন, অফিসকে টাকা দিতে হবে।

পাসপোর্ট কর্মকর্তার জেরার মুখে খালেক বলতে বাধ্য হন, আর কখনও কারও সঙ্গে প্রতারণা করবেন না। মুচলেকা দিলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সুমাইয়ার কাছ থেকে নেওয়া ৪০ হাজার টাকা খরচ করে ফেলেছেন বলে জানান এবং তা ফিরিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করেন খালেক। এর পর সুমাইয়াকে আবেদন ফরম জমা দেওয়ার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয় কিশোরগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে।

এমন ঘটনা শুধু এটিই নয়, জালিয়াতি অহরহ ঘটছে পাসপোর্ট অফিসকে কেন্দ্র করে। গত বছরের আগস্ট মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা থেকে পাসপোর্টের আবেদন ফরম পূরণ করেন জয়নাল আবেদিন। আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে জমা দেওয়ার জন্য স্থানীয় এক কম্পিউটার দোকানদারের মাধ্যমে ফরম পূরণ করেন। বিনিময়ে তাঁর কাছ থেকে নেওয়া হয় ১০ হাজার টাকা। দোকানদার জয়নালকে জানান, আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে আবেদন ফরম জমা দিলে ডেলিভারি স্লিপ দেবে। কয়েক দিন পর এসে এই কপি দিয়ে পাসপোর্ট নিতে পারবেন। কম্পিউটার দোকানদারের কথামতো আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে ফরম জমা দিতে এসেই জয়নাল পড়েন বিপাকে। ফরমে ঠিকানা দেখে কর্মকর্তা বলেন, এখানে কেন জমা দিতে এসেছেন? এক পর্যায়ে ভুল বুঝতে পেরে জয়নাল বলেন, তিনি ফাঁদে পা দিয়েছেন। ভারাক্রান্ত মনে তিনি ফিরে যান এলাকায়।

আগারগাঁওয়ে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে জানা যায়, হয়রানির এমন ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে। আবেদনকারীদের কাছ থেকে দালাল চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ। সেবা সহজলভ্য করতে দেশের প্রতিটি জেলায় গড়ে তোলা হয়েছে পাসপোর্ট অফিস। সারাদেশে পাসপোর্ট অফিস আছে ৭১টি। অফিস বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে দালালদের দৌরাত্ম্য। দালাল ধরতে প্রায়ই অভিযান চালানো হয়। কাউকে কাউকে আটক করে পুলিশে দেওয়া হলেও বেরিয়ে এসে একইভাবে কাজ করে তারা। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাসপোর্ট অফিসের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, দালালদের কারণে অফিসের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তবে অনেকেই বলছেন, এই সেবা কার্যক্রমে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা হলে আবেদনকারীদের হয়রানি বন্ধ হবে।

আগারগাঁওয়ে অফিসের আশপাশে কম্পিউটার দোকানগুলোর আড়ালে পাসপোর্টপ্রত্যাশীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে কিছু লোক। অভিযোগ পেয়ে র‍্যাব অভিযান চালিয়ে গত ছয় মাসে অন্তত ২০ দালালকে আটক করে থানায় হস্তান্তর করে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল নূরুল আনোয়ার সমকালকে বলেন, আবেদনকারীকে অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করতে হয়। দেশের অধিকাংশ সেবাপ্রার্থীর অনলাইনে আবেদন করার অভিজ্ঞতা নেই। ফোন-ফ্যাক্সের দোকানে গিয়ে অনুমোদনহীন ব্যক্তির কাছে কম্পিউটারে ফরম পূরণ করতে হয়। এসব ব্যক্তি খেয়াল-খুশিমতো অর্থ দাবি করে। অনেক সময় ভুল তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করে দেয়। ব্যাংক ফি গ্রহণ করে তা পরিশোধ না করেই আবেদনকারীকে অফিসে পাঠিয়ে দেয়। এভাবে সেবাপ্রার্থী হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হন। এমন দুর্ভোগ কমানোর লক্ষ্যে অধিদপ্তরের নিবন্ধিত এজেন্সির মাধ্যমে ই-পাসপোর্টের ফরম পূরণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে সেবাপ্রার্থীরা নির্ভুল ফরম পূরণের সুযোগ পাবেন এবং প্রতারিত হওয়ার ঘটনা কমবে।

কোন প্রক্রিয়ায় এজেন্সি নিয়োগের কথা ভাবছেন– জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ই-পাসপোর্ট ফরম পূরণের লক্ষ্যে এজেন্সি নিয়োগের প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে পাঠানো হয়েছে। অধিদপ্তরের পাঠানো প্রস্তাবটি মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন।

আরও পড়ুন

×