ঢাকা বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সরকারি ফাইল আত্মসাৎ, গোল্ডেন মনিরসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে

সরকারি ফাইল আত্মসাৎ, গোল্ডেন মনিরসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২১ | ০৯:২৩ | আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২১ | ০৯:৪৪

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান কার্যালয় থেকে বাড্ডা পুনর্বাসন প্রকল্পের ৭০টি ফাইল সরানোর অভিযোগে স্বর্ণ চোরাকারবারি কথিত ব্যবসায়ী অটো কার সিলেকশনের মালিক মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার কমিশন মামলাটির অনুমোদন দিয়েছে। 

এই মামলার অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকের সহকারী পরিচালক মো. শফি উল্লাহ শিগগির কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি দায়ের করবেন বলে দুদকের একটি সূত্র জানিয়েছে। 

সূত্র জানায়, নানা অপকর্মের অভিযোগে জেলে আটক গোল্ডেন মনির জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারের বাড্ডা পুনর্বাসন প্রকল্পের ৭০টি প্লট আত্মসাতের চেষ্টা করছিলেন। রাজউকের প্রধান কার্যালয়ের কতিপয় কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ৭০টি ফাইল প্রধান কার্যালয় থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল রাজউক এনেক্স ভবনের ৫১৪ কক্ষে। এই কক্ষে বসেই জাল কাগজপত্র তৈরি করে প্লটগুলো আত্মসাতের নীল-নকশা তৈরি করা হয়েছিল। 

দুদক সূত্র জানায়, গোল্ডেন মনিরের ওই পরিকল্পনার কথা জেনে গিয়েছিলেন রাজউকের তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদ। এরপর গত ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর তার নেতৃত্বে ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তারের উপস্থিতিতে আট সদস্যের একটি বিশেষ টিম রাজউক এনেক্স ভবনের পঞ্চম তলার ৫১৪ নম্বর কক্ষে তল্লাশি চালায়। তল্লাশির পর ওই আবাসিক প্রকল্পের ৭০টি প্লটের ফাইল, একটি ল্যাপটপ ল্যাপটপ, রাজউক কর্মকর্তাদের নামে ১৫টি সীল, স্ট্যাম্প প্যাড, সিটি করপোরেশনের ১৭০টি প্রত্যয়নপত্র, একটি ডিমান্ড কালেকশন রেজিস্ট্রার (ডিসিআর) বই, চারটি লিজ ডিডের কপি, বরাদ্দপত্রের কপিসহ বিভিন্ন কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়। 

পরে মতিঝিল থানা পুলিশের মাধ্যমে ওইসব আলামত জব্দ করা হয়।

ওইসব আলামত জব্দের পর জালিয়াতি করে প্লট আত্মসাতের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। এরপর গত বছরের ২১ নভেম্বর স্বর্ণ চোরাচালান, অবৈধ সম্পদ অর্জন, বেআইনিভাবে আগ্নেয়াস্ত্র রাখা, প্রতারণা, জালিয়াতির অভিযোগে গোল্ডেন মনিরকে রাজধানীর বাড্ডায় তার নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। 

দুদকের অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, এনেক্স ভবনের ওই কক্ষে তল্লাশির সময় গোল্ডেন মনিরের কর্মচারী মো. নাসির ও রাজউকের পিয়ন মো. পারভেজ চৌধুরীকে ফাইলগুলো নিয়ে কাজ করতে দেখা গিয়েছিল। পরে নাসির পালিয়ে যায়। আর পারভেজকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

প্লট জালিয়াতির ফাঁদ হিসেবে রাজউক এনেক্স ভবনের ৫১৪ নম্বর কক্ষটি ১৯৮৬ সাল হতে পলি ওভারসীজের মালিক ফজলুল হককে চুক্তিভিত্তিক ভাড়া দেয়া হয়েছিল।ফজলুল হক কক্ষের তিন ভাগের এক ভাগ জনৈক মনির হোসেনকে সাবলেট হিসেবে ভাড়া দেন। 

দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে আটক পারভেজ জানিয়েছেন, প্লটের ৭০টি ফাইল গোল্ডেন মনিরের নির্দেশে রেকর্ডরুম ও সংশ্নিষ্ট শাখা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। জাল কাগজপত্র তৈরি করে প্লটগুলো আত্মসাৎ করতে চেয়েছিলেন গোল্ডেন মনির। এর সঙ্গে রাজউকের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও জড়িত।

জানা গেছে, ওই ৭০টি ফাইল সরিয়ে নিয়ে সরকারি প্লট আত্মসাতের ষড়যন্ত্রে আরও আটজনের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ মিলেছে। তাদেরও এই মামলায় আসামি করা হবে। তারা হলেন, রাজউক উপপরিচালক মো. দিদারুল আলম, সাবেক সহকারী পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-১) মো. নাসির উদ্দিন শরীফ, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর (এস্টেট ও ভূমি-১) মো. আনোয়ার হোসেন, ঊর্ধ্বতন হিসাব সহকারী (নিরীক্ষা ও বাজেট শাখা) এসএম তৌহিদুল ইসলাম, কার্য তদারককারী (মান-২, এস্টেট ও ভূমি-১) মো. আলাউদ্দিন সরকার, পিয়ন মো. পারভেজ চৌধুরী, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও নারায়নগঞ্জের ফতুল্লার মো. নাসির উদ্দিন খান।

দুদক জানায়, অভিযুক্তরা পরস্পর যোগসাজসে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজে অবৈধভাবে লাভবান হওয়া ও অন্যকে লাভবান হতে সহায়তার উদ্দেশ্যে গত ২০১৭ সাল থেকে ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ওইসব ফাইল সরিয়ে ফেলেন। 

অফিসিয়ালি নথি মুভমেন্ট রেজিস্ট্রারে না পাঠিয়ে সরকারি নথিপত্র কৌশলে সরিয়ে ও বিভিন্ন কর্মকর্তার সীল তৈরি করে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে বেআইনিভাবে ভুয়া নথি তৈরি ও লিজ দলিল সম্পাদক করে সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা করা হয়েছে। তারা দন্ডবিধির ৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪০৯/৫১১/১০৯ ধারা ও ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা লঙ্ঘন করেছেন। যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আরও পড়ুন

×