বিশেষ লেখা
যুদ্ধের চাপের চেয়ে নিষেধাজ্ঞার চাপ বড়

ইমতিয়াজ আহমেদ
প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৯:২০
ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটে যে চ্যালেঞ্জগুলো সামনে এসেছে, তা সাময়িক। বর্তমান বিশ্ব কাঠামোয় যে চ্যালেঞ্জগুলো বাংলাদেশের ওপর এসেছে, তা মোকাবিলায় কূটনীতিকদের পেশাদারিত্ব বাড়াতে হবে। পৃথিবী আগে এক মেরু ব্যবস্থা থেকে দ্বিমেরু ব্যবস্থায় এসেছিল। এখন বহুমাত্রিক মেরূকরণের দিকে যাচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলো তাদের বলয় ধরে রাখার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। পৃথিবীর মানুষের আকাঙ্ক্ষা বেড়ে গেছে। ফলে আগের মতো একপেশে ব্যবস্থা রাখা সম্ভব নয়। সে হিসেবে একটি বহুমাত্রিক কাঠামোর দিকে যাচ্ছে। তবে বহুমাত্রিক কাঠামোর সঙ্গে কী ধরনের কূটনীতি হবে, সে বিষয়টি এখনও পরিস্কার হয়নি। সেই উত্তেজনাটিই এখন দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো তার পররাষ্ট্রনীতি। স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে যখন পৃথিবী দ্বিমেরু কাঠামোর মধ্যে ছিল, তখন থেকেই বাংলাদেশ 'সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়' নীতিতে সম্পর্ক চালিয়ে এসেছে। অন্য দেশের কে শত্রু রয়েছে- সেটি বাংলাদেশের চিন্তার বিষয় নয়। বাংলাদেশ নিরাপত্তার দিক থেকে বাড়তি কোনো সুযোগ দিচ্ছে না, যেটা অন্য দেশ হুমকি মনে করতে পারে। ফলে নতুন কাঠামোতে বড় ধরনের সমস্যা বাংলাদেশের হবে না। তবে সাময়িক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
বর্তমান কাঠামোয় যে চ্যালেঞ্জগুলো সামনে এসেছে, তা কাটিয়ে ওঠার বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করবে বাংলাদেশের কূটনীতিকদের পেশাদারিত্বের ওপর। তাঁরা কতটুকু পেশাদার এবং কতটুকু তা ব্যবহার করতে পারবেন- বিষয়টি তার ওপর নির্ভর করছে। আগে থেকেই নিজেকে প্রস্তুত রাখতে কূটনীতিকদের পেশাদারিত্ব বাড়ানো দরকার। বাংলাদেশের কূটনীতিকদের পেশাদারিত্ব আগের চেয়ে বেড়েছে- কোনো সন্দেহ নেই। এখানে শুধু তাঁদের পেশাদারিত্ব বাড়লেই হবে না; এর সঙ্গে গবেষক ও সাংবাদিকদেরও পেশাদারিত্ব বাড়াতে হবে। বর্তমান যে পরিস্থিতি; বহুমাত্রিক যে কাঠামো ব্যবস্থা পৃথিবীতে আসছে, তা থেকে পিছিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ফলে একটু উত্তেজনা ও চ্যালেঞ্জ থাকবেই। তবে চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে সমাধান করা যায়, সেটি নিয়ে প্রস্তুতি রাখতে হবে।
যে কোনো সংকটই একটি সুযোগ তৈরি করে দেয়। এ সংকটে যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তা শুধু বাংলাদেশের ওপর নয়; পুরো বিশ্বের ওপরেই পড়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্বের ওপর যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তার থেকে বেশি চাপ সৃষ্টি হয়েছে নিষেধাজ্ঞার কারণে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পেছনে একটি রাজনীতি রয়েছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র এ নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে আয় বাড়াতে চাচ্ছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি যদি খারাপ হয়, সেই চাপ গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওপরেও পড়বে। বাংলাদেশে যদি পণ্যের দাম বাড়ে, তা আমাদের উৎপাদনের ওপর চাপ বাড়াবে, যার মূল্য দিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকেই। এতে ক্ষতি যুক্তরাষ্ট্রেরই হবে। আশা করব, এ যুদ্ধ যাতে বন্ধ হয়, অথবা যে নিষেধাজ্ঞাগুলো রয়েছে, তা উঠিয়ে নেওয়া হোক। শান্তির মধ্যে যাতে বিশ্ব ফেরত আসে, তাহলেই বহুমাত্রিক কাঠামোর যে নতুনত্ব রয়েছে, তা প্রকাশ পাবে।
যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র বিক্রি করে অর্থনীতি চালায়। অস্ত্র বিক্রির অর্থে মার্কিন নাগরিকরা লাভবান হয়। ফলে এ যুদ্ধটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লাভজনক। তারা এ পরিস্থিতি চালিয়ে যাবে, যতদিন দেশটি অন্য কোনো যুদ্ধ থেকে আরও বেশি ভালো না দেখে। এর আগে ছিল আফগানিস্তানে। তবে এ যুদ্ধ বন্ধ মার্কিন জনগণ এবং সেই সঙ্গে ইউরোপের জনগণের ওপরেও নির্ভর করছে।
- বিষয় :
- বিশেষ লেখা
- যুদ্ধের চাপ