কৃষিতে জৈব পদ্ধতি
ফসলের মাঠে কাজ করছেন কলাপাড়ার নারী কৃষকেরা। ইনসেটে মাসুমা বেগম
মোশারফ হোসেন মিন্টু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)
প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ০৭:৪০
কলাপাড়া উপজেলার ডালবুগঞ্জ গ্রামের সফল সবজিচাষি মাসুমা বেগম। মাসুমার সংসারের সদস্য সংখ্যা ৫ জন। স্বামী আমজাদ হোসেন দিনমজুরের কাজ করেন। একসময় সংসারে অভাব-অনটনের কারণে ঢাকা পাড়ি জমান মাসুমা বেগম; কিন্তু সেখানে পরিবেশের সঙ্গে না মানিয়ে ওঠার কারণে নিজ গ্রামে এসে সবজি চাষ ও হাঁস-মুরগি পালন শুরু করেন। একশনএইড বাংলাদেশের অর্থায়নে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আভাসের সহায়তায় উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাবার বাড়ির আঙিনায় ১৫ শতাংশ জমিতে ৮ ধরনের বীজ থেকে বরবটি, মিষ্টিকুমড়া, করলা, ঢ্যাঁড়শ, মুলাসহ বেগুন, লালশাক ও বাঁধাকপি চাষ শুরু করেন তিনি। ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। সবজি বিক্রি করে ২০ হাজার টাকা আয় করেন। গত বছর কিছু জমিতে ভুট্টা চাষ করেন। তা বিক্রি করেন আট হাজার টাকায়। তাঁর মতো অনেক কৃষক এখন সারমুক্ত ও নিরাপদ সবজি উৎপাদনে ঝুঁকছেন।
মাসুমা সবজি চাষ করে লাভবান হওয়ায় আস্তে আস্তে সবজি চাষের পরিধি বাড়াতে থাকেন। বাবার যেটুকু জমি ছিল, তাতে সবজি চাষ করেন। ওই সবজি নিজে বিক্রি করেন এবং এলাকার লোকজনকে খেতে দেন। মাসুমা জানান, সরকারি-বেসরকারিভাবে সহায়তা পেলে ও কৃষি যন্ত্রাংশ এবং সেচ সুবিধা পেলে আরও লাভবান হতেন। মাসুমাকে বাড়িতে বসে সরাসরি পাইকারদের কম দামে সবজি, ডিম, হাঁস, মুরগি বিক্রি করতে হয়। মাসুমা বলেন, নারীবান্ধব বাজার সৃষ্টি হলে নিজের উৎপাদিত সবজি ওই বাজারে বসে বিক্রি করতে পারতেন। তখন লাভ বেশি হতো। তবে তাঁর সবজি রাসায়নিক বা বিষমুক্ত হওয়ায় ফসলের ভালো দাম পাচ্ছেন। ওই এলাকায় উৎপাদিত সবজি এলাকায় নিয়ে বিক্রি করা হয়। কীটনাশক ছাড়া নিরাপদ সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মাসুমা। বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে ভাগ্য বদলেছে মাসুমার।
নতুন পদ্ধতির চাষাবাদে এ অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন মাসুমা। অল্প দিনেই কৃষক মাসুমা বিষমুক্ত বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তাঁরা সবজি চাষে মাটিতে গরু, হাঁস, মুরগির জৈব সার ব্যবহার করেন। জৈব সার বা কীটনাশক ব্যবহার করায় সম্প্রতি সার-কীটনাশকের দাম বৃদ্ধিতে তাঁদের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি।
একশনএইড বাংলাদেশের অর্থায়নে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আভাসের সহায়তায় ১০ জন নারী কৃষককে নিয়ে মাসুমা গঠন করেছেন 'পায়রা শিউলী কৃষাণী দল'। ওই গ্রুপের সভাপতি মাসুমা। তাঁরা এ বছর ১২০ শতক জমি এক বছরের জন্য লিজ নিয়ে সংস্থা থেকে পাওয়া বীজ ভুট্টা চাষ করেছেন। তাঁদের এ জমি চাষ করতে ৪ হাজার ৮০০ টাকা খরচ হয়েছে। এখন তাঁরা পরির্চযা করেছেন। চারা রোপণের পর মাটি নেড়ে দেওয়া, পানি দেওয়াসহ সব কাজ নিজেরাই করেন। এ দলের সদস্যরা জানান, তাঁদের সেচযন্ত্র না থাকায় সমস্যা হচ্ছে।
- বিষয় :
- কৃষি
- জৈব পদ্ধতি
- সবজি চাষ