উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর কী স্বপ্ন দেখছেন, কী লক্ষ্য নির্ধারণ করছেন ও কোথায় ভর্তি হচ্ছেন– সেটার ওপর নির্ভর করে ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য এই সময়ে যতটা একাগ্রচিত্তে ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে প্রস্তুতি নেওয়া যাবে, ততই ভালো ফল পাওয়ার নিশ্চয়তা বেড়ে যায়। সব ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর জন্য এখন প্রধান লক্ষ্য কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দের বিষয়ে চান্সের জন্য ভর্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়া।

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষে বুয়েট, ঢাবি ও আইইউটির ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম মেফতাউল আলম সিয়ামের মতে, ‘কেউ মেধাবী হয়ে জন্মায় না। সবার ভেতরেই মেধা সুপ্ত ও ঘুমন্ত থাকে। জীবনের লক্ষ্য স্থির করে নিজের সুপ্ত মেধাকে জাগানোর জন্য সাধনা করতে হবে। স্বপ্ন ছোঁয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। সময়ের কাজ সময়েই করতে হবে। আর পাঠ্যবইয়ের বাইরেও পৃথিবীকে জানতে হবে। তাহলেই সাফল্য মিলবে।

মনে রাখতে হবে, প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট রুটিনমাফিক পড়ার অভ্যাস করতে হবে। না বুঝে মুখস্থ করার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসে বুঝে পড়তে হবে এবং সময়ের যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। বিগত বছরের প্রশ্নগুলো সমাধানের পাশাপাশি সেখান থেকে ধারণা নিয়ে প্রতিদিন অনুশীলন করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি শেষ করেই প্রায় প্রত্যেক জ্ঞানপিপাসুর স্বপ্ন থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। এরই মধ্যে বেশকিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাই হাতে একেবারেরই সময় কম।কিছু বিষয়কে সামনে রেখে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।

*ভর্তিযুদ্ধের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে প্রথমেই দরকার একটি সুন্দর পরিকল্পনা। যথার্থ পরিকল্পনার অভাবে অনেকের ভালো প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও শেষমেশ হতাশ হতে হয়।

*যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি শিক্ষার্থীয় অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী, প্রথমেই সেগুলোর একটি তালিকা করে ফেলা দরকার। যতটুকু পড়বেন, তার চেয়ে বেশি প্র্যাকটিস করবেন। নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধে শক্তিশালী করার জন্য প্রচুর প্রশ্ন সলভ করতে হবে।

*ভর্তির ক্ষেত্রে নিজের আগ্রহের  বিষয়কে  প্রাধান্য দেওয়া উচিত সবার আগে। অনেককেই দেখা যায় নিজের ইচ্ছার চেয়ে মা, বাবা, আত্মীয়স্বজনের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেন।

*বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি দোটানায় ভোগেন। অনেককে দেখা যায়, একই সঙ্গে একাধিক বিষয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিতে। এতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

*প্রস্তুতি শুরু করার আগে বই নির্বাচন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ কয়েকদিন পর পর একেক বই থেকে পড়লে সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রস্তুতির ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। তাই আগে থেকেই বই নির্বাচন করে পড়া শুরু করতে হবে। এতে করে টার্গেট নিয়ে পড়া যাবে। যে বই পড়া শুরু করবেন, সেটা শেষ পর্যন্ত পড়তে চেষ্টা করবেন।

*গতানুগতিক পড়াশোনার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি শিক্ষার্থীর প্রস্তুতি আলাদা।

*এইচএসসির রেজাল্টের পরে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, যে বিষয়টাকে আপনি সহজ বা অন্যগুলোর তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ ভেবেছিলেন সেই বিষয়টিতেই ফলাফল খারাপ হয়েছে। অথবা উচ্চতর গণিত, রসায়ন  কিংবা ইংরেজির মতো বিষয়গুলোতে ঠিকই ভালো করছেন কিন্তু বাংলা কিংবা সমাজবিজ্ঞান বিষয়কে সহজ ভেবে তেমন গুরুত্ব দেননি, তাই ভালো নম্বর ওঠেনি– এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।

*বিগত বছরের প্রশ্ন দেখে অধ্যায়ের গুরুত্ব জানা যাবে। তবে এ ব্যাপারটি ভার্সিটিভিত্তিক। অর্থাৎ একটি ভার্সিটির ভর্তি প্রশ্নে যে অধ্যায় থেকে, সচরাচর প্রশ্ন কম আসে তা কেবল ওই ভার্সিটির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তাই প্রতিটি ভার্সিটির ভর্তি শিক্ষার্থীর প্রশ্ন আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যাবে, ওই ভার্সিটির জন্য কোনো অধ্যায় বা টপিক গুরুত্বপূর্ণ। পড়ার পাশাপাশি প্রচুর প্রশ্ন সমাধান অনুশীলন করতে হবে। এর দ্বারা পড়া আরও ঝালাই হবে। প্রশ্নের সঙ্গে পরিচিতি হবে এবং প্রশ্ন দেখার পর উত্তর মাথায় আনার দক্ষতা অর্জিত হবে।

*নিজের সামর্থ্যের যাচাই করে লক্ষ্য ঠিক করা উচিত। লক্ষ্য অনুযায়ী পরিকল্পনা সাজিয়ে অগ্রসর হলে সাফল্য অর্জনের পথ সহজ হয়।

*পড়ালেখার জন্য অনেকেই ‘দৈনন্দিন রুটিন’ করে নেন। রুটিন করার সময় খুব ভালোমতো খেয়াল রাখবেন কত ঘণ্টা পড়ালেখা করছেন, তার চেয়েও বড় কথা হলো ‘কীভাবে’ পড়ালেখা করছেন।  অনেক বেশি কৌশলী হতে হবে। সারাদিন শুধু বই নিয়ে বসে থাকলেই যে পড়ালেখা ভালো হবে, এমন কিন্তু কোনো কথা নেই। রুটিনে বিশ্রামের জন্যও যথেষ্ট সুযোগ রাখতেই হবে।

*যে বিশ্ববিদ্যালয়কে টার্গেট করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন, ইউনিট অনুযায়ী সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত ১০ থেকে ১৫ বছরের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নসংবলিত প্রশ্নব্যাংক বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। এটি সংগ্রহে রাখলে অনেক সুবিধা হবে।

*একটি প্রশ্নব্যাংক দ্রুত সংগ্রহ করে খুব ভালোমতো পড়তে হবে। এতে করে কোন ভার্সিটিতে কীভাবে প্রশ্ন আসে, সে সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা হয়ে যাবে।

*প্রতিদিন দৈনিক পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করতে হবে। ফলে ভর্তি পরীক্ষার সাধারণ জ্ঞান অংশে ভালো নম্বর পাওয়ার সুযোগ থাকবে।