ঢাকা বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

'রাশিয়ার সৈন্যরা আমাকে ধর্ষণ এবং আমার স্বামীকে হত্যা করেছে'

'রাশিয়ার সৈন্যরা আমাকে ধর্ষণ এবং আমার স্বামীকে হত্যা করেছে'

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২২ | ০২:৫০ | আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২২ | ০৪:১১

কয়েকদিন আগে রুশ সেনারা  ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ থেকে সরে গেছে। কিন্তু সেখানে অবস্থানকালে তারা এমন সব কাজ করেছে সেই ট্রমা হয়তো কোনোদিনই কাটিয়ে উঠতে পারবেন না কিয়েভ ও আশেপাশের এলাকার বাসিন্দারা।

বিবিসির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ইউক্রেনের এক নারীর ওপর রুশ সেনাদের নির্যাতনের কথা।

আন্নার (ছদ্ম) বয়স ৫০ বছর। কিয়েভ থেকে ৭০ কিলোমিটার পশ্চিমে শান্ত এক গ্রামীন পরিবেশে বাস করতেন।

আনা জানান, গত ৭ মার্চ তিনি তার স্বামীর সঙ্গে বাড়িতেই ছিলেন । এই সময় এক রুশ সেনা তাদের বাড়িতে ঢোকেন। অস্ত্র দেখিয়ে তাকে বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি খালি বাড়িতে নিয়ে যান। তারপর তাকে জামাকাপড় খুলে ফেলার নির্দেশ দেন। তা না হলে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেন। পরে তাকে ধর্ষণ করে ওই রুশ সেনা।   

আনার স্বামীকে এখানেই সমাহিত করা হয়েছে

আন্না বলেন, 'ধর্ষণকারী ওই সেনা তরুণ ও পাতলা গড়নের, হয়তো চেচেন যোদ্ধা।' আনা জানান, ওই মুহূর্তে আরও চার রুশ সেনা সেখানে ঢুকে পড়েন।

আনা ভেবেছিলাম, তারাও তাকে ধর্ষণ করবে। কিন্তু তারা আসলে ওই সেনাকে নিতে এসেছিলেন।

ধর্ষণকারী ওই সেনা চলে যাওয়ার পর আনা বাড়িতে ফেরেন। সেখানে এসে দেখেন তার স্বামীর পেটে গুলি করা হয়েছে।

আনা বলেন, 'আমার স্বামী আমাকে বাঁচানোর জন্য পিছনে দৌড়ানোর চেষ্টা করেছিল। তাই তাকে গুলি করা হয়। এরপর আমরা দুজন পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেই। কিন্তু গোলাগুলি চলার কারণে আহত স্বামীকে হাসপাতালে নিতে পারিনি। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বিনা চিকিৎসায় দুইদিন থাকার পর আমার স্বামীর মৃত্যু হয়।'

জীবনে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সেই ঘটনার বর্ণনা দিতে গেয়ে অঝোরো কাঁদছিলেন আন্না।

প্রতিবেশিদের নিয়ে বাড়ির পিছনে স্বামীকে কবর দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

আন্না জানান, রুশ যে সেনারা তাকে বাঁচান, তারা কয়েকদিন তাদের বাড়িতেই ছিলেন। তারা চলে যাওয়ার পর বাড়িতে ফিরে মাদক ও ভায়াগ্রা পড়ে থাকতে দেখেন। আন্নার ভাষায়, 'বেশিরভাগ রুশ সেনা খুনি, ধর্ষক এবং লুটেরা। এদের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই ভালো।'

আন্নার বাড়ির কাছে আরেক নারীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া আরও একটি ঘটনা উঠে আসে বিবিসির অনুসন্ধানে।

আন্নাকে ধর্ষণের আগে ৪০ বছর বয়সী এক নারীকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়। সেটিও ঘটান আন্নাকে ধর্ষণকারী ওই চেচেন যোদ্ধা।

প্রতিবেশীরা জানান, ওই নারীকে তার বাড়ি থেকে বের করে আনা হয়। তারপর তাকে কাছাকাছি একটি খালি বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়। পুরো বাড়িতে ছড়িয়ে ছিল রক্তের দাগ। ঘরের এক কোণে, আয়নাতে লিপস্টিক দিয়ে একটি লেখা ছিল, 'অপরিচিত কারো হাতে নির্যাতিত ও নিহত এই নারীকে কবর দিয়েছে রুশ সেনারা।'

পরে ইউক্রেনের পুলিশ বাগান থেকে ওই নারীর লাশ তোলে। বিবস্ত্র লাশ। মৃতদেহের গলায় গভীর, লম্বাভাবে কাটা ছিল।

রাশিয়ান সৈন্যরা পুড়িয়ে দেয় এই বাড়িটি

ইউক্রেন পুলিশের কিয়েভ শাখার প্রধান অ্যান্দ্রি নেবিতভ বিবিসিকে আরও একটি ধর্ষণের ঘটনা বলেন। এই ঘটনাটি কিয়েভ পুলিশ তদন্ত করছে বলে জানান।

নেবিতভ কিয়েভের পশ্চিমে ৫০ কিলোমিটার দূরে বসবাসরত তরুণ এক দম্পতি ও তাদের সন্তানের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ এক ঘটনার কথা জানান। 

তিনি বলেন, গত ৯ মার্চ রুশ সৈন্যরা ওই দম্পতির বাড়িতে ঢোকে। স্বামী তখন স্ত্রী-সন্তানকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। রুশ সেনারা তখন তাকে উঠানে দাঁড় করিয়ে গুলি করে। এরপর দুই সৈন্য ওই নারীকে ধর্ষণ করে। এ সময় তাদের সন্তানকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় রুশ সেনারা। 

নেবিতভ জানান, রুশ সৈন্যরা চলে যাওয়ার সময় ওই বাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং তাদের কুকুটিকেও গুলি করে হত্যা করে।

ভুক্তভোগী ওই নারী তখন ছেলেকে নিয়ে সেখান পালিয়ে প্রাণে বাঁচেন। 

ইউক্রেনের মানবাধিকার বিষয়ক সরকারি কর্মকর্তা ল্যুদমিলা দেনিসোভা বলেন, রুশ সেনারা নিয়মিতই ইউক্রেনের নারীদের ধর্ষণ করছেন এবং ঘটনাগুলো তারা লিখে রাখছেন। বিবিসিকে বুচা শহরেও রুশ সেনাদের দলবদ্ধ একটি ধর্ষণ ঘটনার বিবরণ দেন তিনি।

ল্যুদমিলা দেনিসোভা বলেন, 'বুচায় একটি বাড়ির বেসমেন্ট দখলের সময় ১৪ থেকে ২৪ বছর বয়সী প্রায় ২৫ নারীকে ধর্ষণ করে রুশ সেনারা। তাদের মধ্যে নয়জন এখন গর্ভবতী।' হেল্পলাইন ও অ্যাপে প্রতিদিন রুশ সেনাদের হাতে ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ পাচ্ছেন বলে জানান তিনি। 

এসব ঘটনার জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিচারে জাতিসংঘে একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানান ল্যুদমিলা। 

ধর্ষণের শিকার আন্না বিবিসির মাধ্যমে ভ্লাদিমির পুতিনকে একটি বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি পুতিনের কাছে জানতে চাই, কেন এমন হচ্ছে? আমরা কি প্রস্তর যুগে বাস করছি! কেন তারা আলোচনা করতে পারে না? কেন ইউক্রেনে হত্যাযজ্ঞ চালানো হচ্ছে?'

আরও পড়ুন

×