যে গাছের অশ্রু থেকে তৈরি আরবি লোবান

সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৪ | ১৬:২৩ | আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৪ | ১৭:৪৮
মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা মেলে মোহময় এক সুগন্ধীর। নাম তার ফ্র্যাঙ্কিনসেন্স, আমরা যাকে চিনি লোবান নামে। এ শুধু সুগন্ধী নয় বরং তার সাথে জড়িত রয়েছে বিভিন্ন দেশের পৌরাণিক কাহিনি, বিচিত্র সব গল্পগাঁথা। এর সুঘ্রাণ কারও কাছে আত্মিক শুদ্ধতার প্রতীক, কারও কাছে শৈশবের স্মৃতির।
লোবানের ইংরেজি নাম ফ্র্যাঙ্কিনসেন্স, যা এসেছে প্রাচীন ফ্রেঞ্চ শব্দ ফ্রাংক এনসেন্স থেকে। এর অর্থ খাঁটি ধূপ অথবা খাঁটি আলো।
ওমান এবং সোমালিয়ার প্রচলিত গল্পটি হলো, স্থানীয় এক তরুণী প্রেমে পড়ে যায় এক প্রেতাত্মার। এহেন নিষিদ্ধ প্রেমের পথে হাঁটার কারণে তাকে গাছে রূপান্তরিত করা হয়। কিন্তু কখনোই প্রথম প্রেম ভুলতে পারেনি তরুণী। ফলে সেই গাছ থেকে অনবরত ঝরতে থাকে অশ্রু, সেই অশ্রুই রূপ নেয় লোবানে।
বহু বছর ধরে আরবের এক গুপ্তধন হয়ে থেকেছে লোবান। মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া, আফ্রিকায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গল্পগাঁথা প্রচলিত রয়েছে লোবান বা ফ্র্যাঙ্কিনসেন্স নিয়ে। খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ সালেও মিশরিয় প্যাপিরাসে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। রোমান দার্শনিক প্লিনি একে অভিহিত করেন রহস্য এবং প্রাচুর্য হিসেবে।
কোথা থেকে আসে এই লোবান, কীভাবে উৎপাদন হয়, এমনকি এর গাছ দেখতে কেমন, তা নিয়ে ঘোর বিভ্রান্তি ছিল সে সময়ে। কয়েক হাজার বছর ধরে এর বাণিজ্য চলে মিশর, মেসোপটেমিয়া এবং ভূমধ্যসাগরে। খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ থেকে খ্রিষ্টাব্দ ২০০ পর্যন্ত এর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। স্বর্ণের চেয়েও মূল্যবান ভাবা হতো একে।
আসলে কোথা থেকে আসে লোবান?
আরব পেনিনসুলার দক্ষিণ তীর ঘেঁষে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বসওয়েইলা গাছের বন। এসব গাছের নিঃসৃত রেজিনই বাতাসে ঘন হয়ে তৈরি করে লোবান। এরপর একে উত্তপ্ত কয়লার ওপর রেখে ব্যবহার করা হয়, ঘরময় ছড়িয়ে যায় সুবাস।
আরব সংস্কৃতিতে অতিথি আপ্যায়নের উপাদান এই লোবান। অতিথি এলে লোবানের ধূপ জ্বালানো হয়। বলা হয়ে থাকে, এতে শান্তি ও স্বস্তিবোধ করবেন, নিজের ঘরের মতোই আরাম পাবেন অতিথি। শুধু তাই নয়, প্রবীণ আরবরা ব্যবহার করতেন এ সুগন্ধী, ফলে অনেক তরুণদের তা মনে করিয়ে দেয় শৈশবের স্মৃতি।
একসময়ে হেমলক বিষের প্রতিষেধক হিসেবে একে উল্লেখ করেন দার্শনিক প্লিনি। চৈনিক ঔষধবিদ্যার বই মিংইয়ে বিয়েলুতেও এর নাম এসেছে। গ্রিক দার্শনিক হেরোডোটাস এর গাছকে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, গাছগুলো বিভিন্ন রঙের, পাখনাবিশিষ্ট ছোট ছোট সর্প দ্বারা পরিবেষ্টিত। বর্তমান সময়েও লোবানের কদর অটুট। এর তেলের ঔষধি গুণাবলি রয়েছে বলে বিশ্বাস আছে। ত্বকের যত্নে, হৃদ্যন্ত্রের যত্নে, অ্যাজমা উপশমে এর ব্যবহার রয়েছে। চীন ও ভারতে একে ব্যবহার করা হয় শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে।
- বিষয় :
- মধ্যপ্রাচ্য
- ঐতিহ্য
- সুগন্ধী