ইমরান খানকে মুক্ত করতে বুশরা বিবির বিক্ষোভ, তারপর কী হয়েছে?
ছবি: বিবিসি
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪ | ১২:৫২ | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৪ | ১৩:৪১
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ও দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তির দাবির আন্দোলনে নতুন মাত্রা এসেছিল তার দলের কর্মী সমর্থক ও স্ত্রী বুশরা বিবির ডি চক অভিমুখে মার্চের মাধ্যমে।
ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে ২৪ নভেম্বর ইসলামাবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছিল পিটিআই। এতে ইমরান সমর্থক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর একের পর এক নাটকীয় ঘটনা সামনে আসতে থাকে। টানা আন্দোলনের ফলে গণগ্রেপ্তার ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, নেতাকর্মীদের হতাহত হওয়ার ঘটনা প্রবল সম্ভাবনাময় আন্দোলনকে থামিয়ে দেয়।
বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় ইমরান ও তার স্ত্রীসহ দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পরে ৮টি মামলা হয়েছে। বুধবার (২৭ নভেম্বর) ইসলামাবাদ পুলিশ বাদী হয়ে এ মামলা করে।
ইমরান খানকে মুক্ত করে ঘরে ফেরার ঘোষণা দেওয়ার পর স্ত্রী বুশরা বিবি ইসলামাবাদ অভিমুখে লংমার্চ শুরু করলে দেশটির সরকার ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পক্ষ থেকে বাধা আসতে থাকে। তবে পিটিআইয়ের আন্দোলন যখন তুঙ্গে ওঠে তখন পুড়ে যাওয়া লরি, খালি টিয়ার গ্যাসের শেল আর ইমরান খানের পোস্টার বড় রকমের প্রতিবাদ তৈরি করেছিল। যার ফলশ্রুতিতে পুরো রাজধানীকে লকডাউনে পাঠাতে হয়েছিল পাকিস্তান।
গত মঙ্গলবার একটি সাদা শাল গায়ে জড়িয়ে, সাদা পর্দায় মুখ ঢেকে তিনি নেমে পড়েছিলেন তার স্বামীকে মুক্ত করতে। শহরের প্রান্তে একটি শিপিং কনটেইনারের ওপরে দাঁড়িয়ে তিনি এসময় ভাষণে বলেন, আমার সন্তান এবং আমার ভাইয়েরা, আপনাকে আমার সঙ্গে দাঁড়াতে হবে, এটা শুধু আমার স্বামীর বিষয় নয়, এটা পাকিস্তান এবং তার নেতার বিষয়।
বুশরা বিবির এমন নজিরবিহীন ভাষণকে অনেকেই রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তনের দৃষ্টিতে দেখছেন।
জানা গেছে, ইমরান খানের তৃতীয় স্ত্রী বুশরা বিবি বিয়ের পর থেকে পুরোটা সময়ই ছিলেন রহস্যে আবৃত। জনসাধারণের দৃষ্টির বাইরে ছিলেন তিনি। ইমরান খানের সঙ্গে দেখা হওয়ার অনেক আগে থেকেই তিনি একজন আধ্যাত্মিক গাইড ছিলেন। তার শিক্ষা, সুফি ঐতিহ্যের মূলে, অনেক অনুসারীকে আকৃষ্ট করেছিল- যার মধ্যে খান নিজেও ছিলেন।
তবে বুশরা কি রাজনীতিতে তার পা বাড়াচ্ছেন এই আন্দোলনের মাধ্যমে- নাকি ইমরান খানের কারাগারে থাকার সময়টুকুতে তার দলকে চাঙ্গা রাখার জন্য কৌশলী পদক্ষেপ নিয়েছেন তা এখনই অনুমেয় নয়।
এদিকে ইসলামাবাদে মিছিল চলাকালে শত শত বিক্ষোভকারীকে গুলি করা হয়। ক্র্যাকডাউনে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১০ হাজারের বেশি বিক্ষোভকারীকে সামলাতে রাজধানীতে প্রায় ২০ হাজার নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হয়। সংঘর্ষে আধা সামরিক বাহিনীর চার সেনাসহ বেশ কয়েকজন নিহত হন।
পরদিন বুধবার সকালে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বুশরা বিবিকে দেখা যায়নি। আগের দিনের আন্দোলনের মাঝেই তিনি ঘটনাস্থল থেকে সরে পড়েন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি গাড়ি বদল করছেন এবং ঘটনাস্থল ছেড়ে যাচ্ছেন। তবে ওই ভিডিওতে বুশরা বিবিই ছিলেন কিনা সে ফুটেজ যাচাই করতে পারেনি বিবিসি।
এদিন বিক্ষোভের পর গণগ্রেপ্তারের ঘটনায় শেষপর্যন্ত তথাকথিত চূড়ান্ত লংমার্চ প্রত্যাহার করে পিটিআই। তবে বুশরা বিবির ঠিক কী হয়েছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
এ ঘটনায় সামিয়া নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আলো হঠাৎ নিভে গেল। ডি চক অন্ধকারে ডুবে গেল। সবাই তাদের জীবনের জন্য দৌড়াচ্ছিল। পরে ইসলামাবাদের একটি হাসপাতাল থেকে তিনি বিবিসি উর্দুকে বলেন, এটি ছিল কেয়ামত বা যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি।
পাকিস্তান সরকারের মুখপাত্র আতাউল্লাহ তারার বিবিসিকে বলেছেন, হাসপাতালগুলো বন্দুকের গুলিতে আহত ব্যক্তিদের গ্রহণ বা চিকিৎসার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
কিন্তু একজন ডাক্তার বিবিসি উর্দুকে জানান, তিনি এক রাতে গুলির আঘাতের জন্য এত অস্ত্রোপচার কখনও করেননি। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা এমন গুরুতর ছিল যে, আমাদের অ্যানেস্থেশিয়ার জন্য অপেক্ষা করার পরিবর্তে সরাসরি অস্ত্রোপচার শুরু করতে হয়েছিল।
নানা নাটকীয়তার পর পিটিআই বিক্ষোভ কর্মসূচি ‘সাময়িক স্থগিত’ করার ঘোষণা করেছে বলে বুধবার বেসরকারি টিভি স্টেশন জিও নিউজ জানায়। পিটিআইয়ের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের পেশোয়ার শহরের সভাপতি মোহাম্মদ আসিম বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, তাদের দল ‘যথাযথ সলাপরামর্শের পরে নতুন কৌশল নির্ধারণ করবে।
তিনি বলেন, বুশরা বিবি এবং খাইবার পাখতুনখোওয়ার মুখ্যমন্ত্রী আলি আমিন গন্ডাপুর ইসলামাবাদ থেকে ‘নিরাপদে’ ফিরে এসেছেন। পুলিশ বুশরা বিবিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।
অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে শুক্রবার থেকে পুলিশ ইমরান খানের চার হাজারের বেশি সমর্থককে গ্রেপ্তার করেছে এবং দেশের কিছু অংশে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করা হয়। পরে তা সচল করা হয়।