অবৈধ চিকিৎসালয়বিরোধী অভিযান চলুক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০
অবৈধ হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চলমান অভিযানের মৃদুমন্দ গতি নিঃসন্দেহে হতাশাজনক। বুধবার সমকাল যেমন জানাইয়াছে, ১৮ সেপ্টেম্বর শুরু হইলেও অদ্যাবধি মাত্র ১৬৪টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তাহারা ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়াছে। অথচ গত বৎসরের মে মাসে দেশব্যাপী অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে একই সংস্থার অভিযানের প্রথম দিবসেই ৫২৯টি অবৈধ হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংক বন্ধ হয়।
ইহাতে তখন বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতে বেশ ইতিবাচক প্রভাব পড়ে; স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নূতন লাইসেন্স ও নবায়নের নিমিত্তে বিপুলসংখ্যক আবেদনপত্র জমা হয়। অভিযান আরম্ভের পূর্বে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শর্ত দিয়াছিল, প্রতিটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের পক্ষে পরিবেশ ছাড়পত্র প্রদর্শন; প্রশিক্ষিত এবং সরকারের অনুমোদনপ্রাপ্ত চিকিৎসক ও অন্যান্য জনবল দিয়া প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালু রাখিতে হইবে। সেবাপ্রত্যাশীদের আকাঙ্ক্ষা পূরণে এই সকল ন্যূনতম শর্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলিয়া আমরা মনে করি। কিন্তু দুঃখজনক, নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদারকির অনুপস্থিতিতে দেশের বেসরকারি মালিকানাধীন অধিকাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান এগুলি লঙ্ঘন করিয়া আসিতেছিল। এই প্রেক্ষাপটে সচেতন সকল মহলের ন্যায় আমরাও উক্ত অভিযানকে স্বাগত জানাইয়াছিলাম। কিন্তু রহস্যজনকভাবে উক্ত অভিযান প্রায় বন্ধ ঘোষিত হয়।
একদা দেশে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বলিতে মূলত ছিল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত সরকারি হাসপাতাল। অভিযোগ অল্প-বিস্তর থাকিলেও সেই সকল হাসপাতালে চিকিৎসার মান জনমনে সন্তোষজনকই ছিল। কিন্তু ১৯৮০-এর দশকে বিশেষ করিয়া নয়া উদারতাবাদের খপ্পরে পড়িয়া শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট খাতে বেসরকারীকরণের জিকির তোলা হয়। ইহার প্রভাবে একদিকে স্বাস্থ্যসেবা খাতে সরকারি বিনিয়োগ হ্রাস পাইতে থাকে; অন্যদিকে বেসরকারি পর্যায়ে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপিত হইলেও উহাতে তদারকির জন্য কার্যকর ব্যবস্থা ও দক্ষ জনবল গড়িয়া তোলা হয় নাই। এই সুযোগে বিশেষত চলমান শতকের সূচনাকালেই দেশের সর্বত্র ব্যাঙের ছাতার ন্যায় বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গজাইয়া ওঠে; অবশ্য ভালো মানের অনেক হাসপাতাল ইতোমধ্যে বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা পাইয়াছে।
আশ্চর্যজনক, স্বাস্থ্যসেবায় বেসরকারি খাতের প্রবেশাধিকার দিবার এত দশক পরও কার্যকর তদারকি ব্যবস্থার অনুপস্থিতিতে চলমান অভিযানের ধীরগতির জন্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জনবল সংকটকে দায়ী করিয়া থাকেন। গত বৎসরের অভিযানকালে উহা বন্ধে প্রভাবশালী বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকদের তৎপরতা আমরা দেখিয়াছি। বর্তমান ধীরগতির অভিযানের পশ্চাতেও যে একই কারণ ক্রিয়াশীল নাই– উহা নিশ্চিত করিয়া বলা যায় না।
সাম্প্রতিক করোনাকালে স্বাস্থ্য খাতের কেলেঙ্কারি একাদিক্রমে জনসমক্ষে আসিয়াছে। এইগুলির পশ্চাতে স্বাস্থ্য বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার ভূমিকার কথাও তখন বেশ প্রচার পাইয়াছিল। এখনও ঐ ভূত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হইতে পাততাড়ি গুটাইয়াছে– এমন দাবি করা যায় না। আমরা তাই প্রত্যাশা করি, বিষয়টি অনুপুঙ্খ যাচাইপূর্বক নিয়ম লঙ্ঘনকারী স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানসমূহকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনয়নে আশু কার্যক্রম গৃহীত হইবে।
- বিষয় :
- অবৈধ চিকিৎসালয়
- সম্পাদকীয়
