ঢাকা রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

আলোচনার পক্ষে সবাই, ছাড় দেবে না কেউ

সংলাপের বিকল্প নেই, হতে হবে সংবিধানের আলোকে

সংলাপের বিকল্প নেই, হতে  হবে সংবিধানের আলোকে

ড. আব্দুর রাজ্জাক, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী

প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৩ | ০০:৪১ | আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৩ | ০০:৪১

সংলাপের মাধ্যমে চলমান রাজনৈতিক সংকটের উত্তরণ সম্ভব। তবে রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনায় বসতে নিজ নিজ শর্তে অনড়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধানের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপি রাজি হলে আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছে। সরকার সমর্থকরা তাদেরই সুরে কথা বলছে। বিএনপির ভাষ্য, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগে রাজি হলেই কেবল হতে পারে নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে আলোচনা। একই মত তাদের সমমনাদের। তবে দুই বলয়ের বাইরে থাকা দলগুলোর মতো বিশিষ্টজন আলোচনার পক্ষে মত দিয়েছেন। সংঘাত এড়াতে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন তারা। ‘চলমান রাজনৈতিক সংকট ও উত্তরণ’ শীর্ষক সমকাল সংলাপে এমন অভিমত উঠে এসেছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সমকাল কার্যালয়ে উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খানের সঞ্চালনায় এ সংলাপ হয়।

নির্বাচন নিয়ে জাতি এখন প্রশ্নের মুখে। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। আওয়ামী লীগ সে নির্বাচনে বিরাট জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসে। অথচ এ নির্বাচন নিয়েও বিএনপি প্রশ্ন তুলে বলেছিল, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়নি।

সাজানো নির্বাচন হয়েছে।’ ১৯৯৫ ও ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আন্দোলনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু এ সরকার ব্যবস্থা নিয়ে কখনও জাতীয় ঐকমত্য হয়নি। বিশেষ করে ২০০১ সালের নির্বাচন ছিল প্রচণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ। বিচারপতি লতিফুর রহমান প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের বদলিসহ কিছু প্রশ্নবিদ্ধ পদক্ষেপ নেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে টাঙ্গাইল-১ আসনে প্রার্থী ছিলাম। নির্বাচনের পরদিন ২ অক্টোবর সকালে বিটিভি ও বেতারের খবরে আমার প্রতিদ্বন্দ্বীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। কিন্তু প্রতিক্রিয়ায় হাজারো মানুষ লাঠি হাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও করলে এক পর্যায়ে আমাকে ৪৪ হাজার ভোটে জয়ী ঘোষণা করা হয়।

বিএনপি সব সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিপক্ষে ছিল। দলটির নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘পাগল ও শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নন।’ ২০০১ সালের অভিজ্ঞতার পরও আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেয়েছিল। কিন্তু এখন সরে এসেছে। কারণ, গোটা দুনিয়ায় ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়। আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠু নির্বাচনের দায়িত্ব দিতে চায়। সংবিধানই সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজনে বাজেটসহ সব ক্ষমতা ইসিকে দিয়েছে। এখন সে ক্ষমতা প্রয়োগের মতো সাহসিকতাপূর্ণ ব্যক্তিত্ব যদি না পায়, তাহলে কে দায়িত্ব নেবে?

২০১৪ সালে বড় দল বিএনপি নির্বাচনে না আসায় ভোটে তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি। এ জন্য নির্বাচনকে প্রভাবিত করার দরকারই পড়েনি। ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৮ সালে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি কিছু আসনে পাসও করেছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার সর্বোচ্চ আদালত বাতিল করেছেন। বলা হচ্ছে, বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক অবসরের পর রায় লিখেছেন। অবসরের পর রায় লেখার আরও নজির আছে। পঞ্চদশ সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল এবং অন্যান্য বিষয়কে অপরিবর্তনীয় করা হয়নি। বলা হয়েছে, ’৭২-এর সংবিধানের মৌলিক কাঠামো বদল করা যাবে না। ওই সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি ছিল না। ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তা এসেছে। ধারাবাহিকতা ও উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার। সন্ত্রাস ও সহিংসতা গ্রহণযোগ্য হবে না, জনগণ মোকাবিলা করবে। বিএনপি কী করবে, তা তারাই ঠিক করুক। আশা করি, বিএনপির শুভবুদ্ধির উদয় হবে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বা সংকট যাই বলুন, তা মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে।

বিএনপি ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর স্বঘোষিত খুনিদের পুনর্বাসন করে। ২০১১ সালে খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘সাঈদী, নিজামী কেউ যুদ্ধাপরাধী নন।’ এর মাধ্যমে জাতিকে বিভক্ত করা হয়েছে। এ বিভক্তি তো নির্বাচনের মাধ্যমে দূর হবে না। তবে সংলাপের বিকল্প নেই। যে কোনো রাষ্ট্রীয় সমস্যা সমাধানে সংলাপে যেতে হবে। কথা বলতে হবে। তবে আমাদের মূল শর্ত– সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হতে হবে। এতে রাজি থাকলে আলোচনা টেবিলে বসে বলতে পারেন, ‘আইজিপি বদল করতে হবে ইত্যাদি।’ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আরও প্রস্তাবনা থাকলে আলোচনা করা যেতে পারে। ভারত ও শ্রীলঙ্কায় যদি রাজনৈতিক দলের সংলাপ হয়, তাহলে বাংলাদেশে কেন হবে না? বিএনপি তো কিছুই মানছে না। আমরা বলছি না, আলোচনায় বসব না। বিএনপি বলছে, শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর হতে পারে। কিন্তু সে সুযোগ তো নেই।

আরও পড়ুন

×