মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সহায়তায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে মানবিক আবেদন রাখার পাশাপাশি এ সংকট সমাধানে জোরালো উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর)। এদিকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের বর্বর হত্যাযজ্ঞকে 'গণহত্যা'র স্বীকৃতি দিয়ে নির্যাতিত এই জনগোষ্ঠীকে নিজ দেশে ফেরানোর বিষয়ে বৈশ্বিক প্রচেষ্টা গ্রহণের উদ্যোগ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তাকে চিঠি দিয়েছে ৩৫টি সংগঠন ও সংস্থা। একই ধরনের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে কক্সবাজার সিএসও এনজিও ফোরাম (সিসিএনএফ)।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের উদ্যোগে রোহিঙ্গাদের জন্য অনুষ্ঠেয় দাতা সম্মেলন সামনে রেখে এ আহ্বান জানিয়েছে সংশ্নিষ্ট সংস্থা ও ফোরাম।

জেনেভায় জাতিসংঘ কার্যালয়ে ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র আন্দ্রেস মাহেকিক এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তার প্রবাহ ভয়াবহভাবে কমে গেছে। চাহিদার অর্ধেক তহবিলও সংগ্রহ করা যায়নি। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তায় ২০২০ সালের জন্য আন্তর্জাতিক দাতাদের কাছে ১০০ কোটি ডলার অনুদান চাওয়া হয়েছিল। করোনা মহামারির জন্য রোহিঙ্গা সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে, যা নতুন চাহিদা তৈরি করেছে।

এদিকে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় কাজ করা ৩৫ সংগঠন ও সংস্থা যৌথভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেওর কাছে চিঠি লিখেছে। চিঠিতে পম্পেরও প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে- তহবিল সংগ্রহের পাশাপাশি দাতা সম্মেলনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার প্রকৃতপক্ষে কীভাবে বর্বরতা চালিয়েছে, তা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরে এই হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করুন। এর ফলে যেমন রোহিঙ্গারা নিজ দেশে স্বেচ্ছায় ফেরার আগ্রহ পাবে, তেমনি মিয়ানমারকে জবাবদিহির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাবে।

অন্যদিকে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় তহবিল ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকার, স্থানীয় সিএসও, রোহিঙ্গা প্রতিনিধি, আরআরআরসি, জেলা প্রশাসক ও আইএসসিজির অংশগ্রহণে একটি একক কর্তৃপক্ষ গঠনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে এ সংকট নিয়ে কাজ করা সিসিএনএফ। একই সঙ্গে সিসিএনএফ নেতারা দাতা ও উন্নত দেশগুলোর বর্তমান ভূমিকার সমালোচনা করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের শিগগিরই মিয়ানমারে ফেরার সুযোগ সৃষ্টি করতে ধনী দেশ ও জাতিসংঘের প্রচেষ্টাকে দ্বিগুণ জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন।

সিসিএনএফের কো-চেয়ার এবং কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী, সিসিএনএফের কো-চেয়ার ও পালস-এর নির্বাহী পরিচালক এবং কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী, মুক্তি কক্সবাজারের প্রধান নির্বাহী বিমল দে সরকার, আইডিএফের নির্বাহী পরিচালক জহিরুল আলম (চট্টগ্রাম), হেল্প কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম (উখিয়া), অগ্রযাত্রার সভাপতি নীলিমা আক্তার চৌধুরী (কক্সবাজার) এবং সিসিএনএফের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম।

মন্তব্য করুন