ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫

রংপুর বিভাগ

অরক্ষিত বহু লেভেল ক্রসিং, বাড়ছে ঝুঁকি

অরক্ষিত বহু লেভেল ক্রসিং, বাড়ছে ঝুঁকি

লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে রেললাইন পার হন স্থানীয়রা। এতে মাঝেমধ্যেই ঘটে দুর্ঘটনা। রংপুরের কাউনিয়ার সাধুর বাজার - সমকাল

স্বপন চৌধুরী, রংপুর

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৩ | ০৪:৫৩ | আপডেট: ২০ আগস্ট ২০২৩ | ০৫:৫০

রংপুর বিভাগে যত্রতত্র রেলের অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং। গেটম্যান না থাকায় ক্রসিংগুলো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। গত বছর দুর্ঘটনায় বিভাগের আট জেলায় ৫৬ জন নিহত হন। শতাধিক মামলা হলেও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের। দায় এড়াতে কিছু ক্রসিংয়ে তারা সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড লাগিয়েছে। যদিও এসব সাইনবোর্ড সহজে চলাচলকারীদের চোখে পড়ে না।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলওয়ের পাকশী ও লালমনিরহাট ডিভিশনের ১ হাজার ৫৬৮ কিলোমিটার রেলপথে লেভেল ক্রসিং রয়েছে ১ হাজার ৪২৩টি, যার ২৭১টিই অবৈধ। অনুনোমোদিত এসব ক্রসিংয়ের বেশির ভাগ তৈরি হয়েছে এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ বিভাগের উদ্যোগে। বাকিগুলো তৈরি করেছে স্থানীয়রা। গোটা বিভাগে অন্তত ছয় শতাধিক লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান দূরে থাক, নেই প্রতিবন্ধক বারও। লালমনিরহাট ডিভিশনের অধীনে ৪৯২টি বৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে রেলওয়ে ট্রাফিক অ্যান্ড সিগন্যালের ১১৬ ও রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগের রয়েছে ৩৭৬টি। এগুলোর অর্ধেকের বেশি ক্রসিং অরক্ষিত। এখানে ছোট সাইনবোর্ডে সতর্ক করা হয়েছে।

রংপুরের কাউনিয়ায় ব্রিটিশ আমলের জংশন স্টেশন দিয়ে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুরসহ বিভাগের আট জেলার মানুষ যাতায়াত করে। প্রতিদিন এ জংশন স্টেশন দিয়ে দুটি আন্তঃনগরসহ ২৮টি ট্রেন চলাচল করে। কাউনিয়ার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন দেখা গেছে, রেলওয়ে জংশনের আওতায় সড়কগুলোর ১২টি লেভেল ক্রসিংয়ের কোনোটিতে গেট নেই। যেগুলোতে আছে, সেগুলোও চলছে জোড়াতালি দিয়ে। জংশন স্টেশন থেকে মীরবাগ হয়ে রংপুর স্টেশন পর্যন্ত গের্দ্দ বালাপাড়া, সাব্দি মৌলটারি, শহীদবাগ বাজার, বল্লভবিষু, সাধু স্কুল মোড়, মীরবাগ বিজলের ঘুন্টি লেভেল ক্রসিং, কাউনিয়া থেকে অন্নদানগর স্টেশন যেতে রেল কলোনি ও পশ্চিম কেবিন, কাউনিয়া মো. হোসেন উচ্চ বিদ্যালয় থানা রোড, খোপাতী মজির গেট, কুটির পাড় ক্রসিং, কাউনিয়া থেকে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম স্টেশন যেতে পূর্ব কেবিন কুলিপাড়া ও পাঞ্জরভাঙ্গা বাঁধের রাস্তার ক্রসিংয়ে গেট বা গেটম্যান পাওয়া যায়নি।

ফলে ঝুঁকি নিয়ে যান ও মানুষকে এসব ক্রসিং পার হতে হচ্ছে। কাউনিয়া রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার হোসনে মোবারক বলেন, একাধিকবার চাহিদা দিয়েও কাজ হয়নি। স্টেশনের জনবল সংকটও পূরণ করছে না কর্তৃপক্ষ।

রংপুর নগরীতেও বেশ কয়েকটি ক্রসিং অরক্ষিত। এলাকাবাসীর পক্ষে থেকে বারবার রেলওয়ে বিভাগে যোগাযোগ করা হলেও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। পাটবাড়ি এলাকার কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, এখানে কোনো গেটম্যান নেই। মাঝেমধ্যে পথচারীরা নিজ উদ্যোগে চিৎকার করে ট্রেন আসার খবর জানান।

সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে রেল লাইনের দৈর্ঘ্য মাত্র ১৭ কিলোমিটার। রেলওয়ে সূত্র বলছে, এ জেলায় অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং ৩০টি। রেলের জনবল না থাকায় দুর্ঘটনা এড়াতে কোথাও কোথাও স্থানীয়রা দায়িত্ব পালন করছেন। একই অবস্থা ঠাকুরগাঁওয়ে। এখানে ২০টি অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে অরক্ষিত রয়েছে ৯টি। নীলফামারীতে ৫৯ কিলোমিটার রেলপথে ৪০টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে ২৬টি অরক্ষিত। কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর ও সদরে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং রয়েছে অন্তত ২৫টি।

রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল লালমনিরহাটের বিভাগীয় প্রকৌশলী আহসান হাবীব জানান, বিভাগে প্রায় ৫০০ ক্রসিং থাকলেও অনেকগুলোর নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে নেই। এগুলো দেখভালের দায়িত্ব সওজের। রেলওয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকা ক্রসিংয়ে পর্যায়ক্রমে গেট তৈরি ও গেটম্যান নিয়োগ করা হবে।

রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, রেললাইনে কেউ অবৈধভাবে গেট করলে তার দায় আমরা নেব না। তবে গেটম্যানদের স্থায়ী করাসহ সমস্যা সমাধানে কাজ চলছে। লেভেল ক্রসিংগুলোর গেট মেরামতে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা দিয়েছেন বিপুল সরকার সানি দিনাজপুর, সফিকুল আলম পঞ্চগড়, মো. শামসুজ্জহা ঠাকুরগাঁও, আমিরুল হক নীলফামারী, আনোয়ার হোসেন স্বপন লালমনিরহাট, সুজন মোহন্ত কুড়িগ্রাম ও এনামুল হক গাইবান্ধা]

আরও পড়ুন

×