ঢাকা রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

সিএমপির তদন্ত প্রতিবেদন

চার্জশিটের নাম কাটতে ২৫ লাখ টাকা নেন এসআই

চার্জশিটের নাম কাটতে ২৫ লাখ টাকা নেন এসআই

আহমেদ কুতুব, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২১ আগস্ট ২০২৩ | ০০:৫৩

চট্টগ্রামে ২৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে দুই মাদক কারবারিকে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) থেকে বাদ দিয়েছেন নগরীর ডবলমুরিং থানার এসআই মো. বদরুদ্দোজা। মাদক মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে তিনি এ অপকর্ম করেছেন। এ জন্য নিরপরাধ ব্যক্তির মোবাইল নম্বরের সিডিআর দাখিল, সেটি সংগ্রহে পদবি গোপন, আসামির পিসিপিআর (আগের অপরাধের খতিয়ান) অন্যের নামে চালানোর মতো জালিয়াতি করেছেন বদরুদ্দোজা। এমনকি তিনি অভিযোগপত্র দাখিলের আগের দিন ও আদালতের শোকজের দিনও পলাতক আসামির সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত ১০ জুন পুলিশ সদরদপ্তরে এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) আ স ম মাহাতাব উদ্দিন সমকালকে বলেন, অনুসন্ধান প্রতিবেদন পুলিশ সদরদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এতে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে এসআই বদরুদ্দোজার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার সুপারিশ করা হয়েছে।

অনুসন্ধান কর্মকর্তা সিএমপির সহকারী কমিশনার বিল্লাহ হোসেন প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, তদন্ত কর্মকর্তা বদরুদ্দোজা অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া আসামি আলাউদ্দিন ওরফে চটপটি আলাউদ্দিনের নামে আগের দুটি মামলা উল্লেখ না করে অন্য আসামি আবদুল জলিলের পিসিপিআর হিসেবে দিয়েছেন।

জানতে চাইলে এসআই বদরুদ্দোজা জানিয়েছেন, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে তিনি দুই মাস বিশ্রামে আছেন। তদন্তের বিষয়ে কিছু জানেন না। শোকজের বিষয়েও এ মুহূর্তে কিছু মনে পড়ছে না। টাকা নিয়ে অভিযোগপত্র থেকে আসামির নাম বাদ দেওয়ার মতো কাজ কখনও করেননি বলে দাবি করেন বদরুদ্দোজা।

পুলিশ সূত্র বলছে, সিএমপির ডিবির সাবেক এসআই বদরুদ্দোজার বিরুদ্ধে পেশাদার মাদক কারবারির জবানবন্দিতে আসা আসামিকে জালিয়াতির মাধ্যমে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়াসহ আটটি অভিযোগ উঠেছে। ডবলমুরিং থানার মামলাটি চট্টগ্রাম দ্বিতীয় যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারের জন্য গেলে নথি পর্যালোচনায় পদে পদে তার জালিয়াতি ও মনগড়া তদন্ত করে অভিযোগপত্র দাখিলের প্রমাণ মেলে। এর পরই সিএমপি তাঁর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করে। সিএমপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে এসআই বদরুদ্দোজা ২৫ লাখ টাকা নিয়ে মাদক কারবারি আলাউদ্দিন ও তার ভাগনে মো. ফোরকানকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন। অথচ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদলতে জবানবন্দিতে আরেক মাদক কারবারি এ দু’জনের নাম বলেছিলেন। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, ফোরকান এজাহারে উল্লেখিত ঘটনার সময়, আগে ও পরে চট্টগ্রামে ছিলেন না। বাগেরহাটের শরণখোলায় ছিলেন। এ কথার স্বপক্ষে ফোরকানের মোবাইল কললিস্ট দাখিল করা হয়। কিন্তু ফোরকানের বলে যে মোবাইল নম্বর দাখিল করা হয়, সেটির মালিক ইমরান উদ্দিন শুভ। তিনি শরণখোলার রায়েন্দা এলাকার কামাল উদ্দিন আকনের ছেলে। ইমরান কখনও চট্টগ্রামে আসেননি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ফোরকানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের কললিস্ট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ঘটনার আগে ও পরে তিনি ঘটনাস্থল উত্তর কাট্টলীতে ছিলেন। তার এনআইডি ও টাওয়ার লোকেশন ছিল উত্তর পাহাড়তলী কর্নেলহাট আবাসিক এলাকার ৩ নম্বর রোডের ২১ নম্বর বাসা। এ ছাড়া ডবলমুরিং থানার মাদক মামলার অভিযোগ দেওয়ার আগে বদরুদ্দোজা আলাউদ্দিনের ভাগনে ও নটসেন্টআপ আসামি ফোরকানের আপন ভাই এমরানের সঙ্গে তদন্তাধীন বিষয়ে মোবাইল ফোনে আলাপ করেন। ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর থেকে তিনি কর্ণফুলী থানায় ইয়াবা মামলার পলাতক আসামি এমরানের সঙ্গে অভিযোগপত্র দাখিলের আগের দিন ২০২১ সালের ২ মে কথা বলেন। আদালত অভিযোগপত্রে ত্রুটি পাওয়ার পর শোকজ করার দিনও এমরানের সঙ্গে কথা হয় বদরুদ্দোজার।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, আসামি আলাউদ্দিন অতীতে কোনো অপরাধ করেছেন কিনা, সে খতিয়ান অভিযোগপত্রে তাঁর নামে উল্লেখ করেননি বদরুদ্দোজা। উল্টো চার্জশিটভুক্ত অন্য আসামি আরিফের পিসিপিআর হিসেবে এটি দিয়েছেন। আলাউদ্দিনের নামে সদরঘাট থানায় মাদক মামলা, ইপিজেড থানায় মামলাসহ অন্যান্য তথ্য থাকলেও, তা আসামি আরিফের নামে চালিয়ে দিয়েছেন।

মামলা তদন্তে গিয়ে সন্দেহজনক ও এজাহারভুক্ত আসামিদের কললিস্ট পাওয়ার জন্য সিএমপির ডিসি ডিবি বরাবর আবেদন করেন বদরুদ্দোজা। কিন্তু আবেদনে তিনি নিজেকে পুলিশ পরিদর্শক উল্লেখ করেন। এমনকি তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দাখিলের সময়ও পরিচয় পরিদর্শকই রেখেছেন।

অনুসন্ধান প্রতিবেদন পেয়ে গত ৬ আগস্ট পুলিশ সদরদপ্তর সিএমপি কমিশনারকে এসআই বদরুদ্দোজার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করতে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠান। পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি বেলাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে অনুসন্ধানকালে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বদরুদ্দোজার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজুর পর অবহিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

×