হুমকির পর ভেঙে ফেলা হলো আশ্রয়ণের ঘর
ভোলার চরফ্যাসনে ভেঙে ফেলা নীলিমা আদর্শ গ্রামের একাংশ সমকাল
চরফ্যাসন (ভোলা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:১০
রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও স্বার্থের আঁচ লেগেছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে। বেশ কয়েকবার বাসিন্দাদের হুমকি-ধমকি দেওয়ার পর অবশেষে ভেঙে ফেলা হলো ঘরগুলো। গৃহহারা হয়েছে ২০ পরিবার। গতকাল রোববার চরফ্যাসন পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে নীলিমা আদর্শ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ২০১৭ সালে সরকারি অর্থায়নে ভূমিহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ করা হয়। সাবেক সংসদ সদস্যের স্ত্রীর নামের সঙ্গে মিল রেখে নামকরণ হয় নীলিমা আদর্শ গ্রাম। হতদরিদ্র ২০ পরিবারের কাছে ঘরগুলো বুঝিয়ে দেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কর্মী ও সমর্থকরা বাসিন্দাদের চলে যেতে চাপ দিয়ে আসছিলেন। তারা বিভিন্ন সময় হুমকি-ধমকিও দিচ্ছিলেন। ৮ সেপ্টেম্বর বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়। তিনি সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলেন। এর পরও প্রশাসন থেকে
কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গতকাল ছাত্রদলের সদস্য মমিন ও রাসেল, শ্রমিক দলের সুমন ছাড়াও স্থানীয় রাসেদ, শাহে আলম লোকজন নিয়ে ঘরগুলো ভেঙে ফেলেন।
ভুক্তভোগী ফরিদ, হান্নান, আকলিমাসহ কয়েকজন জানান, থাকার জায়গা ছিল না। সরকারি অর্থায়নে তাদের জন্য ঘর করে দেওয়া হয়। সেই ঘর ভেঙে দেওয়া হলো। এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে খোলা জায়গায় বসবাস করতে হচ্ছে। তারা এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি ও ঘর পুনর্নির্মাণ করে দেওয়ার দাবি জানান।
ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা গেছে, শূন্য ভিটা পড়ে আছে। মিস্ত্রিদের কেউ টিনের চালা খুলছিলেন আবার অনেকে বেড়া ভেঙে পাশে রাখছেন। ঘর ভাঙার দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করতেই উপস্থিত কয়েকজন এগিয়ে এসে ছবি তুলতে বাধা দেন।
এ সময় কথা হয় মো. মমিনের সঙ্গে। তিনি জানান, এই জমি তাদের নামে রেকর্ডীয়। তাদের জমি দখল করে আওয়ামী লীগ সরকার হতদরিদ্রদের জন্য ঘর দেওয়ার রাজনীতি করেছে। আমরা থানায় অভিযোগ দিয়েছি।
উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন আলমগীর মালতিয়া বলেন, আমাদের কোনো কর্মীর অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ আবুল হাসনাত জানান, ঘর ভাঙার বিষয়টি জানার পর তহশিলদারকে পাঠানো হয়েছে। যারাই এ কাজ করুক, তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের পরও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি– জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযুক্তদের কাগজপত্র নিয়ে ভূমি অফিসে আসতে বলা হয়েছিল। তারা না এসে ঘর ভেঙে দিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন
মিথি জানান, অভিযোগ পেয়ে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
- বিষয় :
- আশ্রয়ণ