ভাসমান সবজি চাষে সচ্ছলতা
জমির বদলে পানির ওপরে কিছু মাটি ও জৈবসার দিয়ে ভাসমান শাকসবজি চাষ বেশ সাড়া ফেলেছে মাদারীপুর ও এর আশপাশের এলাকায়। ছবি: সমকাল
মাদারীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪ | ১৮:২৮
মাদারীপুরের কালকিনিতে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে সচ্ছল হয়েছেন অনেক কৃষক। বিশেষ করে ভূমিহীন কৃষকেরা এতে বেশি সুফল পাচ্ছেন।
জমির বদলে পানির ওপরে কিছু মাটি ও জৈবসার দিয়ে ভাসমান শাকসবজি চাষ বেশ সাড়া ফেলেছে মাদারীপুর ও এর আশপাশের এলাকায়। উপজেলার রমজানপুর, সিডিখান ও শিকারমঙ্গল এলাকায় এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করেছেন অর্ধশতাধিক কৃষক। ফলন বেশ ভালো হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন তারা।
ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষের সুনাম ছড়িয়ে পড়ায় বরিশাল ও শরীয়তপুরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কৃষি অধিদপ্তরের লোকজন ও আগ্রহী কৃষকেরা দেখতে আসছেন বলে জানা গেছে।
কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকেরা জানান, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের সহায়তায় প্রদর্শনী প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। যেসব অঞ্চল প্রায় সারা বছরই পানির নিচে তলিয়ে থাকে সেসব অঞ্চলের কৃষকদের এ পদ্ধতিতে চাষের জন্য আগ্রহী করে তোলা হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে চাষের জন্য মূলত কচুরিপানা দিয়ে শয্যা (বেড) তৈরি করা হয়। প্রতিটি শয্যা ২০ মিটার লম্বা, প্রায় দেড় মিটার পুরু ও চার মিটার প্রস্থ করা হয়। কৃষকরা প্রধানত লালশাক, শসা, কলমি লতা, লতিরাজ কচু ও লাউয়ের চাষ করেছেন। ফলন ভালো হওয়ায় খুশি তারা। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তাদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করা হয় বলে জানান কৃষকরা।
রমজাপুর ইউনিয়নের শাহীন রাড়ী বলেন, পানির ওপর কচুরিপানার বেডে শাকসবজির চাষ করা সম্ভব আগে কখনো চিন্তাই করেননি। কৃষি কর্মকর্তারা পরামর্শ ও সহায়তা দিয়েছেন। ফলে ভূমিহীন কৃষক শাকসবজি বিক্রি করে অনেক টাকা উপার্জন করছেন। প্রথমে কয়েকজনে ভাসমান সবজি চাষ করলেও এখন অনেক ভূমিহীন কৃষকসহ অর্ধশতের বেশি কৃষক এ ধরনের চাষাবাদ করছেন।
কৃষক জুলহাস মোল্লা, আলমাস, গোলাপী বেগম ও জলিলসহ বেশ কয়েকজন বলেন, স্থানীয় কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ করেছেন। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে ব্যয়ের তুলনায় আয় অনেক বেশি। চলতি বছরে ফলনও অনেক ভালো হয়েছে।
শিকারমঙ্গল মাদ্রাসার প্রভাষক সাইদুর রহমান বলেন, ভাসমান সবজি চাষ করে সফল হয়েছে অনেক কৃষক। সবজিগুলো খুব সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। কৃষি অফিসের সহযোগিতাকে সাধুবাদ জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস বলেন, ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদের জন্য কৃষকদের নিয়মিত সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হয়। কমপক্ষে পাঁচটি বেড থাকলে প্রত্যেক কৃষককে তাদের পক্ষ থেকে নগদ টাকা দেওয়া হয়। এ পদ্ধতিতে চাষে কৃষকদের মধ্যে আগ্রহের সৃষ্টি হচ্ছে।