তথ্য গোপন করার অভিযোগ ন্যায়বিচার নিয়ে শঙ্কা বাদীর
শাহজাহান কবীর
ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:০৪
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের শাহজাহান কবীর হত্যা মামলায় তথ্য গোপন করার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ন্যায় বিচার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাদী।
২ ডিসেম্বর এ হত্যা মামলা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে প্রতিবেদনসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগকে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আবদুল হাই স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে পুলিশের মহাপরিদর্শক বরাবর এ নির্দেশ দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন আবেদনকারী নাহিদা আক্তার। এর আগে ২০ নভেম্বর শাহজাহান হত্যায় ন্যায় বিচার চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য নাহিদা আক্তার।
জানা গেছে, ঈশ্বরগঞ্জের উজান চরনওপাড়া গ্রামের আতিকুল ইসলাম ও বিপুল নামে দুই যুবক গাজীপুরের মাওনায় কর্মসূত্রে বসবাস করতেন। সেখানে আতিকুলের একটি মোবাইল ফোন চুরির পরপরই বিপুল বাড়ি চলে আসেন। আতিকুলের সন্দেহ বিপুল মোবাইল ফোনটি চুরি করেছেন। এ নিয়ে দ্বন্দ্বে ১০ এপ্রিল রাতে তাদের মধ্যে মারামারি হয়। এতে আতিকুলের পক্ষের বাবু নামে একজনের মাথা ফেটে যায়। এই মারামারিতে নিশাত নামে এক যুবক জড়িত থাকায় তাঁর বাবা লাল মিয়াকে মারধর করে আতিকুলের লোকজন। এ ঘটনায় উত্তেজনা সৃষ্টি হলে ১১ এপ্রিল ঈদগাহ মাঠ থেকে ফেরার পথে বিপুল পক্ষের শাহজাহান ও তাঁর লোকজনের ওপর হামলা করে আতিকুলের লোকজন। এতে নিহত হন শাহজাহান কবীর (২০)।
এ ঘটনায় ওই দিনই ঈশ্বরগঞ্জ থানায় ৯ জনের নামে হত্যা মামলা করেন নিহত কবীরের বাবা নূরুল ইসলাম। অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয় ৪-৫ জনকে। মামলায় সাতজন জামিনে এবং দু’জন পলাতক রয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, রহস্যজনক কারণে ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত অনেকেই আসামি করা হয়নি। এমনকি হত্যাকাণ্ডের আগের দিনের মারধরে আতিকুলের পক্ষের বাবু রক্তাক্ত আহত হলেও এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। হত্যাকাণ্ডের পর বাবু হাসপাতাল থেকে পরিপূর্ণ চিকিৎসা না নিয়ে রহস্যজনক কারণে আত্মগোপনে চলে যান।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, বাবু স্থানীয় গিয়াস উদ্দিনের নাতি। কিছু দিন আগে গিয়াস উদ্দিন এ হত্যা মামলার ৩ নম্বর সাক্ষী এনামুলের বাবা হাবিবুলের কাছে পনেরো লাখ টাকার জমি বিক্রি করেন। তাদের মামলায় জড়ানো হলে গিয়াস উদ্দিন বাদী পক্ষকে জমি লিখে দেবেন না, এমন শঙ্কায় তাদের মধ্যে সমঝোতা হয়। ফলে ঘটনার প্রকৃত তথ্য গোপন করে বাদী প্রভাবশালীদের ইশারায় থানায় মামলা করেন। এ সুযোগে ৫ আগস্টের আগের প্রভাবশালীদের ইন্ধনে মামলার ৪ নম্বর সাক্ষী লাল মিয়াকে মারধরের কারণে একই পরিবারের পাঁচজনকে আসামি করা হয়।
স্থানীয়দের দাবি, এজাহারে তথ্য গোপনে জড়িত আতিকুল, বিপুলসহ সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত সত্য উঠে আসবে। তবেই এ হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচার নিশ্চিত হবে।
বাদী নূরুল ইসলাম বলেন, ‘আতিকুল ও বিপুলের মধ্যে গন্ডগোলের পর আমার নির্দোষ ছেলে নিহত হয়। মামলা করার সময় এত কিছু আমার মাথায় কাজ করেনি। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে এসব বিষয় মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। বর্তমানে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চার্জশিট দেওয়া নিয়ে তালবাহানা করছেন।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই কমল সরকার জানান, তদন্তকাজ চলছে। হত্যাকাণ্ডের আগে মারধরের ঘটনায় আহত বাবুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলে চার্জশিট দেওয়া হবে।
ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার (এসপি) আজিজুল ইসলামের ভাষ্য, মামলার তদন্তকাজ চলমান। তথ্য গোপন করার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।
- বিষয় :
- ন্যায়বিচার