কর্ণফুলী পেপার মিলে বসছে নতুন ৭ প্লান্ট

ফাইল ছবি
কাপ্তাই (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ০০:৪২
বয়সের ভারে ন্যুজ কর্ণফুলী পেপার মিল (কেপিএম) এলাকায় একটি ইন্টিগ্রেটেড পাল্প অ্যান্ড পেপার মিলসহ আরও ছয়টি কেমিক্যাল প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারখানাটি নতুন করে নির্মিত হলে বর্তমান বার্ষিক উৎপাদন ৪ হাজার টন থেকে ১ লাখ টনে উন্নীত হবে। এতে প্রতিষ্ঠানটির হারানো গৌরব ফিরে আসবে বলে ধারণা করছেন কেপিএম কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, কেপিএমে নতুন প্লান্ট স্থাপনে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইতোমধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাইকরণের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনটি শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত হয়েছে। চলতি বছর এডিপিতে ওই প্রস্তাব উত্থাপন হতে পারে বলে আশা করছে কেপিএম কর্তৃপক্ষ। সাতটি প্লান্ট স্থাপনে ২৫-৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে।
জানা গেছে, ১৯৫৩ সালে মোট ৫০১ একর জমির ওপর তৎকালীন পাকিস্তান শিল্প উন্নয়ন করপোরেশন কর্তৃপক্ষ (পিআইডিসি) কারখানা গড়ে তোলে। বার্ষিক ৩০ হাজার টন উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব নেয়। সে সময় দেশের সরকারি চাহিদার প্রায় ৭০ ভাগ কাগজ সরবরাহ করত কেপিএম। কালক্রমে ৭২ বছরের প্রতিষ্ঠানটি জরাজীর্ণ ও রুগ্ণ শিল্পে পরিণত হয়। একসময় শ্রমিক-কর্মচারীদের পদচারণায় মুখর থাকা প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে।
কেপিএম কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, শুরু থেকেই কেপিএমে বাঁশ ও পাল্পউডের (নরম কাঠ) মাধ্যমে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মণ্ড তৈরি করে কাগজ উৎপাদন করা হতো। বিগত আট বছর ধরে মণ্ড তৈরির পাল্প মিলটি বন্ধ রয়েছে। এরপর থেকে বিদেশ থেকে আমদানি করা পাল্প ও দেশীয় অকেজো কাগজ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন চালু রাখা হয়েছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিকে বছরে ২৮-৩০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে কেপিএমে ক্রিমলেইড, সাদা রাইটিং কাগজ, ব্রাউন, অফসেট, টাইপ রাইটিং, অ্যাজুরলেইড ও অন্যান্যসহ ৩৩ রকমের কাগজ এবং ১০ প্রকারের কাগজজাত প্যাকেজিং প্রোডাক্ট তৈরি করা হতো। বর্তমানে মিলে হোয়াইট রাইটিং, ব্রাউন, কালারসহ চার-পাঁচ প্রকারের কাগজ তৈরি করা হচ্ছে। বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতাও নেমে এসেছে মাত্র ৩-৪ হাজার টনে।
কারখানা আধুনিকীকরণ প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে কেপিএমে ইন্টিগ্রেডেট পেপার তৈরির মেশিনসহ বনায়ন, পেপারভিত্তিক কেমিক্যাল
প্ল্যান্ট এবং সিনথেটিক পলিয়েস্টার ফাইবার প্লান্ট স্থাপন করা হবে।
কর্ণফুলী পেপার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহীদ উল্লাহ জানান, সাত দশকের পুরোনো কারখানাটির অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। কারখানাটি আধুনিকীকরণে সাতটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিসিআইসি কর্তৃক শিল্প মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবনাটি যাচাই-বাছাই চলছে। সরকার প্রকল্পটি অনুমোদন করলে কারখানায় স্থানীয় বাঁশ ও পাল্পউডের ব্যবহার বাড়বে। এতে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কেপিএম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটি ঘুরে দাঁড়ালে কাগজের বাজারের মূল্য নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হবে।
- বিষয় :
- কর্ণফুলী পেপার মিল